বর্তমান সভ্যতার উন্নতির পিছনে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার কম্পিউটারের অবদান কোন অংশেই কম নয়। বরং বলা যায় সভ্যতার উন্নতিকে কম্পিউটার আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। অ্যাবাকাস নামক একটি প্রাচীন গণনাযন্ত্রকেই কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রথম যন্ত্র হিসেবে ধরা হয়। এটি আবিষ্কৃত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ সালে ব্যাবিলনে। কম্পিউটারকে অনেকেই আবার বোকা বাক্স বলে থাকেন। কারণ কম্পিউটার এর পক্ষে একা নিজে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয় কিংবা পরিপার্শ্বিক পরিবেশ বিশ্লেষণ করে কোন সমস্যার সমাধানও করার সম্ভব নয়।
কম্পিউটার মানুষের নির্দেশের ভিত্তিতে কাজ করে। মানুষের ইন্সট্রাকশনের বাহিরে এর পক্ষে কোন কাজই করা সম্ভব না।
কিন্তু কোন যন্ত্র যাতে নিজে থেকেই পরিপার্শ্বিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ,সমস্যা বিশ্লেষণ এবং সে অনুযায়ী দ্রুত সমাধান করতে পারে এবং এর জন্য যন্ত্রটিকে যাতে কোন পরিচালকের উপর নির্ভর করতে না হয় তার জন্য যন্ত্রটির মধ্য যে বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করা হয় তাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। অ্যাপেলের সিরি,গুগলের অ্যাসিস্ট্যান্ট,গুগলের allo, মাইক্রোসফটের কর্টানার মতো অ্যাপগুলো এবং স্পিচ রিকগনিশন, ট্রান্সলেটর এর মত সফটওয়্যারগুলোর মূলে রয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
‘দ্য ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুল্যুশন’ নামক বইতে লেখক ক্লস শোয়াব জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের মধ্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বহুল প্রচলন শুরু হবে। রোবট আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর আরেকটি উদাহরণ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পূর্ণ রোবট ইতিমধ্যেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে মানুষের মধ্যে।
তারই প্রেক্ষিতে গত শনিবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ অ্যাডভান্স রোবোটিক্স রিসার্চ সেন্টার’ এর উদ্যোগে রোবটিক্সের উপর একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়েছে। রোবটিক্স সেক্টরে বর্তমান প্রজন্মকে দিকনির্দেশনা দেওয়া, আরও উৎসাহিত করাই ছিল প্রোগ্রামটির মূল উদ্দেশ্য।কর্মশালার শুরুতে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রধান এএইচএম কামাল কর্মশালার উদ্বোধন করেন।বাংলাদেশও বর্তমান পেক্ষাপট রোবটিক্স এর গুরুত্ব তুলে ধরেন, সহকারী প্রফেসর কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট জান্নাতুল ফেরদৌস তার বক্তব্যে বলেন রোবোটিক্স তার স্বপ্ন ছিল এবং তিনি স্বপ্ন দেখেন যে তার ছাত্ররা রোবটগুলি গবেষণা করবে, একদিন তারা প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দেবে এবং সহকারী প্রফেসর ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মাইনুদ্দিন বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরে এই কর্মশালার মাধ্যমে রোবোটিক্স প্রযুক্তি সিএসই এবং ইইই শীর্ষ সম্মেলনে আরও এগিয়ে যাবে ।
উক্ত প্রোগ্রামে কী-নোট স্পিকার হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশের তরুণ প্রযুক্তিবিদ জিমি মজুমদার যিনি নাসার একটি প্রকল্পে পার্সনাল রিসার্স এসিস্টেন্ট হিসাবে কর্মরত আছেন এবং বাংলাদেশ অ্যাডভান্স রোবটিক্স রিসার্স সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও ভিশন ২০২০ সাউট এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা । তিনি রোবটিক্স সম্পর্কে তার মুল্যবান বক্তব্য পেশ করেন এবং নাসাতে কিভাবে কাজ করা শুরু হল ,রোবটিক্স সেক্টর এ কাজ করতে হলে জে সকল বিষয়ে বেশি জ্ঞান লাগবে সে সকল বিষয় তুলে ধরেন ।
ট্রেইনার হিসেবে ছিলেন মোঃ রাহাতুল ইসলাম, বাংলাদেশ অ্যাডভান্স রোবটিক্স রিসার্স সেন্টারের পরিচালক ও কো-ফাউন্ডার আইডিয়া শপ ইনোভিশন সেন্টার অব বাংলাদেশ অ্যাডভান্স রোবটিক্স রিসার্স সেন্টার ; তিনি সকল অংশগ্রহন কারীদের কে গ্রুপ করে হাতে হাতে রোবটিক্স প্রজেক্ট শুরু করেন।তাকে সহায়তা করেন জাহিদ হাসান জনি ও মোঃ সোহাগ (তারা দুই জন বাংলাদেশ অ্যাডভান্স রোবটিক্স রিসার্স সেন্টার এর মেম্বার)।মোঃরাহাতুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের অবস্টেকল রোবট ও এন্ড্রয়েড কন্ট্রোল তৈরী করে দেখান।শিক্ষার্থীরা অনেক মনোযোগ সহকারে দেখেন এবং নিজের হাতে তৈরী করেন।
” টেকফায়ার টিম” এর টিম লিডার ও ক্যাম্পাস টেক অ্যাম্বাসেডর কানিজ ফাতেমা শান্তা প্রোগ্রামটির দায়িত্বে ছিলেন এবং মনিশা দে সহ সকল সদস্য বৃন্দ প্রোগ্রামটি সফল ভাবে সম্পন্ন করেন । এছাড়া কর্মশালার টেকনিক্যাল পার্টনার ছিল সাইন্স শপ বিডি এবং নলেজ পার্টনার ভিশন ২০২০ সাউথ এশিয়ান প্রকল্প।
ডঃ এ এইচ এম কামালের কথাগুলো শিক্ষার্থীদের আরও উৎসাহিত করে তোলে। তিনি বলেন,”জীবনে যতদিন বাঁচবে ততো দিন পৃথিবীকে তোমার রঙে রাঙিয়ে দাও। তবেই জীবন রঙিন এবং পৃথিবীটাও সুন্দর হবে।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার একটাই প্রত্যাশা তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে রোবটিক্স সেক্টরে বাংলাদেশ একদিন সব দেশকে ছাড়িয়ে অনেক এগিয়ে যাবে।তরুণ প্রযুক্তিবিদ জিমি মজুমদার সবাইকে রোবট কারিগড় হয়ে বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তিতে স্বনির্ভর বাংলাদেশ তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান । কর্মশালাটি কুইজ প্রতিযোগিতা ও আইডিয়া কন্টেস্ট এর মাধ্যমে শেষ হয়।