TechJano

সোমবার থেকে সাইবার সচেতনতা মাস শুরু

সাইবার দস্যুতা থেকে নিরাপদে থাকতে নানা আয়োজনে সোমবার থেকে বাংলাদেশে পালিত হবে ‘সাইবার সচেতনতা মাস অক্টোবর ২০১৮’। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন এ বছর মাসব্যাপী কার্যক্রমের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- ‘সাইবার সুরক্ষিত দেশ গড়ার, সম্মিলিত দায়িত্ব সবার’। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স (এনসিএসএ) কর্তৃক আন্তর্জাতিক এই ক্যাম্পেইনের থিম নির্ধারণ করা হয় ‘Securing the internet is our Shared Responsibility’ ।

এছাড়াও মাসব্যাপী কর্মসূচিকে আরো ৪টি পৃথক প্রতিপাদ্যে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো: প্রথম সপ্তাহ (অক্টোবর ১-৭): অনলাইন সুরক্ষার চর্চা হোক আপনার ঘর থেকেই (Make Your Home a Haven for Online Safety), দ্বিতীয় সপ্তাহ (অক্টোবর ৯-১৫): সাইবার নিরাপত্তায় ক্যারিয়ার, কর্ম নিয়ে ভাবনা কী আর! (Millions of Rewarding Jobs: Educating for a Career in Cybersecurity), তৃতীয় সপ্তাহ (অক্টোবর ১৬-২২): অনলাইন সুরক্ষা নিশ্চিতে, কর্মস্থলে কাজ করবো প্রত্যেকে (It’s Everyone’s Job to Ensure Online Safety at Work), চতুর্থ সপ্তাহ (অক্টোবর ২৩-২৯): জনগুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সুরক্ষা, নিশ্চিত করবে নিরবচ্ছিন্ন সেবা (Safeguarding the Nation’s Critical Infrastructure) ।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স (এনসিএসএ) ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস)-এর নেতৃত্বে এ বছর পালিত হবে ১৫তম সাইবার সচেতনতা মাসের ক্যাম্পেইন। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই ক্যাম্পেইনের অফিসিয়াল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস (সিসিএ) ফাউন্ডেশন। এর মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্যসুরক্ষা সম্পর্কে বাংলাদেশে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সংগঠনটি কাজ করবে। মাসব্যাপী কর্মসূচির নানা তথ্য পাওয়া যাবে এই ওয়েব ঠিকানায়- ccabd.org/cyberAwareMonth

২০০৪ সাল থেকে সারা বিশ্বে প্রতি অক্টোবরে মাসব্যাপী সাইবার সচেতনতা বিষয়ক নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়। বাংলাদেশে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচি শুরু করে সিসিএ ফাউন্ডেশন। এটি ডিজিটাল নাগরিকদের নিরাপদ থাকার এবং প্রত্যেকের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের একটি উদ্যোগ। এর মাধ্যমে ডিজিটাল নাগরিকদের কাছে সাইবার সুরক্ষার প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পৌঁছে দেয়া হয়।

অফিসিয়াল চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যুক্ত হয়ে অক্টোবর মাসব্যাপী সাইবার সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলো সিসিএ ফাউন্ডেশন।

সিসিএ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও কার্যনির্বাহী পর্ষদের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ শনিবার এ সম্পর্কিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, “সাইবার সচেতনতা এখন আমাদের খাওয়া-দাওয়ার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয়। সাইবার সুরক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আর সচেতনতা তৈরি করা আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। তাই আমরা এ বছর সাইবার সচেতনতা মাসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছি, ‘সাইবার সুরক্ষিত দেশ গড়ার, সম্মিলিত দায়িত্ব সবার’, যা আন্তর্জাতিকভাবে ‘Securing the internet is our Shared Responsibility’ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে সিসিএ ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি:

সাইবার সচেতনতায় তরুণদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব তৈরির লক্ষে অক্টোবর মাসজুড়ে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সিসিএ ফাউন্ডেশন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ‘সম্প্রীতি’ প্রকল্পের আওতায় ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনব্যাপী ক্যাম্পেইন ও সেমিনার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের জন্য সাইবার অপরাধ বিষয়ক কর্মশালা, টিভি টকশো ইত্যাদি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অঞ্চলে সিসিএ ফাউন্ডেশনের চ্যাপ্টারগুলোর আয়োজনে বিষয়ভিত্তিক কর্মসূচি হবে।

আন্তর্জাতিক কমসূচি:

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স (এনসিএসএ) ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস)-এর নেতৃত্বাধীন সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাসের কার্যক্রমের পরিসর উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভোক্তাদের নিকট, যেমন: ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, করপোরেশন, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, সামরিক বাহিনী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং তরুণদের কাছে পৌঁছেছে।

১৫তম বছরে পা দিয়ে সাইবার সচেতনতা মাস-২০১৮, গত কয়েক বছরে মাসটির অবদান বৃদ্ধির একটি অসাধারণ সুযোগ তুলে ধরেছে এবং বিশ্বব্যাপী সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতনতা বিস্তৃত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এনসিএসএ’র নির্বাহী পরিচালক রুস স্ক্র্যডার (Russ Schrader) বলেছেন, “চ্যাম্পিয়ন প্রোগ্রামটি সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাসের চলমান সাফল্যের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করে চলেছে। ২০১৫ সালে, ১০৫০ টি সংগঠন এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং গত বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।” সাইবার সচেতনতা এবং তথ্য সুরক্ষায় যৌথ দায়িত্বের প্রতি সমর্থন এবং প্রতিশ্রুতির জন্য ২০১৮ চ্যাম্পিয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রুস স্ক্র্যডার।

অফিসিয়াল চ্যাম্পিয়ন হিসেবে অক্টোবর মাসব্যাপী কর্মসূচিতে সিসিএ ফাউন্ডেশন নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য শিগগির গণমাধ্যমে জানানো হবে।

সাইবার সচেতনতা মাস সম্পর্কে আরো জানতে এবং কর্মসূচিতে অংশ নিতে, ccabd.org/CyberAwareMonth দেখুন।

আপনি পুরো মাসব্যাপী সোশ্যাল মিডিয়াতে সাইবার সচেতনতামূলক বিভিন্ন পোস্ট দেয়ার সময় দুটি হ্যাশট্যাগ #CyberAware ও #CyberAwareBD ব্যবহার করতে পারেন।

সাইবার সচেতনতা মাস সম্পর্কে:

সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো ঘটনা ঘটলে কিংবা এই সম্পর্কিত দেশে স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধির জন্য জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাইবার সচেতনতা মাস পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস প্রতিষ্ঠার ঘোষণা আসে। এরপর তা কংগ্রেস, ফেডারেল, রাষ্ট্র ও স্থানীয় সরকার, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হয়। এছাড়া ২০১১ থেকে নরওয়ে এবং ২০১২ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ সারা বিশ্বে অক্টোবরকে ‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালন করে আসছে। এই যৌথ প্রচেষ্টা সাইবারস্পেসকে নিরাপদ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

সিসিএ ফাউন্ডেশন সম্পর্কে:

অনলাইনে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ২০১৫ সালে স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক উদ্যোগ সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়। এর পর ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাংবাদিকদের জন্য সাইবার অপরাধ সচেতনতা ও অনুসন্ধান বিষয়ক কর্মশালা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার আয়োজন করে আসছে।বিভিন্ন অঞ্চল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সাইবার সচেতনতায় তৈরি করা হচ্ছে নতুন নেতৃত্ব। বর্তমানে চলছে সমসাময়িক সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী নিয়ে গবেষণাসহ নানা কার্যক্রম।

এনসিএসএ সম্পর্কে:

ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স (এনসিএসএ) হলো যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃস্থানীয় একটি সংস্থা, যেটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সাইবার নিরাপত্তা এবং তথ্য সুরক্ষা বিষয়ক সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে থাকে। এনসিএসএ সরকার, প্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজের বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করে। এনসিএসএ’র প্রধান অংশীজন হলো যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টামেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস-DHS) এবং এনসিএসএ (NCSA) এর বোর্ড অফ ডিরেক্টরস, যা এডিপি (ADP) থেকে প্রতিনিধিত্বের অন্তর্ভুক্ত; এটেনা (Aetna); এটিএন্ডটি পরিষেবা ইনকর্পোরেটেড; আমেরিকার ব্যাংক; সিডিকেগ্লোবাল, এলএলসি; সিসকো; কমকাস্ট কর্পোরেশন; ইএসইটি (ESET) উত্তর আমেরিকা; ফেসবুক; গুগল; ইন্টেল কর্পোরেশন; লজিক্যাল অপারেশন; মারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল; মাস্টারকার্ডের মাইক্রোসফট কর্পোরেশন; মাইমকাস্ট(Mimecast); এনএক্সপি (NXP) সেমিকন্ডাক্টর; রেথন (Raytheon); আরএসএ (RSA); ইএমসি (EMC) নিরাপত্তা বিভাগ; সেলসফোরস; সিমন্টেক কর্পোরেশন; টেলিসাইন (TeleSign); ভিসা এবং ওয়েলস ফারগো।

এনসিএসএ (NCSA) এর উল্লেখযোগ্য ক্যাম্পেইনগুলোর মধ্যে রয়েছে, সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস (অক্টোবর); তথ্য সুরক্ষা দিবস (২৮ জানুয়ারি); ‘স্টপ, থিংক কানেক্ট’ এবং সাইবারসিকিউর মাই বিজনেস। এসব ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাইবার সুরক্ষায় সচেতনতা তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

Exit mobile version