বিশ্বের সেরা দশ ব্র্যান্ডের তালিকায় প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ব্র্যান্ড ভ্যালুয়েশন ও স্ট্র্যাটেজি কনস্যালটেন্সি প্রতিষ্ঠান ‘ব্র্যান্ড ফাইনান্সের’ ‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল ব্র্যান্ডস ২০২০’ নামের এ তালিকায় সেরা দশে জায়গা করে নিয়েছে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি।
ব্র্যান্ড ফাইনান্স তাদের প্রতিবেদনে বলছে, “এটা খুবই স্পষ্ট যে ভবিষ্যতে ফাইভজির তীব্র প্রতিযোগিতাই টেলিকম ইন্ড্রাস্টিতে জায়গা করে নেওয়ার বড় সুযোগ। পশ্চিমাদের মতো হুয়াওয়ে এক্ষেত্রে তাদের বাজার সম্প্রসারণ করছে। নানা বিতর্কের পরেও, চীনা প্রতিষ্ঠানটি অপ্রতিরোধ্যভাবে এগিয়ে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্র্যান্ড ভ্যালু ধরা হয়েছে ৬৫.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার ফলে ভ্যালুয়েবল দশ ব্র্যান্ডের তালিকায় প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি।”
বিশ্বের ৫০০ প্রতিষ্ঠান নিয়ে করা এ তালিকায় ২০৫টি মার্কিন ব্র্যান্ড এ তালিকায় জায়গা করে নেওয়ায় দেশ হিসেবে সবার উপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরেই রয়েছে চীনের অবস্থান। দেশটির ৭০টি ব্র্যান্ড এ তালিকায় রয়েছে।
‘মোস্ট ভ্যালুয়েবল সেক্টর’ হিসেবে অব্যাহতভাবে এগিয়ে থাকছে প্রযুক্তি খাত। এ তালিকার ৫০০টির মধ্যে ৪৬ টি ব্র্যান্ড প্রযুক্তি খাতের। গাণিতিক হিসাবে ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ১৪ শতাংশ দখলে রয়েছে খাতটির। প্রযুক্তি ব্র্যান্ডগুলোর সম্বন্বিত ব্র্যান্ড ভ্যালু দাঁড়াচ্ছে ৯৮৬.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শুধু হুয়াওয়ে সেরা দশ ভ্যালুয়েবল ব্র্যান্ডের তালিকায় রয়েছে।
২০১৯ সালে হুয়াওয়ে ২৪০ মিলিয়ন ইউনিট স্মার্টফোন বিশ্ববাজারে ছেড়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী ব্র্যান্ড হিসেবে জায়গা করে নেয়। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ফ্ল্যাগশিপ মেট ও পি সিরিজ মিলিয়ে ৪৪ মিলিয়নের বেশি ইউনিট স্মার্টফোন বাজারে ছাড়ে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি বছরান্তে ৫০ শতাংশ শিপমেন্ট বৃদ্ধির রেকর্ড ও গড়ে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬.৯ মিলিয়ন ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন বাজারে ছাড়ে প্রতিষ্ঠানটি।
ভবিষ্যতে জীবনব্যবস্থার সবক্ষেত্রে পদচারণার লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে হুয়াওয়ে- উল্লেখ করে হুয়াওয়ে কনজ্যুমার বিজনেস গ্রæপের সিইও রিচার্ড ইউ বলেন, “আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের জন্য হুয়াওয়ে প্রধানত ‘অল-সিনারিও’ কৌশল বাস্তবায়নে মনোনিবেশ করবে। একটি সম্বন্বিত ইকোসিস্টেম তৈরির প্রতিশ্রæতিতে আমরা অবিচল রয়েছি। যার ফলে ট্যাবলেট, পিসি, ভিআর ডিভাইস, ওয়্যারেবলস, স্মার্ট ডিসপ্লে, স্মার্ট ¯িপকার, কার ও অসংখ্য আইওটি ডিভাইসগুলো স্মার্টফোনের সাথে যুক্ত থাকবে।”
নিরবচ্ছিন্ন এআই জীবনব্যবস্থার জন্য স্মার্টফোন কেন্দ্রিক ‘১+৮+এন’ নামে কৌশলগত নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে হুয়াওয়ে কনজ্যুমার বিজনেস গ্রæপ। এর ফলে সব অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে থাকবে স্মার্টফোন। ‘৮’ প্রতীক দ্বারা আটটি সহায়ক ডিভাইস, যেমন: এআই স্পিকারস, ট্যাবলেটস, পিসি, ওয়্যারেবলস, কানেক্টেড ভেহিক্যালস, এরআর/ভিআর, স্মার্ট ইয়ারফোনস এবং স্মার্ট স্ক্রিনস বোঝানো হয়েছে। আর ‘এন’ দ্বারা স্মার্ট ইকো-সিস্টেমের অসংখ্য আইওটি ডিভাইসমূহের সংমিশ্রণকে বোঝায়। হুয়াওয়ের পূর্ণাঙ্গ ইকো-সিস্টেম চালু হলে এই তিনটির সমন্বিত রূপে মানুষের লাইফস্টাইল আরো সহজ হয়ে উঠবে।
হুয়াওয়ে কনজ্যুমার বিজনেস গ্রæপ: বিশে^র প্রায় ১৭০টির বেশি দেশে ও স্থানে হুয়াওয়ে সৃষ্টিশীল আইটি পণ্য, সেবা ও সল্যুশনস ব্যবহার হয় যা বিশে^র মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে সেবা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি সুইডেন, রাশিয়া, ভারত ও চীনে হুয়াওয়ের মোট ১৪টি গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) সেন্টার রয়েছে। হুয়াওয়ের তিনটি বিজনেস ইউনিটের মধ্যে হুয়াওয়ে কনজ্যুমার বিজি যারা কাজ করে স্মার্টফোন, পিসি, ট্যাবলেট, পরিধানযোগ্য ডিভাইস এবং ক্লাউড সেবা নিয়ে। বিশ^ব্যাপি টেলিকম খাতে ৩০ বছরের অভিজ্ঞতার উপর প্রতিষ্ঠিত হুয়াওয়ের নেটওয়ার্ক এবং একইসঙ্গে গ্রাহকদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটি দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ ।