সারাদেশ ব্যাপী দোরগোড়ায় ডেলিভারি প্রদানে পথিকৃৎ এবং অগ্রগণ্য প্রযুক্তি-নির্ভর লজিস্টিকস কোম্পানি পেপারফ্লাই দেশের কুরিয়ার (এক্সপ্রেস) ইন্ডাস্ট্রির ডিজিটাল যুগের শুভসূচনা ঘটাতে যাচ্ছে। এই উদ্দেশ্যে কোম্পানিটি ভারতের অন্যতম প্রধান প্রযুক্তি-নির্ভর ই-কমার্স লজিস্টিকস সল্যুশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইকম এক্সপ্রেসের কাছ থেকে আরো ১০২ কোটি টাকার বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে।
২০১৬ সালে শাহরিয়ার হাসান, রাজিবুল ইসলাম, রাহাত আহমেদ এবং শামসুদ্দীন আহমেদ – মিলে পেপারফ্লাই প্রতিষ্ঠা করেন। পেপারফ্লাই বাংলাদেশের প্রথম প্রযুক্তি- নির্ভর লজিস্টিকস কোম্পানি যা সারা দেশব্যাপী সেবা প্রদান করছে। গত ৬ বছরে পেপারফ্লাই দেশের ই-কমার্স লজিস্টিকস ইন্ডাস্ট্রিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে, প্রবর্তন করেছে দেশব্যাপী দোরগোড়ায় ডেলিভারি, দ্বারপ্রান্ত থেকেই পণ্য সংগ্রহ, দ্রুততম মিড-মাইল নেটওয়ার্ক, অ্যাপ সমন্বয়করণ, ক্যাশবিহীন মূল্য পরিশোধ এবং আরো অনেক কিছু। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কোম্পানিটি দেশীয় কুরিয়ার ও পার্সেল ইন্ডাস্ট্রিকে লক্ষ্য করে সর্বপ্রথম এর কন্ট্র্যাক্ট নির্ভর বিটুবি সার্ভিস ও দোরগোড়ায় এক্সপ্রেস ডেলিভারি সার্ভিস চালু করে এবং এক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাড়া পায়। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে পেপারফ্লাই বাংলাদেশের এক্সপ্রেস কুরিয়ার ডেলিভারি সার্ভিসের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক ও আমূল পরিবর্তন আনতে চায়। এই কোম্পানিটির এ পর্যন্ত যে জয়যাত্রা, তা আসলে পুরো টিমের দলগত দক্ষতা ও নতুন যুগের উপযোগী লজিস্টিকস ব্যবস্থা গড়ে তোলার ইচ্ছাশক্তির বহিঃপ্রকাশ এবং অবশ্যই তা পেপারফ্লাইয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের দূরদর্শী ও অভিজ্ঞ নেতৃত্বের অধীনেই সম্ভব হয়েছে।
এই নতুন বিনিয়োগ দেশব্যাপী আরো একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সহায়ক হবে, যা কিনা কুরিয়ার ও পার্সেল ইন্ডাস্ট্রির সকল প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সাজানো হবে এবং সেই সাথে দ্রুত বর্ধনশীল ই-কমার্স ডেলিভারি খাতের কথাও লক্ষ্য রাখা হবে।
কোম্পানিটি দেশীয় প্রতিভা ও মেধা কাজে লাগিয়ে তার নিজস্ব আই ও টি সল্যুশনসের ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ করারও পরিকল্পনা করছে। এতে শুধু ইন্টেলিজেন্ট প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে দ্রুততর ডেলিভারি নিশ্চিত হবে না, দেশের নিজস্ব হার্ডওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিও উপরে উঠে আসার সুযোগ পাবে। পেপারফ্লাই এই ক্ষেত্রে উন্নততর সাপ্লাই চেইন এবং লজিস্টিকস প্রক্রিয়ায় আরো গতি আনা এবং ওয়্যারহাউস, পরিপূর্ণতা ও নেটওয়ার্ক অপারেশন্সের জন্য পরিবর্তনশীল ও সহজে ভিন্নতা আনা যায় এমন সব সল্যুশনস গ্রহণ করার মাধ্যমে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে চায়।
বাংলাদেশ ই-কমার্স বাজারের মূল্যমান ২০২১ সালে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ছিল এবং এ মূল্য আগামী কয়েক বছরে দ্বিগুন আকার ধারণ করবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। আবার দেশের কুরিয়ার মার্কেটে বর্তমান সময়ে বছরে ১২০০ কোটির লেনদেন হচ্ছে কিন্তু এই খাতে প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা প্রদান এবং উন্নত আধুনিক প্রযুক্তিগত অভাব রয়েছে।এর ফলে এ খাতের বৃদ্ধি ও উপযোগিতা ব্যাহত হচ্ছে। পেপারফ্লাই এ জট খুলে ফেলার এবং লজিস্টিকস সংক্রান্ত সকল ভোগান্তির অবসান ঘটাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করার পরিকল্পনা করছে।
