বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত স্টার্টআপগুলোর একটি বাংলাদেশি অগমেডিক্স। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পাঁচটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশি বিদেশি অনেক বিনিয়োগ পেয়েে আলোচনায় এসেছে।
যখন একটি স্টার্টআপ একাধিক ‘মার্কেট লিডার’ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিনিয়োগ পায় সেটি তখন ওই স্টার্টআপের জন্য নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে বিনিয়োগ বাজারে বিবেচিত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবার-এ মার্কিন বিনিয়োগ বাজারের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগই প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যাপক পরিচিতি পেতে সহায়তা করেছে।
সাম্প্রতিক আলোচিত প্রতিষ্ঠান অগমেডিক্স কাজ করছে গুগল গ্লাস নিয়ে এবং প্রতিষ্ঠানটির দাবী- এক্ষেত্রে তারাই বিশ্বে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইয়ান কাজী শাকিল একজন বাংলাদেশী বংশদ্ভুত মার্কিনী যার বাবা-মা বাংলাদেশেই নিজেদের আলাদা ব্যবসা পরিচালনা করছেন। অগমেডিক্সের ব্যাক-এন্ড সাপোর্টও বাংলাদেশ থেকেই পরিচালিত হয়।
অগমেডিক্স সম্প্রতি ১৭ মিলিয়ন ডলারের স্ট্রাটেজিক ইনভেস্টমেন্ট পেয়েছে। ২৫ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটি জানায়- সাটার হেলথ, ডিগনিটি হেলথ, ক্যাথলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভস (সিএইচআই) এবং ট্রাই হেলথ ইনকর্পোরেশনসহ মোট পাঁচটি শীর্ষ মার্কিন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এই বিনিয়োগ করে। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ১ লাখেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মীর প্রতিনিধিত্ব করে যারা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে লাখ লাখ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত।
নতুন এই বিনিয়োগের মাধ্যমে অগমেডিক্স এবং এর বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা খাত ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে গুগল গ্লাস ব্যবহার করতে পারবেন। গুগল গ্লাসের এমন বিস্তৃত ব্যবহার আগে ঘটেনি।
চিকিৎসাসেবায় গুগল গ্লাসের ব্যবহার ডাক্তারদের ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করে বাধ্যতামূলক তালিকা প্রস্তুতি ও ডকুমেন্টেশনের হাত থেকে রেহাই দিয়ে আরও নিবিড়ভাবে রোগীদের সেবা প্রদানের সুবিধা করে দিচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানটি দাবী করেছে।
অগমেডিক্স-এর প্রধান নির্বাহী র্কমকর্তা শাকিল বলেন, “স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে কিছু যুগোপযোগী স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করতে পেরে আমরা গর্বিত”।
অগমেডিক্স বর্তমানে প্রায় সবকটি রাজ্যেই কয়েকশ’ প্রাইমারি কেয়ার ডাক্তার, বিশেষজ্ঞ এবং সার্জনদের সেবা দিচ্ছে যারা এক সঙ্গে প্রতিদিন প্রায় ৫০০০ রোগী দেখেন।
ইউএস ভিত্তিক গুগল গ্লাস স্টার্টআপ ও স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি ‘অগমেডিক্স’ আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৭ হাজারেরও বেশি জনবল নিয়োগের ঘোষণা দেয় এ বছর। গত বছরের মার্চে সবিশাল পরিকল্পনার কথা জানায় অগমেডিক্স।
অগমেডিক্সের কো-ফাউন্ডার পেলু ট্র্যান এবং অরবিমেড-এর ভেঞ্চার পার্টনার স্টিভেন ইয়েসিয়েছেরের উপস্থিতিতে ও অগমেডিক্স বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আহমাদুল হকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কোম্পানির নিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে অগমেডিক্সের কো-ফাউন্ডার পেলু ট্র্যান এবং কোম্পানির শীর্ষ বিনিয়োগকারী অরবিমেড-এর ভেঞ্চার পার্টনার স্টিভেন ইয়েসিয়েছ বাংলাদেশ সফর করছেন এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোম্পানির নিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছেন। পরবর্তী ৫ বছরে অগমেডিক্স ও এর পার্টনাররা ঢাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশ থেকে প্রচুর জনবল নিয়োগ দিবে যারা আমেরিকার ডাক্তারদের রিমোট পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
