ভয়েস কল নয়, সবার চেয়ে কমদামে গ্রাহকদের ইন্টারনেট সেবা দিয়ে মূলধারা তথা প্রতিযোগিতায় ফিরতে চায় মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। বিনিয়োগ এবং নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ বিষয়ক জটিলতা দূর হওয়ায় অপারেটরটি এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। শিগগিরই ফোরজি চালু করে বাজারের বর্তমান প্রতিযোগীদের চেয়েও কমদামে দ্রুতগতির মোবাইল ইন্টারনেট সেবা নিয়ে ফিরছে টেলিটক।
নতুন মোবাইল ফোন অপারেটর দেশে আসছে, যারা ভারতের ‘জিও’ অপারেটরের মতো ডাটা (ইন্টারনেট) দিয়ে অন্যান্য অপারেটরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে –এমন গুঞ্জন দেশে বেশ কিছুদিন ধরে চলছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ গুঞ্জনকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘কোনও সুযোগ নেই। তবে নতুন অপারেটর না এলেও সরকার টেলিটককে দিয়ে সামনে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসছে।’ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘টেলিটক তাহলে আছে কী জন্য? টেলিটক সবচেয়ে কমদামে ইন্টারনেট দেবে, যা অন্য কোনও মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রাহককে দিতে পারবে না।’
মোস্তাফা জব্বার জানান, টেলিটকের সম্প্রসারণে দু’টো বাধা ছিল। বিনিয়োগ আর নেটওয়ার্ক। বড় ধরনের বিনিয়োগ এলে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের পাশাপাশি অপারেটরটির আধুনিকায়নের প্রতি মনোযোগী হওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু তা না হওয়ায় এরই মধ্যে অপারেটরটি অনেক পিছিয়ে গেছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘কিছু দিনের মধ্যে মোবাইল নেটওয়ার্কের জন্য টাওয়ার শেয়ার করা সম্ভব হবে। এরই মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স পেয়েছে। কোম্পানিগুলো কাজ করা শুরু করলে টেলিটকের নেটওয়ার্ক এক্সপানশন সহজ হয়ে যাবে। যে কারণে টেলিটককে নতুন করে আর টাওয়ার নির্মাণ করতে হবে না। আর টাওয়ার নির্মাণ করার প্রয়োজন না হওয়ায় বড় ধরনের বিনিয়োগের আর প্রয়োজন হবে না। ফলে দু’টি সমস্যারই সমাধান হয়েছে।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের পরে টেলিটক আমাদেরই আরও একটি প্রতিষ্ঠান (সরকারি প্রতিষ্ঠান) বিএসসিসিএল (বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড) থেকে ব্যান্ডউইথ নিতে পারবে। এটাই আমি সম্ভাবনার জায়গা হিসেবে দেখি যে, সবচেয়ে কমদামে (চিপেস্ট) গ্রাহককে ডাটা তথা ইন্টারনেট দেওয়া সম্ভব। আমাদের টার্গেট হলো, এটা হলো দুনিয়ার কেউই টেলিটকের সঙ্গে ব্যবসায় কুলিয়ে উঠতে পারবে না।’
প্রসঙ্গত, টেলিটকের বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা (৩১ জুলাই পর্যন্ত) ৩৭ লাখ ৯৬ হাজার। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এ বছরের জানুয়ারির ৩১ তারিখ পর্যন্ত টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৪৫ লাখ ৫৩ হাজার। কিছুদিন আগে টেলিটক শুধু নারীদের জন্য অপরাজিতা নামে ২০ লাখ সিম বাজারে ছাড়ে। সেই সিমের ৮০ শতাংশ (৬০ শতাংশ হিসেবেও বাজারে প্রচলিত রয়েছে) বিক্রি শেষ হতে না হতেই প্যাকেজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, একসঙ্গে টেলিটকের গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অপারেটরটির নেটওয়ার্কে বিশাল চাপে পড়ে। গ্রাহক সেবার মানও খারাপ হতে থাকে। গত ৬ মাসের টেলিটক গ্রাহক হারিয়েছে সাড়ে ৭ লাখের বেশি।
এ প্রসঙ্গে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘একটি সাশ্রয়ী সেবা নিয়ে এলে গ্রাহক আবার আসবে। আগামী দিনগুলো ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে উঠবে, মোবাইল গ্রাহকরা সরাসরি ভয়েস কল বাদ দিয়ে ইন্টারনেটনির্ভর কলের দিকে বেশি মনোযোগী হবে। আমাদের সেই সুযোগটাই নিতে হবে। ডাটা দিয়েই টেলিটককে তুলে আনা সম্ভব হবে। যে গ্রাহক চলে গেছে, তারা আবারও ফিরবে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছরের ২০ ফ্রেব্রুয়ারি গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও এয়ারটেল ফোরজি চালু করলেও টেলিটক তা চালু করতে পারেনি। ফলে টেলিটক গ্রাহক হারিয়েছে। অন্যদিকে অপরাজিতা সিম বিক্রির কারণে হঠাৎ নেটওয়ার্কে বিশাল চাপ পড়ায় অপারেটরটি সেটাও সামাল দিতে পারেনি। ফলে গ্রাহক অন্য অপারেটরমুখী হয়েছে।
২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর টেলিটক থ্রিজি সেবা চালু করে। অন্য অপারেটরগুলো চালু করে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। সবার আগে থ্রিজি চালু করেও ফোরজিতে পিছিয়ে পড়েছে টেলিটক।
জানা যায়, টেলিটক আগস্ট নাগাদ ফোরজি নেটওয়ার্ক সেবা চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। কারিগরি অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় এখনও ফোরজি সেবা চালুর দিনক্ষণ নির্দিষ্ট হয়নি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা যায়, টেলিটক নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভাগীয় শহরগুলোতে ফোরজি চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে। এ বছরের মধ্যে জেলা সদরগুলোতে এই সেবা চালু করা হবে, ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া, ২০১৯ সালে উপজেলা এবং ২০২০ সালে ইউনিয়ন পর্যায়ে এই সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে টেলিটকের।
খবরটি বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত।