কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে স্টুলিশ ঝড়। অ্যাপটির সাহায্যে পরিচয় গোপন রেখে একে অপরকে নানা ধরনের মন্তব্য লিখছেন ব্যবহারকারীরা। গত বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেজুড়ে আলোচনায় থাকা ‘সারাহা’ অ্যাপের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। এ বছর ভাইরাল হয়ে সারাহার স্থান দখল করে নিয়েছে ‘স্টুলিশ’ নামের বেনামি বার্তা দেখার এই অ্যাপ। অ্যাপটি ইতোমধ্যে ৫ লাখের বেশি ডাউনলোড হয়েছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, অ্যাপটি কতটা নিরাপদ?
‘স্টুলিশ’ নামের নতুন অ্যাপটি দিয়ে ভালোবাসা, রাগ, অভিমানের সোজাসাপটা স্বীকারোক্তি পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে নাম প্রকাশ ছাড়াই।ভাইরাল হওয়া স্টুলিশ আইডির লিংক অনেকেই ফেইসবুকে শেয়ার দিচ্ছেন। শেয়ার করা লিংকে ক্লিক করে কোন নিবন্ধন বা নাম প্রকাশ ছাড়াই ব্যবহারকারীর আইডিতে বার্তা পাঠাচ্ছেন অনেকে। কেউ বেনামী বার্তাগুলোর স্ক্রিনশট ফেইসবুকে শেয়ার করে মজা করছেন।
স্টুলিশ অ্যাপটির নির্মাতা এইচএলএন এন্টারটেইনমেন্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এটি ইতিমধ্যে ৫ লাখের বেশি ডাউনলোড হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই অ্যাপটি কতটা নিরাপদ? সারাহার মতো এটিও সাইবার বুলিং করছে নাতো? ইতিমধ্যেই ‘স্টুলিশ’ অ্যাপের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিংসহ নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।এমনকি ২৩ মে থেকে বাংলাদেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের স্ট্যাটাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনের লোগো সংবলিত একটি স্ক্রিনশট ভেসে বেড়াতে দেখা গেছে। স্ক্রিনশটের তথ্য অনুযায়ী স্টুলিশ একটি হ্যাকিংঅ্যাপ এবং এটির মাধ্যমে দুই মিলিয়নের বেশি তথ্য হ্যাক হয়েছে।
অ্যাপটি মোবাইলে ইন্সটল করার সময় ক্যামেরা, লোকেশন, ফোন কল ও স্টোরেজ অ্যাক্সেসের অনুমতি চায়। কিন্তু এমন অ্যাপ ব্যবহারে সাধারণত এই ধরনের অনুমতির প্রয়োজন পড়ে না। এই অনুমতিগুলো পেলে ফোনে থাকা ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, ভিডিও ও কন্টাক্ট নাম্বার অ্যাপটির মাধ্যমে নিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া শুধু লিখিত মেসেজ পাঠানোর এই অ্যাপটি ফোনে থাকা ভিডিও, অডিও ব্যবহারের অনুমতিও চেয়ে থাকে। যদিও অ্যাপটির মাধ্যমে ভিডিও বা অডিও তথ্য পাঠানোর কোনো অপশন দেখা যায়নি।
অ্যাপটির শর্তাবলির ঘরটিও ফাঁকা দেখা গেছে, যেখানে অ্যাপটি ব্যবহারের শর্তাসমূহ থাকার কথা। দুটি উপায়ে অ্যাপটিতে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। একটি ফেসবুক এবং অপরটি নিজের তথ্য দেয়ার মাধ্যমে। যদিও এর ওয়েব ইন্টারফেসে দেখা মেলেনি লগ-ইন করার কোনো অপশন। উপরোক্ত বিষয়গুলোকে সন্দেহের চোখে দেখছেন অ্যাপ ডেভেলপাররা। তাদের মতে, অ্যাপটি যে সব তথ্য জানতে অনুমতি চেয়ে থাকে তা সন্দেহজনক। ধারনা করা হয় এই ধরনের অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নেয়ার জন্যই তৈরি করা হয়। কেননা সাধারণ বার্তা পাঠানোর অ্যাপে এত পারমিশনের প্রয়োজন হয় না। অ্যাপটি ব্যবহারের আগে সচেতন থাকা দরকার।
এ সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, সব অ্যাপেই তথ্য অপব্যবহারের ঝুঁকি থাকে। এটা মেনে নিয়েই অ্যাপ ব্যবহার করতে হয়। কয়েকদিন আগে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য অপব্যবহার হয়েছে। অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের অগোচরে এসব কাজ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে দেখতে হবে ব্যবহারকারীদের কতটা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রযুক্তিবিদদের মতে, অর্থ আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশের গ্রাহকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে না। ফলে এ ধরনের ঝুঁকির কথা বলা হলেও, বাংলাদেশের গ্রাহকরা ততটা ঝুঁকির মধ্যে থাকেন না। তবে স্টুলিশের সাহায্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি হ্যাক হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন তারা। এজন্য গ্রাহকদের সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।ধারণা করা হচ্ছে স্টুলিশ বা ফিডনলি সারাহাহকেও ছাড়িয়ে যাবে। তবে অভিজ্ঞরা বলছেন, গোপনে কিছু বলতে গিয়ে নিজের গোপন তথ্য এ সব অ্যাপস বা সেবায় না দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।