প্রযুক্তি বিশ্বে কয়েক মাসে ধরে হুয়াওয়ের নতুন স্মার্টফোন নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। মেট ২০ ও মেট ২০ প্রো—এ দুটি স্মার্টফোনকে প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা এ বছরের সবচেয়ে উদ্ভাবনী স্মার্টফোন বলছেন। নতুন দুটি স্মার্টফোনকে স্মার্টফোন ও টেক বিশ্বের জন্য টার্নিং পয়েন্ট বলা হচ্ছে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে চীন ও হুয়াওয়ে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে। যদিও কয়েক বছর আগে হুয়াওয়ে নামটি পর্যন্ত সবাই ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারত না। এক দশকের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য স্মার্টফোন তৈরি করে চীন। কিন্তু এখন দেশটির নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের স্মার্টফোন তৈরি হচ্ছে। হুয়াওয়ের নতুন ফ্ল্যাগশিপ ফোন হিসেবে বাজারে আসা মেট ২০ ও মেট ২০ প্রো চীনের নিজস্ব কারখানায় তৈরি। এ ফোনকে কেন উদ্ভাবনের দিক থেকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? হুয়াওয়ে বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার কেলভিন ইয়াং এর সাক্ষাতকার:
প্রশ্ন: হুয়াওয়ের কনজ্যুমার বিজনেস গ্রুপ এবং এর পণ্যের পোর্টফোলিও সম্পর্কে একটু জানতে চাই
বিশ্বের ১৭০টি দেশে হুয়াওয়ের পণ্য ও সেবা রয়েছে এবং বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ লোক হুয়াওয়ের পণ্য ও সলিউশন ব্যবহার করছে। হুয়াওয়ের কনজ্যুমার বিজনেস গ্রুপ হুয়াওয়ের তিনটি বিজনেস ইউনিটের মধ্যে অন্যতম যার স্মার্টফোন, মোবাইল ব্রডব্যান্ড ডিভাইস, হোম সার্ভিস এবং ক্লাউড সেবা রয়েছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এনালিস্ট ফার্ম আইডিসি, আইএইচএস এবং কাউন্টারপয়েন্টের মতে, ২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে অ্যাপলকে টপকে হুয়াওয়ে পরপর দুবার দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে।
হুয়াওয়ের ব্র্যান্ড র্যাংকিং: ফরচুন গ্লোবাল র্যাংকিং-২০১৮# ৭২ ফোর্বস এর বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ব্র্যান্ড-২০১৮# ৭৯ ইন্টারব্র্যান্ডের মতে ১০০ ব্র্যান্ডের মতে বিশে^র সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ড-২০১৮# ৬৮ প্রশ্ন: বাংলাদেশে হুয়াওয়ে ডিভাইসের ব্যবসা কেমন? হুয়াওয়ে বাংলাদেশের অন্যতম সম্প্রসারণশীল স্মার্টফোন ব্র্যান্ড। এর ডিভাইসগুলো হচ্ছে স্মার্টফোন, ট্যাব, ব্যান্ড এবং প্রিমিয়াম এক্সেসরিজ আইটেম। স্মার্টফোন মডেলের সংখ্যা: বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে হুয়াওয়ের ১১টি বেশি স্মার্টফোন মডেল আছে যার সর্বনিন্ম মূল্য ৭,৩৯০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৮২,৯৯০ টাকা সর্বোচ্চ। আমাদের পণ্যগুলো চার ক্যাটাগরিতে বিভক্ত যথা: মেট সিরিজ, পি সিরিজ, নোভা সিরিজ এবং ওয়াই সিরিজ। প্রশ্ন: দেশে বর্তমানে মোবাইল ডিভাইস মার্কেটের অবস্থা কেমন? বাংলাদেশে মোট মার্কেট শেয়ারের প্রায় ৩৫ ভাগ জায়গা দখল করে আছে স্মার্টফোন এবং প্রতিবছর এই হার বাড়ছে। বিশেষভাবে দেশে ফোরজি আসার পর স্মার্টফোন বিক্রির হার আরো ত্বরান্বিত হচ্ছে। ন্যায়সঙ্গত দামের কারণে তরুণ থেকে মধ্যবয়সী প্রায় সব বয়সী মানুষ এখন স্মার্টফোন ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। ভবিষ্যতে শহর ও উপশহর পর্যায়ে স্মার্টফোনের বাজার আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশ্ন: বিশ্বের অন্যান্য দেশের ব্যবসার তুলনায় হুয়াওয়ে এ অঞ্চলের ব্যবসা সম্প্রসারণে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে? বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে হুয়াওয়ে তার গড় আয়ের শতকরা ১০ ভাগেরও বেশি গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) কাজে ব্যবহার করে। এখাতে ৮০ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছে যা হুয়াওয়ের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় ৪৫ ভাগ। বিশ^ব্যাপী ১৪টি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে হুয়াওয়ের। বর্তমানে প্যারিসে হুয়াওয়ের অ্যাসথেটিক্স রিসার্চ সেন্টার রয়েছে। ভবিষ্যতের প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ফ্রান্সের নামিদামি ব্র্যান্ডগুলো হুয়াওয়ের সাথে কাজ করছে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে আসছে হুয়াওয়ের ফ্লাগশিপ স্মার্টফোন মেট ২০ প্রো। এ নিয়ে আপনাদের ভাবনা কি? লন্ডন ও চীনে মেট ২০ সিরিজ যাত্রা শুরুর পর বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বেঞ্চমার্কে আমরা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। ফোনের পারফরম্যান্স রেটিং অ্যাপ আনটুটু বেঞ্চমার্ক অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ দশটি ফোনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে মেট সিরিজের স্মার্টফোন। র্যাংকিং অনুযায়ী হুয়াওয়ে মেট ২০, মেট ২০ প্রো এবং মেট ২০ এক্স এখন বিশে^র শীর্ষস্থানীয় তিনটি ফোন। অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, হুয়াওয়ে ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশের বাজারে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। আপনারা জেনে থাকবেন, হুয়াওয়ের মেট সিরিজের ফোনগুলোতে সর্বোচ্চ কার্যক্ষম সিস্টেম অন চিপ (এসওসি) কিরিন ৯৮০ ব্যবহার করা হয়েছে। এটি তৈরিতে ৭ এনম প্রসেসর, কর্টেক্স এ৭৬ ভিত্তিক সিপিইউ এবং মালি-জি৭৬ জিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছে। এসওসি ফোনের গতি বৃদ্ধি করে ব্যবহারীকে নির্বিঘ্নে ফোন চালাতে সাহায্য করে। এর ৪০ ওয়াটের সুপার চার্জার, ১৫ ওয়াট ওয়ারলেস কুইক চার্জ এবং বৃহদাকার ব্যাটারি ব্যবহারকারীকে সর্বোত্তম ব্যাটারি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা দেয়। এর ওয়ারলেস চার্জিং টেকনোলজিও রয়েছে। ২৫ নভেম্বর থেকে বাজারে পাওয়া যাবে। প্রি-বুকিং কাস্টমাররা আকর্ষণীয় পুরস্কার ও ডেটা বান্ডেল অফার পাবেন। প্রশ্ন : বাংলাদেশে ডিভাইস মার্কেটের চ্যালেঞ্জগুলো কি? আগামীতে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে গ্রে মার্কেট। এক্ষেত্রে আমরা সরকারের কাছে সঠিকভাবে আইন প্রয়োগের দাবি জানাই। উচ্চকর আরেকটি প্রধান অন্তরায়। যদি এটাকে সহনীয় মাত্রার মধ্যে রাখা যায় তাহলে আশা করছি স্মার্টফোনের বাজার আরো সম্প্রসারণ হবে। প্রশ্ন#বাংলাদেশে কতগুলো সার্ভিস সেন্টার আছে এবং কিভাবে বিক্রোত্তর সেবা প্রদান করেন? বর্তমানে দেশব্যাপী হুয়াওয়ে ১৬টি সার্ভিস সেন্টার এবং ৬০টি কালেকশন পয়েন্ট রয়েছে। যেহেতু হুয়াওয়ের পণ্যের চাহিদা বাড়ছে তাই গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের জন্য আমরা নতুন নতুন সার্ভিস সেন্টার খুলছি। প্রশ্ন : আমরা দেখতে পাচ্ছি, নতুন নতুন আউটলেট উদ্বোধনের মাধ্যমে হুয়াওয়ে তার স্মার্টফোন ব্যবসা আরো সম্প্রসারণ করছে। আগামীতে বাংলাদেশ নিয়ে আপনাদের ব্যবসা পরিকল্পনা কি? বর্তমানে দেশে ৩২০টি বেশির হুয়াওয়ে ব্র্যান্ড শপ ও প্রায় ৫ হাজার সেলস পয়েন্ট রয়েছে। আগামীতে আমরা আরো সেলস পয়েন্ট খোলার পরিকল্পনা করছি। পাশাপাশি কাস্টমারদের প্রিমিয়াম অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য নতুন করে ফ্লাগশিপ স্টোর খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া, আরো নতুন নতুন মডেলের স্মার্টফোন আনার পরিকল্পনা রয়েছে। গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগে হুয়াওয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গ্রাহকদের ভালো মানের পণ্য দিতে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি।