ইভেন্ট

হুয়াওয়ের ডিজিটাল সমাধান শিক্ষার্থীদের সহায়তায়

By Baadshah

July 08, 2020

স্কুল থেকে দূরে থেকেও পড়াশোনা সহজে করতে বিজয় ডিজিটালের সাথে একটি যৌথ উদ্যোগ শুরু করেছে হুয়াওয়ে বাংলাদেশ। এ উদ্যোগের অধীনে ‘ব্রিজিং দ্য ডিজিটাল এডুকেশন ডিভাইড টু রিডিউস দ্য গ্যাপ’ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশের টিঅ্যান্ডটি হাই স্কুলগুলোতে প্রি-স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাঝে হুয়াওয়ে স্মার্ট ডিভাইস, বিজয় ডিজিটাল অ্যাপ ও কানেক্টিভিটি পৌঁছে দেয়া হবে। এ প্রকল্পে বাস্তবায়নে সমন্বিত সহযোগিতায় রয়েছে ইউনেস্কো বাংলাদেশ।

আজ একটি ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ উদ্যোগের কথা ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. নূর-উর-রহমান, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল মতিন, বাংলাদেশে ইউনেস্কোর হেড অব অফিস ও ইউনেস্কো প্রতিনিধি বিয়াট্রিস কালদুন, বিজয় ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী জেসমিন জুই, বনানীর টিঅ্যান্ডটি বয়েজ হাই স্কুলের অধ্যক্ষ হালিমা বেগম এবং হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঝাং ঝেংজুন।

কোভিড-১৯ মহামারির শুরু থেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশের সকল স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে, লাখো শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যেই দেশের অনেক স্কুল দূরশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালু করেছে। কিন্তু, সারাদেশের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা নেই। তাই ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে বিনামূল্যে ডিভাইস ব্যবহারের সুবিধা শিক্ষাখাতের রূপান্তরে এবং বৈশ্বিক মহামারির মতো পরিস্থিতিতেও দেশের সাক্ষরতার হার বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকার বনানীতে টিঅ্যান্ডটি বয়েজ হাই স্কুলে প্রকল্পটি শুরু হবে এবং পর্যায়ক্রমে দুই বছরের মধ্যে অন্য স্কুলগুলোতেও এ প্রকল্প চালু করা হবে। ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতিকে ত্বরাণ্বিত করতে হুয়াওয়ে ঢাকার বনানীর টিঅ্যান্ডটি বয়েজ হাই স্কুলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হুয়াওয়ে ট্যাব (হুয়াওয়ে মিডিয়াপ্যাড টি৩ টেন) দেয়া হবে। উদ্ভাবনী উপায়ে বাংলাদেশের জাতীয় পাঠ্যক্রম অনুসরণ করতে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করবে বিজয় ডিজিটাল অ্যাপ। সকল ট্যাবে বিজয় ডিজিটাল অ্যাপটি আগে থেকেই ইন্সটল করা থাকবে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো অন্য দু’টি স্কুলে এ ডিজিটাল সমাধান চালু করবে এবং ২০২২ সালের আগস্টে প্রকল্পটি শেষ হবে।

এ নিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের পর এর বিস্তাররোধে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে বিকল্প উপায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে বাংলাদেশ সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ সময়ে যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে না, তাদের জন্য স্থানীয় প্রতিষ্ঠান এবং জাতিসংঘের সংস্থার সাথে হুয়াওয়ের এই সম্মিলিত উদ্যোগ বেশ আশাব্যঞ্জক। এটি বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

মো. নূর-উর-রহমান বলেন, ‘গুণগত শিক্ষার মাধ্যমেই প্রতিটি ব্যক্তিই তাদের সম্ভাবনার ক্ষেত্র উন্মোচন করতে পারে, যা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথকে সুগম করে। এই উদ্যোগটি বর্তমান সময়সহ দীর্ঘমেয়াদে আমাদের শিক্ষার্থীদের সহায়তা করবে।’

মো. রফিকুল মতিন বলেন, ‘বহু বছর ধরে টিঅ্যান্ডটি স্কুলগুলো প্রথাগত পদ্ধতিতে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে, এ প্রকল্পটি আমাদের শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল শিক্ষায় সুযোগ গ্রহণের বিষয়কে ত্বরান্বিত করবে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়টি বিটিসিএল- এ আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে আনন্দের। এ উদ্যোগের জন্য হুয়াওয়েকে ধন্যবাদ।’

বিয়াট্রিস কালদুন বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের সহ বাংলাদেশের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। একসাথে কাজ করার মাধ্যমে আমরা শিক্ষাগ্রহণ কার্যক্রম ও কানেক্টিভিটির অভাব পূরণে সমস্যা মোকাবিলায় সফল হতে পারবো, যা কোভিড-১৯ এর এ প্রতিকূল সময়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুযোগ করে দিবে। কোভিড-১৯ সহায়তা কার্যক্রমে ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন কোয়ালিশনের সদস্য হুয়াওয়ে। এ উদ্যোগে প্রযুক্তিগত সহায়তা দানকারী হিসেবে হুয়াওয়ের এ উদ্যোগ ও সার্বিক অবদানকে সাধুবাদ জানায় ইউনেস্কো। বাংলাদেশে যেন কখনও শিক্ষা কার্যক্রম থেমে না থাকে, তা নিশ্চিতে এ ধরনের উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ইউনেস্কো।’

এ উদ্যোগ নিয়ে টিঅ্যান্ডটি বয়েজ হাই স্কুলের শিক্ষক ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে আমরা নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছিলাম। এ উদ্যোগের মাধ্যমে হুয়াওয়ের প্রযুক্তিগত সহায়তার কারণে বর্তমান সঙ্কটে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারবে এবং আমরাও তাদের সঠিকভাবে পাঠদান করতে পারবো।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত টিঅ্যান্ডটি বয়েজ হাই স্কুলের শিক্ষার্থী লিমন খান বলেন, “এ উদ্যোগ নিয়ে আমরা অনেক আনন্দিত। কেননা, এর মাধ্যমে আমরা বিকল্পভাবে আমাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবো।‘’

ঝাং ঝেংজুন বলেন, ‘বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই ডিজিটাল বাংলাদেশ যাত্রার অংশ হতে পেরে হুয়াওয়ে গর্বিত। সম্পূর্ণরূপে কানেক্টেড ও ইন্টেলিজেন্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের লক্ষ্য অর্জনে হুয়াওয়ের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি, সবক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তিরই শিক্ষা লাভ ও সমান সুযোগ প্রাপ্তির অধিকার রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে, আমরা মনে করি, বৈশ্বিক মহামারির কারণে শিক্ষা কার্যক্রমে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে তার সমাধান হবে। স্কুলগুলোতে ইন্টারনেট সুবিধা ও ডিজিটাল প্রযুক্তি পৌঁছে দেয়া গেলে তা সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের মাঝে দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ তৈরি করবে। যা দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নানা সুযোগ উন্মোচন করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অতীতেও মানুষ বিভিন্ন বৈশ্বিক সঙ্কটকে জয় করেছে। আমরা যদি সঠিকভাবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারি, তবেই আমরা এ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারবো, ইতিহাস থেকে আমরা এ শিক্ষা নিতে পারি। তবে, এর জন্য প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী কাজ করা। বাংলাদেশে ডিজিটাল শিক্ষার প্রসারে এ প্রচেষ্টায় আমাদের সহযোগিতা করার জন্য বিটিসিএল, বিজয় ডিজিটাল এবং ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ।’

কানেক্টিভিটি, অ্যাপ্লিকেশন ও দক্ষতার মাধ্যমে ব্যক্তি ও ক্ষুদ্র ব্যবসা উদ্যোগের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি ত্বরাণ্বিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হুয়াওয়ে। এ লক্ষ্যে, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালে ‘টেকফরঅল’ উদ্যোগ শুরু করে। ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন কোয়ালিশনের সমর্থনে টেকফরঅল উদ্যোগের মাধ্যমে নিজেদের প্রচেষ্টা জোরদার করেছে হুয়াওয়ে, যা কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট শিক্ষাখাতে নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে ‘ব্রিজিং দ্য ডিজিটাল এডূকেশন ডিভাইড টু রিডিউস দ্য গ্যাপ’ প্রকল্পের সাথে সাথে এই উদ্যোগটিও চালু হবে।