২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) মোট ৩,৭৩৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে গ্রামীণফোন লিমিটেড, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.২ শতাংশ কম। মূলত চ্যালেঞ্জিং সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে কোম্পানির আয়ে। চতুর্থ প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির মোট গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৪৩ লাখে। গ্রামীণফোনের মোট গ্রাহকের ৫৬.৯ শতাংশ, অর্থাৎ ৪ কোটি ৮০ লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করছেন।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান বলেন, “আমরা সবাই জানি ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও জিডিপির ধারাবাহিক হ্রাসসহ বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নানাবিধ চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে যা ব্যবসার বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য চাপ তৈরি করেছে । বছরের দ্বিতীয়ার্ধে রাজস্ব ও মুনাফা (টপ লাইন-বট্ম লাইন) প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা চাপ সৃষ্টি হলেও আমরা আশ্বস্ত করতে চাই যে, বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রাপ্তি ও স্থিতিশীলতার দিকে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে। শেয়ারহোল্ডারদের নির্ভরযোগ্য ও ধারাবাহিক রিটার্ন প্রদানের লক্ষ্যে কোম্পানির নীতি অনুসরণ করে আকর্ষণীয় লভ্যাংশ প্রদান অব্যাহত থাকবে, যা নিশ্চিত হবে একটি শক্তিশালী ব্যালেন্স শীটের মাধ্যমে। আমরা বিশ্বাস করি, এটি সাময়িক অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতির মধ্যেও কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি শক্তিশালী অবস্থানের প্রতি আমাদের দৃঢ় আস্থার বহিঃপ্রকাশ।
তিনি আরও বলেন, “গ্রামীণফোনের কৌশলগত পরিকল্পনায় প্রাধান্য পাচ্ছে সাস্টেইনিবিলিটি, উদ্ভাবন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। সরবরাহ ব্যবস্থাপানার সব পর্যায়ে আমরা সাস্টেইনিবিলিটির দিকে নজর দিচ্ছি যাতে সার্বিক মান নিশ্চিত হয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের সাপ্লাইয়েরদেরকে প্রদানকৃত অর্থের ৭৭.৫ শতাংশ ব্যয় হয়েছে সেইসব কোম্পানিতে যারা কার্বন নিঃসরণ কমাতে সংকল্পবদ্ধ। সামনের দিনগুলোর জন্য উদ্ভাবনের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই আমাদের লক্ষ্য। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ ও গ্রাহক অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ করতে আমাদের বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে। আগামী বছরগুলোতে বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্ল্যাটফর্ম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় আমাদের অগ্রগামী বিনিয়োগের সুফল দৃশ্যমান হবে। ফলে নিশ্চিত হবে স্বয়ংক্রিয় পরিচালন, স্বয়ংসম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা এবং আরও উন্নত গ্রাহক সেবা।”
গ্রামীণফোনের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার অটো রিসব্যাক বলেন, “পূর্বের বছরগুলোর তুলনায় এ বছর আমাদের মোট রাজস্ব ৪.৯ শতাংশ এবং সাবস্ক্রিপশন ও ট্রাফিক খাতে রাজস্ব ৪.৬ শতাংশ কমেছে। মূলত সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে ডেটা ব্যবহারে গ্রাহকদের অতিরিক্ত সতর্কতার ফলে এমনটি ঘটেছে। আমরা আশাবাদী যে অর্থনীতি স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরলে এবং মোবাইল হ্যান্ডসেট ও ডেটা ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে আমাদের রাজস্বও ধীরে ধীরে বাড়বে। দক্ষ পরিচালন ব্যবস্থা এবং সঠিকভাবে মূলধন বরাদ্দের ফলে ২০২৪ সালে আমাদের ইবিআইটিডিএ’র পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯,৬২৩’ কোটি টাকায় এবং ইবিটিডিএ মার্জিনের পরিমাণ ৬০ শতাংশের বেশি। মূলত গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের এককালীন প্রভাবের কারণে কর পরবর্তী মোট মুনাফার পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে।“
তিনি আরও বলেন, “শক্তিশালী ব্যালেন্স শীটের কারণে এ বছরের মতো চ্যালেঞ্জিং অর্থনীতির মধ্যেও আমরা দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিনিয়োগের চিন্তাভাবনা করতে পারছি। পাশাপাশি এটি একটি আকর্ষণীয় ও অনুমানযোগ্য লভ্যাংশ নীতির ভিত্তিও তৈরি করেছে। ২০২৪ সালের জন্য শেয়ার প্রতি ১৭ টাকা চূড়ান্ত লভ্যাংশ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে বোর্ড। এর আগে দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে শেয়ার প্রতি ১৬ টাকা লভ্যাংশ প্রদান করেছিলাম আমরা। এর ফলে ২০২৪ সালে প্রদেয় মোট লভ্যাংশের পরিমাণ দাঁড়ালো ৪,৪৫৫ কোটি টাকা যা কর পরবর্তী মোট মুনাফার ১২২.৭৩ শতাংশ।”