পরামর্শক দিয়ে ইন্টারনেটের ব্যয়কাঠামো যাচাই করেছে সরকার। ফলে মোবাইলের কলরেটের পার্থক্য থাকবে না। মোবাইল ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন কোনো দাম বেঁধে দেওয়া নেই। ফলে মোবাইল ফোন অপারেটররা নিজেরা নিজেদের মতো করেই ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণ করছে। ইন্টারনেটের দাম বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি মোবাইল ফোনে যেকোনো নম্বরে কল করার খরচ একই হারে নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে এখন বিভিন্ন অপারেটরের মধ্যে কল করার মূল্যে যে পার্থক্য আছে, সেটি আর থাকবে না। এতে টেলিটকের মতো ছোট অপারেটররা বেশি লাভবান হবে। টেলিযোগাযোগ খাত-সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সভাপতিত্বে এ বৈঠক হয়।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) একজন পরামর্শকের মাধ্যমে ইন্টারনেট ডেটার মূল্য বিষয়ে একটি কস্ট মডেলিং এরই মধ্যে শেষ করা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। এর মাধ্যমে মোবাইল ফোন অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে। কস্ট মডেলিং পদ্ধতি হলো একটি সেবা দিতে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কত খরচ হয়, সেটি বের করার পদ্ধতি। সেবার মূল্য নির্ধারণে বিভিন্ন গাণিতিক সমীকরণ কস্ট মডেলিংয়ে ব্যবহার করা হয়। ভয়েস কলের দাম নির্ধারণে আইটিইউর একজন পরামর্শক দিয়ে ২০০৮ সালে একটি কস্ট মডেলিং করেছিল বিটিআরসি। সেই মডেল অনুসারে প্রতি মিনিট ভয়েস কলের সর্বোচ্চ মূল্য ২ টাকা আর সর্বনিম্ন মূল্য ২৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বর্তমানে মোবাইল ফোন অপারেটরের নিজেদের গ্রাহকদের (অন-নেট) মধ্যে কথা বলার সর্বনিম্ন খরচ ২৫ পয়সা, অন্য অপারেটরে (অফ-নেট) ফোন করার সর্বনিম্ন খরচ ৬০ পয়সা। আর যেকোনো মোবাইলে ফোন করার সর্বোচ্চ খরচ ২ টাকা।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) গত বছর অন-নেট ও অফ-নেট কলের মধ্যে পার্থক্য কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছিল। সে সময় কল রেটের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সীমা যথাক্রমে ৩৫ পয়সা ও ১ টাকা ৫০ পয়সা করতে চেয়েছিল। তবে তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার।
বিটিআরসির বিশ্লেষণে জানা যায়, কল রেট পরিবর্তনের নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ছোট অপারেটর থেকে বড় অপারেটরে কল করার খরচ কমবে। যেমন টেলিটক থেকে গ্রামীণফোনে কল করতে বর্তমানে ন্যূনতম খরচ ৬০ পয়সা। কিন্তু গ্রামীণফোন থেকে গ্রামীণফোন নম্বরে ফোন করার খরচ অনেক কম। একক কল রেট হলে গ্রামীণফোন ও টেলিটকে কল করার ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য থাকবে না।
অপারেটরদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে গ্রামীণফোনের অন-নেট কলের গড় মূল্য ৪৪ পয়সা, আর অফ-নেট কলের মূল্য ১ টাকা ৫৬ পয়সা। রবির গড় অন-নেট কলের মূল্য ৩৯ পয়সা ও অফ-নেটে ৯১ পয়সা। বাংলালিংকের অন-নেট ৩৯ পয়সা ও অফ-নেট ৮৯ পয়সা এবং টেলিটকের অন-নেট ৩৪ পয়সা ও অফ-নেট ৮৬ পয়সা। গ্রামীণফোন থেকে ৭৫ শতাংশ কল হয় অন-নেটে, ২৫ শতাংশ কল অফ-নেটে হয়। রবির ৫৮ শতাংশ কল অন-নেটে ও ৪২ শতাংশ কল অফ-নেটে; বাংলালিংকের ৫৫ শতাংশ কল অন-নেটে ও ৪৫ শতাংশ কল অফ-নেটে এবং টেলিটকের ২০ শতাংশ কল অন-নেটে এবং ৮০ শতাংশ কল অফ-নেটে হচ্ছে।
বিটিআরসির সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে সক্রিয় মোবাইল সংযোগের সংখ্যা সাড়ে ১৪ কোটি। আর ইন্টারনেট সংযোগের সংখ্যা ৮ কোটির বেশি।
previous post