স্ট্র্যাটেজিক বিনিয়োগকারী ইকম এক্সপ্রেস লিমিটেড, ভারতের ইকমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে এন্ড টু এন্ড প্রযুক্তি নির্ভর লজিস্টিকস সল্যুশন প্রদানের ক্ষেত্রে একটি অগ্রগণ্য প্রতিষ্ঠান। গুরুগ্রামে হেডকোয়ার্টার বিশিষ্ট ইকম এক্সপ্রেস ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল টি এ কৃষ্ণান, মাঞ্জু ধাওয়ান ,কে সত্যনারায়ণ এবং পরলোকগত সঞ্জীব সাক্সেনার হাত ধরে, ভারতীয় লজিস্টিকস ও ডিস্ট্রিবিউশন ইন্ডাস্ট্রিতে তাদের সম্মিলিত ১০০ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতার আলোকে।
এই বিনিয়োগের ব্যাপারে ইকম এক্সপ্রেসের সিইও এবং সহ প্রতিষ্ঠাতা টি. এ. কৃষ্ণান বলেন, “পেপারফ্লাই বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতের বিকাশ ঘটানো এবং দেশের সর্বত্র এই সেবা প্রদানের পরিসর বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পেপারফ্লাইয়ে ইকম এক্সপ্রেসের সহায়ক বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা এই কোম্পানির প্রতি আমাদের পূর্ণ সহায়তা প্রদানের ইচ্ছা প্রকাশ করছি যাতে তারা তাদের পরিসর বাড়াতে পারে, দেশের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল কমার্সের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সল্যুশনসের সাহায্যে এগিয়ে যেতে পারে। পেপারফ্লাইয়ের বিটুবি সল্যুশনস সেবা প্রদান করা শুরু হবার পর থেকে তা অসাধারণ গতিতে চলছে এবং আমরা আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এই খাতটিকে আরও বড় পরিসরে দেখতে পাবো। আমাদের এই বিনিয়োগ বাংলাদেশের ই-কমার্স মার্কেটের প্রতি আমাদের আস্থা আরো জোরদার করে তুলছে আর এর ফলে কোম্পানিটি বৃদ্ধির পরিসর বা স্কেল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য উপযোগী ভাবে সদা প্রস্তুত থাকতে পারবে এবং আমরা এর বিকশিত হবার যাত্রার অংশীদার হতে আগ্রহী।”
পেপারফ্লাইয়ের এমডি ও সিইও শাহরিয়ার হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন,” আমরা আমাদের সূচনা থেকেই ই-কমার্স লজিস্টিকস সল্যুশন প্রদানে পথিকৃৎ এর ভূমিকা পালন করে আসছি এবং বাংলাদেশের সকল গ্রামাঞ্চলের দোরগোড়াও ডেলিভারির আওতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে আমাদের অগ্রগামী ভূমিকা রয়েছে। গত বছর আমরা আমাদের বিশ্বমানসম্পন্ন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে স্থানীয় কুরিয়ার পার্সেল ইন্ডাস্ট্রিতে বিটুবি সেবা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছি এবং বেশ উদ্দীপনামূলক সাড়া পেয়েছি। এই বিনিয়োগ দ্বারা এ কথা নিশ্চিত হওয়া যায় আমরা আগামী বছরগুলোতে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তি ও উপযোগিতার সঠিক মিশেল ঘটিয়ে আগের নিয়মে চলা ইন্ডাস্ট্রিতে আমূল পরিবর্তন আনার প্রত্যয় রাখি। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে বাংলাদেশের লজিস্টিকস খাতের সম্ভাবনার বিষয়টি স্বচ্ছভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে এই ফান্ড সংযোজনার মাধ্যমে।”
বর্তমান সময়ে পেপারফ্লাইতে ২০০০ কর্মী কাজ করেন এবং এই প্রতিষ্ঠানটি সারা দেশে ২০০টি পয়েন্টে দেশব্যাপী ডেলিভারি সার্ভিস দিয়ে থাকে। কোম্পানিটির হেডকোয়ার্টার এবং কেন্দ্রীয় ওয়্যারহাউজ ঢাকায় অবস্থিত।