বাংলাদেশের স্মার্টফোনের বাজার দখল নিয়ে শুরু হয়েছে ঠান্ডা লড়াই। কে এগিয়ে স্যামসাং, হুয়াওয়ে,শাওমি, নকিয়া, আইটেল নাকি অপো? নাকি সবচেয়ে এগিয়ে সিম্ফনি? আজ বুধবার স্যামসাং এর পিআর ফার্ম বেঞ্চমার্ক পিআর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, দেশীয় স্মার্টফোন বাজারে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে স্যামসাং। দেশীয় বাজারে সর্বাধিক বিক্রিত স্মার্টফোন হিসেবে শীর্ষে রয়েছে স্যামসাং । গত সোমবার মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ২০১৭ সালে দেশে ৯ হাজার কোটি টাকার ৩ কোটি ৪৪ লাখ মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি করা হয়, তাতে আর্থিক মূল্যের হিসাবে স্মার্টফোন বিক্রিতে শীর্ষে ছিলো দক্ষিণ কোরিয়ার ব্র্যান্ড স্যামসাং । এছাড়াও জানা যায় ২০১৭ সালে স্মার্টফোন বিক্রির প্রতিযোগিতায় সর্বশেষ অবস্থানে ছিলো চীনা ব্র্যান্ড শাওমি এবং বাজারে নতুন ভাবে ফিরে আসা স্মার্টফোন নকিয়া। বিএমপিআইএ’র বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের চেয়ে ২০১৭ সালে ৩০ লাখেরও বেশী মোবাইল ফোন আমদানি করা হয় যেখানে ২০টি ব্র্যান্ড তাদের নতুন সব হ্যান্ডসেট নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলো। এ সময়ে ফিচার ও স্মার্টফোন মিলিয়ে সিম্ফনির স্থান উপরে থাকলেও, স্মার্টফোন বিক্রিতে বাজারমূল্যে সর্বোচ্চ মার্কেট শেয়ার নিয়ে এগিয়ে ছিলো স্যামসাং । জানা যায়, ২০১৭ সালে টাকার অংকে স্মার্টফোন বিক্রিতে স্যামসাং – এর শেয়ার ছিলো ২৬ শতাংশ, সিম্ফনি ২১ শতাংশ, হুয়াওয়ে ১৩ শতাংশ, অপো ১০ শতাংশ, ওয়ালটন ৬ শতাংশ, লাভা ৫ শতাংশ, শাওমি ৪ শতাংশ, আইটেল ও নকিয়া ৩ শতাংশ, এবং অন্যান্য ৯ শতাংশ। এছাড়াও এ বছর বাংলাদেশে ফোরজি চালু হয়েছে। ফলে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে স্মার্টফোনের বিক্রি আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে, সম্প্রতি প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে উঠে আসে অন্য চিত্র। তাতে বলা হয়, দেশি ব্র্যান্ড সিম্ফনির মতো বাজার হারাচেছ অনেক ব্র্যান্ড। বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের বাজারে ক্রমেই বাড়ছে চীনা ব্র্যান্ডের আধিপত্য। গত দুই বছরের ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালেও স্মার্টফোনের বাজারে চীনের ব্র্যান্ডগুলো সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এতে বেশ খানিকটা বাজার হারিয়েছে দেশীয় মোবাইল ফোনের ব্র্যান্ডগুলো। মোবাইল ফোন খাত-সংশ্লিষ্টদের মতে, সারা বিশ্বে এখন যত মোবাইল ফোন উৎপাদিত হয় তার ৮৫ শতাংশই তৈরি হয় চীনে। উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থায় চীনের যে প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা তৈরি হয়েছে, সেটি এখন আর কোনো দেশের নেই। এ কারণে হুয়াওয়ে, অপো, শাওমি, ভিভো, টেকনোর মতো ব্র্যান্ডের বৈশ্বিক অবস্থান ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। সাশ্রয়ী মূল্য ও ব্র্যান্ডের নিশ্চয়তা থাকায় বাংলাদেশের ক্রেতারাও এসব মোবাইল ফোন কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন। চীনা মোবাইল ব্র্যান্ডের সাফল্যের আরেকটি বড় কারণ আগ্রাসী বিপণন কৌশল। পণ্য বিপণন ও প্রচারণায় চীনের ব্র্যান্ডগুলো বড় ধরনের বিনিয়োগ করছে। এ ছাড়া পণ্যের মান উন্নয়নে গবেষণায়ও ধারাবাহিক বিনিয়োগ করছে এসব ব্র্যান্ড।মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের হিসাবে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে মোট ৮১ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে চীনা ব্র্যান্ডের আমদানি ছিল ১৮ লাখ। ২০১৬ সালে এ আমদানির পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৪০ হাজার, ২০১৫ সালে ১ লাখ ৬০ হাজার ও ২০১৪ সালে মাত্র ১২ হাজার। অর্থাৎ মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে চীনের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনের বাজার বেড়েছে ১৫০ গুণ। চীনা ব্র্যান্ডের এমন প্রবৃদ্ধিতে দেশীয় ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন আমদানি ২০১৭ সালে কমে গেছে। গত বছর সিম্ফনির মতো স্থানীয় ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন আমদানি হয়েছে ৫০ লাখ, যা ২০১৬ সালে ছিল ৫৭ লাখ। একইভাবে আমদানি কমেছে বহুজাতিক বিভিন্ন স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের। ২০১৭ সালে এসব ব্র্যান্ডের আমদানির পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ১০ হাজার, যা ২০১৬ সালে ছিল ১৩ লাখ ৪৬ হাজার। স্মার্টফোন ও সাধারণ ফোন মিলিয়ে মোবাইল ফোনের বাজারের আকার এখন কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে স্মার্টফোনের বাজার ৭ হাজার কোটি টাকার। ২০১২ সাল থেকে দেশে স্মার্টফোনের বিক্রি শুরু হয়। সে বছর স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছিল ৩ লাখ। সেটি ৫ বছরে ৩০ গুণের বেশি বেড়েছে।চীনা ব্র্যান্ডের মধ্যে বাংলাদেশের বাজারে স্মার্টফোন বিক্রিতে এগিয়ে আছে হুয়াওয়ে। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৮ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন আমদানি করেছে। বর্তমানে দেশের বাজারে হুয়াওয়ের ১২টি মডেলের ফোরজি স্মার্টফোন রয়েছে। এগুলোর দাম ১১ হাজার ৯৯০ টাকা থেকে ৮৩ হাজার ৯০০ টাকার মধ্যে। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন আমদানিকারক সমিতির (বিএমপিআইএ) হিসাবে, স্মার্টফোন ও সাধারণ ফোন মিলিয়ে মোবাইল ফোনের বাজারের আকার ১০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে স্মার্টফোনের বাজার ৭ হাজার কোটি টাকার।শুধু বাংলাদেশেই নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোও চীনের সঙ্গে পেরে উঠতে পারছে না। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ভারতের মোবাইল ফোন বাজারের ৫৩ শতাংশ চীনা ব্র্যান্ডের দখলে রয়েছে। মাইক্রোম্যাক্স, লাভা, ইনটেক্স ও কার্বনের মতো স্থানীয় ভারতীয় ব্র্যান্ডের দখলে রয়েছে বাজারের মাত্র সাড়ে ১২ শতাংশ। স্থানীয় ব্র্যান্ডের ব্যবসা রক্ষায় ভারত সরকার বিদেশ থেকে মোবাইল ফোন আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েও চীনা ব্র্যান্ডের আধিপত্য ঠেকাতে পারেনি। বাজার ধরতে শাওমি, ভিভো, লেনোভো, অপো, হুয়াওয়ের মতো চীনা ব্র্যান্ডগুলো এখন ভারতেই মোবাইল ফোনের উৎপাদন ও সংযোজন কারখানা করেছে।