TechJano

সহায়ক পরিবেশ প্রযুক্তিক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণকে ত্বরান্বিত করবে

সমাজে নারী-পুরুষে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সমাজকে যেমন এগিয়ে যেতে সাহায্য করে তেমনি তা নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে্সামাজিক বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে যে নারীরা কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের উজ্জ্বল উদাহরণ তাদের সাফল্য গাঁথা আরও
বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়া উচিৎ। এই অভিমত উঠে এসেছে “প্রযুক্তির কর্মক্ষেত্রে নারী” শীর্ষক এক মুক্ত সংলাপে। ঢাকাস্ত বিসিএস ইনোভেশন সেন্টারে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) ও বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) এর যৌথ উদ্যোগে
শনিবার এই মুক্ত সংলাপের আয়োজন করা হয়। সংলাপের প্রধান অতিথি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান জানান বিগত এক দশকে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। ফলে নারী পুরুষ উভয়ের জন্য কাজের অনেক সুযোগ সৃষ্টি হলেও বিশেষ
বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তিকে এখনও নারী কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। সরকারের একাধিক প্রকল্প ও উদ্যোগের ফলে আগামী পাঁচ বছরে এ পরিস্থিতির প্রভূত উন্নতি হবে বলে তিনি মনে করেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন বাংলাদেশ নারীর পাশে পুরুষ আন্দোলনে স্বাক্ষর করেছে। তাই নারী বান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পুরষদেরও অগ্রহণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি জানা এসএসসি-
এইচএসসি এমনকী বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে ছাত্রীরা ছাত্রদের তুলণায় অনেক ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল করছে। কিন্তু সামাজিক কারণের পাশাপাশি রোল মডেল, সময়মতো তথ্য প্রাপ্তি, ভুল করার অধিকার বাড়াতে পারলে প্রযুক্তির কর্মক্ষেত্রেও নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে। আর
নারী-পুরুষের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায় থেকেই জোর দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

সংলাপের শুরুতে দুইটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. নোভা আহমেদ ও এমআইটি গ্র্যাজুয়েট তামান্না ইসলাম। তামান্না ইসলাম তার নিবন্ধে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলে মেয়েদের অংশগ্রহণের নিম্নমূখী প্রবণতা ব্যাখ্যা করে বলেন – গণিত ও বিজ্ঞান কেবল ছেলেদের, এ জন্য সন্ধ্যার পরেও বাইরে থাকতে হয়ে এমন ধারা ধারণা মেয়েদের পিছিয়ে রাখছে। দক্ষতা থাকা স্বত্ত্বেও তারা এগিয়ে যতে পারছে না। অন্যদিকে “সাপোর্টিং মিসিং ডটার” শিরোনামে বক্তব্যে নোভা আহমেদ আর্থ-সামাজিক নানান বিষয় ছাড়াও রোল মডেলের প্রচার, সফল ব্যক্তিদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক, মেয়েদের জন্য পৃথক প্রতিযোগিতা ও ক্যাম্পের আয়োজন এবং সর্বোপরি সময় মতো প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারলেই মেয়েদের অংশগ্রঞন অনেকখানি বেড়ে যায়। তাঁর নিবন্ধে দেখা যায় শিক্ষাক্ষেত্রে নারীপুরুষে সমতা অনেকখানি অর্জিত হলেও কর্মক্ষেত্রে এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীর উপস্থিতি দেখা যায় না। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ২৯ শতাংশ নারী মিক্সার্থী বর্তমানে আইসিটি সংক্রান্ত বিষয়ে পড়োশানা করলে এই কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের সংখ্যা এখন ১২ শতাংশের কম। আর আইসিটি নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ২ শতাংশেরও কম।

এর পর একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন গ্রীন ডেল্টা ইনসিওরেন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স এন্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ার পারসন ড লাফিফা জামাল, গিগাটেক লিমিটেডের সিইও সামিরা জুবেরি হিমিকা, গ্রাশীণ ফোনের মহাব্যবস্থাপক ও হেড অব কোর এন্ড সার্ভিস প্রজেক্ট টেকনোলজী সিইও, শায়লা রহমান।

প্যানেল আলোজনায় বক্তারা বলেন বর্তমানে বিচ্ছিন্নভাবে নানা উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে। এ সকল কার্যক্রমের সমন্বয় প্রয়োজন। এছাড়া কর্মজীবী ও পেশাজীবী নারীদের প্রয়োজনীয় আইনী সহযোগিতার একটি প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন বলে প্যানেলিস্টরা অভিমত ব্যক্ত করেন।
এক পর্যায়ে সদ্য স্নাতক ফাতেমা তুজ জোহরা জানায় – একটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশীপের সুযোগ পাওয়ায় তার পক্ষে নিজের যোগ্যতা তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে। ফলে তিনি ঐ প্রতিষ্ঠানে স্থানীয়ভাবে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। এ কারণে দেশে শিক্ষানবিশী সংস্কৃতি জোরদার করার তিনি আহবান জানান।

সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসাবে আরও উপস্থিত ছিলেন সরকারে অতিরিক্ত সচিব এবং স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের নির্বাহী প্রকল্প পরিচালক জালাল আহমেদ এবং জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহা।

মুক্ত সংলাপটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক এর সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান এবং সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি মোঃ শাহিদ-উল- মুনীর।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের আলোচ্য প্রকল্পটির সার্বিক তদারকি করছে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’। ২০২১ সালের মধ্যে সারা দেশে ৪০০০ জন নারী শিক্ষার্থীকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প, ক্যারিয়ার টক, আইসিটি উদ্যোক্তা উন্নয়ন সহায়তা, মেন্টরশিপ, ইন্টার্নশিপ, কাজের ক্ষেত্রে সংযুক্তি সহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। এই প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশকে অনেকটাই এগিয়ে নেবে বলে মনে করেন প্রকল্পের আয়োজকরা ।

Exit mobile version