টেলিনরের গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৯ সালে আমাদের পণ্য ও সেবা ব্যবহার, অভ্যস্ততা ও চিন্তার ধরণ বদলে দিবে সাত প্রযুক্তি।২০১৯ সালের ৭টি উল্লেখযোগ্য ও সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রায় ৭ কোটি ২০ লাখ গ্রাহকের শক্তিশালী ও দ্রুত প্রবৃদ্ধিশীল মোবাইল নেটওয়ার্ক গ্রামীণফোন। ১৪ জানুয়ারী রাজধানীর জিপি হাউজে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টেলিনর রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিয়র্ন হ্যানসেন।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর একটি আলোচনার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী মাইকেল পি. ফোলি, হাসান রহমান রতন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডাটাসফট ম্যানুফ্যাসচারিং এ্যান্ড এসেম্বল ইন্স লি, হােসাইন ইলিয়াস, সিইও, পাঠাও, রেদওয়ান হাসান খান, হেড অব আইসিটি বিজেনেস, এবং সোয়াইবা সারওয়াত সিনথিয়া, হেড অব ডিজিটাল এ্যান্ড এ্যানালাইটিকস অপারেশান, গ্রামীণফোন লি।
টেলিনর গ্রুপের গবেষণা প্রতিষ্ঠান টেলিনর রিসার্চের বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা প্রতিবছর ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় ও বিশ্বজুড়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে এমন সাতটি প্রযুক্তি নিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এ বছরের বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ডিপফেক, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ৫জি’র প্রসার, আইওটি বা ইন্টারনেট অব থিংস- এর বিস্তৃত ব্যবহারের উত্থান, বাসায় ব্যবহারে ভয়েস অ্যাক্টিভেটেড চ্যাটবটস এবং সচেতনতামূলক বিষয় যেমন ডিজিটাল স্ক্রিনে থাকার সময়ের নিয়ন্ত্রণ ও মোবাইলচালিত গ্রীন টেকনোলজি।
ডিজিটালাইজেশানের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাই, আমাদের দেশেও নতুন এই সাত প্রযুক্তিগুলো যে চলে আসবে তা মোটামুটিভাবে নিশ্চিত।
এ নিয়ে হেড অব টেলিনর রিসার্চ বিয়র্ন টালে স্যান্ডবার্গ বলেন, ‘প্রযুক্তিবিশ্ব প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে। চলতি বছর যুগান্তকারী উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ব্যবহার আগের যেকোনো সময়ে চেয়ে ব্যাপক পরিসরে হবে বলেই আমরা মনে করি। আমাদের বিশ্বাস, এ উদ্ভাবন প্রতিফলন, বাস্তবিক প্রয়োগ ও প্রেক্ষিতের প্রয়োজনকেই তুলে ধরবে; এবং ২০১৯ সালের প্রযুক্তির কাঁটা সেদিকেই যাচ্ছে। যত পথই পারি দিতে হোক না কেনো, আমরা চাই, আমাদের জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহার যেনো নিশ্চতভাবে নিরাপদ, বাস্তব ও ইতিবাচক হয় ।’
টেলিনর রিসার্চের মতে, অতিউন্নত অ্যালগরিদম সহজেই জাল ছবি ও ভিডিও তৈরি করতে পারবে এবং ডিপফেক কন্টেন্টগুলো এতোটাই অত্যাধুনিক হবে যে ডিজিটাল বিশ্বের কোনটা আসল কিংবা কোনটা নকল তা আলাদা করা কঠিন হয়ে যাবে। ২০১৯ সালে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, অপারেটর এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ডিপফেক কন্টেন্ট হ্রাসে কাজ করবে এবং এ নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে গণসচেতনতামূলক নানা কর্মসূচির আয়োজন করবে।
ইতিমধ্যেই পুরো বিশ্ব ৫জি প্রযুক্তির উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে, কিন্তু ২০১৯ সালে এ প্রযুক্তির সম্ভাবনা পুরোপুরি উপলব্ধি করা যাবে। এ বছরেই বাণিজ্যিকভাবে ৫জি প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হবে এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিপণন প্রচারণাও লক্ষ্য করা যাবে। স্বচালিত ও স্বয়ংবাহিত বাস থেকে অটোমেটেড ফিশারিজ, ডেটা নির্ভর টিভি ও ফিক্সড ব্রডব্যান্ড থেকে ৫জি ক্ষমতাসম্পন্ন রিমোট সার্জারির সম্ভাব্য অ্যাপ্লিকেশন, এসব মিলে বলা যেতে পারে ২০১৯ সালে ৫জি’র অবাধ দ্বার উন্মোচিত হবে যার ফলে ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে এ প্রযুক্তির নানা ব্যবহার গ্রাহকের জন্য বাজারে চলে আসবে।
এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে লো-পাওয়ার ওয়াইড-এরিয়া (এলপিডব্লিউএ) ইকোসিস্টেমে ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইওটির মাধ্যমে প্রোটোটাইপ থেকে বৃহৎ পর্যায়ে কমার্শিয়াল ডেপ্লয়মেন্ট (বাণিজ্যিক স্থাপনা) ঘটবে। বৃহদায়তনে আইওটি শিল্প বিশেষ করে স্মার্টসিটি, শিল্প উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাত শিল্প যেমন- শিপিং, ট্রাফিক ও ট্রান্সপোর্ট মনিটরিং ও ফিশারিজ গড়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, টেক্সট-নির্ভর চ্যাটবটস, ভয়েস-অ্যাক্টিভেটেড চ্যাটবটসে রূপান্তরিত হবে। বাসার প্রতিদিনকার কাজের রুটিনগুলো অত্যন্ত সহজে ভয়েস-অ্যাক্টিভেটেড চ্যাটবটস নির্ভর স্মার্ট ভয়েস-রিকগনিশনের নানা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে করে ফেলা যাবে। সম্ভাবনা রয়েছে, ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারের জন্য ভয়েস-অ্যাক্টিভেটেড চ্যাটবটস ব্যাপক পরিসরে বাজারে চলে আসবে।
উচ্চ চাহিদার ফলে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও বিস্তৃতভাবে ডিজিটালকরণের জন্য ডিজিটাল স্ক্রিন টাইম সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়টি সামনে চলে আসবে। ডিজিটাল স্ক্রিনে টাইম নিয়ে সচেতনতা এবং মানুষের ওপর এর প্রভাব বিস্তৃত হচ্ছে। মানুষের স্ক্রিন টাইম ট্র্যাকিং অ্যাপ, ফোনে নাইট টাইম ও ডু নট ডিস্টার্ব মোড ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে কেননা ডেভলপাররা স্মার্টফোনের অ্যাপগুলো এমনভাবে তৈরি করছে যেনো আমাদের ডিভাইসে আমাদের ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায়। ফলে, ২০১৯ সালে স্ক্রিন টাইম নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্জ্য হ্রাস ও বিশ্বজুড়ে মানুষের জন্য পরিবেশবান্ধব অভ্যাস গড়ে তোলায় বিশ্বাসী ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করছে মোবাইলচালিত সবুজ প্রযুক্তি। ২০১৭-১৮ সালে কম খাবার নষ্ট করা, রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম, সাইকেল দিয়ে খাবার ডেলিভারি সেবা এবং ইলেক্ট্রিক গাড়ি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত বেশ কিছু পদক্ষেপ লক্ষ্য করা গিয়েছে। পরিবেশবান্ধব আরও বেশি নীতিমালা ও নতুন উদ্যোগের বিস্তৃতি ঘটবে বলে এ প্রতিবেদনে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী মাইকেল পি. ফোলি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত এবং একীভূত হচ্ছে, যা সত্যিই ইতিবাচক। নতুন প্রযুক্তি প্রবণতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশব্যাপী শিল্প, প্রতিষ্ঠান ও স্টার্টআপগুলোর কিভাবে প্রস্তুত হওয়া উচিৎ তা স্পষ্টভাবেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রযুক্তি, জীবনব্যবস্থা ও শিল্পখাতের মধ্যে একীভূতকরণের মাধ্যমে আমরা দেশে যুগান্তকারী ডিজিটাল সেবার প্রসার এবং সত্যিকার অর্থেই ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের ক্রমবিকাশ আশা করতে পারি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্যতম সহযোগী হিসেবে গ্রামীণফোন ধারাবাহিকভাবে এ দেশের বাজারে নতুন উদ্ভাবন নিয়ে আসবে এবং মানুষকে তার চাহিদা অনুযায়ী সেবা প্রদান করবে পাশাপাশি সমাজের ক্ষমতায়নেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এ ব্যাপারে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’