সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলায় নিজেকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। তাহলে এই সমস্যা থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব। ‘সিটিও টেক সামিট ২০১৮’ দ্বিতীয় দিনে ‘সাইবার সিকিউরিটি: থ্রেডস ভালনারেভেটিস অ্যান্ড কাউন্টার মেজার’ শিরোনামে সেমিনারে মূল বক্তা হিসেবে এ কথা বলেন ইউনিভার্সিটি সাইবার ফোরামের কো-ফাউন্ডার ও সিটিও ফোরাম বাংলাদেশের নির্বাহী সদস্য আজিম ইউ হক।
সিটিও ফোরাম বাংলাদেশে আয়োজনে দেশে প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুই দিনের এ আয়োজন। রাজধানীর সোবাহানবাগে অবস্থিত ড্যাফোডিল টাওয়ারের মিলনায়তন ৭১ দিনের প্রথম সেমিনারে আজিম ইউ হক আরও বলেন, আমরা অনেকে না জেনে না বুঝে, নিজের অজান্তেই প্রযুক্তিগত অনেক ভুল করি। আমাদের কমিম্পউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোনে এমন অনেক সফটওয়ার ডাউনলোড করে ফেলি যারা আমাদের জন্য সাইবার হুমকি হয়ে যায়। হ্যাকাররা আমাদের সব তথ্য এ সফটওয়ারগুলো মাধ্যমে চুরি করে নিতে পারে। ‘সিটিও টেক সামিট ২০১৮’ এর দ্বিতীয় ও শেষ দিন আরও ৬টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি সেমিনারে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জমজমাট আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
আজিম ইউ হক বেশ কিছু উদাহরণ দেন যেখাবে হ্যাকাররা কিভাবে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করে নেয়। তিনি বলেন, অনেকেই ফ্রি সফটওয়ার কিংবা ফ্রি সিনেমা বা নাটক অনলাইন থেকে ডাউনলোড করেন। এরফলে ব্যবহারকারী অজানা একটি ওয়েবসাইট থেকে নিজের অজান্তেই ঐ সফটওয়ারটি নিজের ডিভাইসে নিয়ে নেন। আর সে সফটওয়ারের মাধ্যমে হ্যাকাররা ব্যবহাকারীর যাবতীয় তথ্য হ্যাক করে নিয়ে নেয়। তিনি সেমিনারে লাইভ ডেমো দেখান কিভাবে খুব সহজে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির ডাটা চুরি রোধ করা যায় এবং পাসওয়ার্ড শক্তিশালী করা যায়। আজিম ইউ হক বলেন, এটা কেবল মাত্র তখনেই সম্ভব যখন সিকিউরিটি ব্যবস্থা খুব ভালো থাকে। আর এভাবেই তিনি হ্যাকিং থেকে রক্ষা পেতে সিকিউরিটির গুরুত্ব বুঝানো চেষ্টা করেন। তিনি সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের বলেন, তথ্য চুরি ঠেকাতে হলে কোনো কিছু ইনষ্টল করতে হলে আরও বেশি সবেচতন হতে হবে। তিনি বলেন, একজন ভালো সিকিউরিটি বিশেষঙ্গ হতে হলে ভালো হ্যাকার হওয়ার প্রয়োজন। একজন হ্যাকার জানে কি কি ক্রটি থাকলে সাইট হ্যাক করা যায়, তাই বলা যায় ভালো সিকিউরিটি বিশেষঙ্গ হলে সবার আগে ভালো হ্যাকার হওয়া দরকার। তিনি বলেন, নিজের স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ অল্প সময়ের জন্যও অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত না। এ অল্প সময়ের মধ্যেই ডিজিটাল ডিভাইজের সকল তথ্য চুরি করা সম্ভব। সেমিনারের শেষ অংশে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন প্রশ্নে উত্তর দেয় ইউনিভার্সিটি সাইবার ফোরামের কো-ফাউন্ডার ও সিটিও ফোরাম বাংলাদেশের নির্বাহী সদস্য আজিম ইউ হক। সিটিও টেক সামিটের শেষ দিন ‘ ই-গর্ভারমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক’; ‘চ্যালেঞ্জ অফ ই-কর্মাস ইন বাংলাদেশ’; ‘ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল ইনোভেশন ইন বাংলাদেশ’; ডিসরাপট্রিভ টেকনোলজিস ইন পেমেন্ট সিস্টেম’; ‘সিকিউরিটি আইটি সলিউশন ইন ব্যাংকি’; শিরোনামে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত সেমিনারে স্থানীয় প্রায় ৪০ জন স্পীকার অংশগ্রহন করে। এর আগে ১১ মে শুক্রবার বিকালে ধানমন্ডি ক্লাবে দুই দিনের ‘সিটিও ফোরাম টেক সামিট ২০১৮’ এর উদ্ধোধন করেন। এতে প্রধান অতিথির হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের সচিব সুবির কিশোর চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরী, বেসিসের সভাপতি আলমাস কবির বলেন, সিটিও ফোরাম বাংলাদেশের সভাপতি তপন কান্তি সরকার, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামের আইটি ম্যানেজার মো. আরফে এলাহি মানিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেষ পর্বে সিটিও এক্সসিলেন্ট অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ প্রদান করা হয়। এ বছর সম্মানজনক এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় বেসরকারি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিনকে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ডিজিটাল বাংলাদেশে দেশের প্রায় প্রতিটি খাতেই প্রযুক্তির প্রয়োগ অপরিহার্য। আর এই কাজটিকে দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা র্অথাৎ ব্যবসায়িক কাজে প্রযুক্তি প্রয়োগ ব্যবসায়িক উন্নয়ন বা সক্ষমতা বাড়াবার কাজটির পূর্ণ তদারকিতে থাকেন একজন সিটিও। একজন সিটিওকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তিতে নিজেদের অভ্যস্থতা, সাইবার জগতের সুবিধা এবং প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়। যেহেতু প্রযুক্তি প্রতিনিয়তই পরিবর্তনশীল তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিটিওদের নিজেদের অভিজ্ঞতার আদান প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তি সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি আর এর জন্য প্রয়োজন একটি প্লাটর্ফম। সিটিও ফোরাম বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে এই প্লাটর্ফম তৈরির কাজটিই করে আসছে সফলতার সঙ্গে।