অগমেডিক্সের কো-ফাউন্ডার পেলু ট্র্যান বলেন, ‘অগমেডিক্সের পরিচালনা কাজে ও আমেরিকার ডাক্তারদের সঙ্গে মেধাবী স্ক্রাইবদের সংযোগ ঘটাতে বাংলাদেশ একটি আদর্শ জায়গা।’
তিনি আরো বলেন, “পুরো বাংলাদেশ জুড়েই ইংরেজি প্রচলিত আছে এবং দেশের ৫০ শতাংশ জনসংখ্যাই ২৫ বছরের নিচে ও খুবই প্রযুক্তি পারদর্শী। মেধা, যুব ও শিক্ষার এই সমন্বয় শক্তিশালী বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং-এর জন্য সীমাহীন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।’
এ বছরের জানুয়ারিতে অগমেডিক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইয়ান শাকিল জানান, এ বছর ও আগামী বছরে স্ক্রাইব পেশায় নতুন ২ হাজার কর্মী নেবে অগমেডিক্স। কাজের ক্ষেত্র বাড়াতে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গুগল গ্লাস স্টার্টআপ ও স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি অগমেডিক্স।
ইয়ান শাকিল বলেন, ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের অগমেডিক্স। তিনি ও আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতা পেলু ট্র্যান মিলে অগমেডিক্সকে নিয়ে যাচ্ছেন নতুন লক্ষ্যের দিকে। এ উদ্যোগটি যুক্তরাষ্ট্রের বড় পাঁচটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে বড় একটি ভবনে চলছে অগমেডিক্সের কার্যক্রম। এ ভবনটিকে ইতিমধ্যে বেসরকারি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। দেশে অগমেডিক্সের কার্যক্রম আরও বাড়াতে ঢাকার বাইরে কয়েকটি শহরে অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও জনবল নিয়োগের কথা ভাবছে অগমেডিক্স কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশে নতুন স্টার্টআপ তৈরির পরিকল্পনা প্রসঙ্গে ইয়ান শাকিল বলেন, বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অগমেডিক্স। বর্তমানে বাংলাদেশসহ অন্যান্য স্থানে নতুন নতুন ধারণা নিয়ে অনেক স্টার্টআপ তৈরি হচ্ছে। অগমেডিক্সের বর্তমান লক্ষ্য হচ্ছে বিশাল চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করা। বিশেষ করে বাংলাদেশে। অগমেডিক্সের সেবা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েও এগোচ্ছে। এতে উন্নত ফিচার, চিকৎসককে যুক্ত করার মতো কাজ হবে।
অগমেডিক্সে গবেষণা, সফটওয়্যার উন্নয়ন, বিশ্লেষণসহ নানা কাজ করছেন বাংলাদেশের তরুণেরা। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জন্য এ ধরনের নানা কাজ হচ্ছে ঢাকায় বসে। ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৭ হাজার স্ক্রাইব নিয়োগের পাশাপাশি তাঁদের প্রশিক্ষণ ও কাজের সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। গত মে মাস থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু দক্ষ স্ক্রাইব তৈরি হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আরও স্ক্রাইব তৈরি করে সেবা দেওয়ার লক্ষ্য তাঁদের।
ইয়ান শাকিল জানান, স্ক্রাইবরা মূলত দূর থেকে চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার কাজটি করবেন। চিকিৎসক যখন গুগল গ্লাস চোখে রোগী দেখেন, তাঁর সামনে রোগীর তথ্য সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করার দায়িত্ব থাকবে স্ক্রাইবের। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসাসেবার তথ্য বাংলাদেশের এই স্ক্রাইবরা করবেন।
ইয়ান শাকিল জানান, যাঁরা অগমেডিক্সে কাজ করেন তাঁদের সম্মানজনক বেতন, বিভিন্ন বোনাস, ছুটি, চিকিৎসা ভাতাসহ বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। স্ক্রাইবরা সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন কাজ করেন, আর এখানে অফিসের কাজ বাসায় নিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যাপার নেই। তাঁদের ভালো পারিশ্রমিক, হেলথ ইনস্যুরেন্স, উৎসব ভাতা, খাবার ও যাতায়াত-সুবিধা দেওয়া হয়। একজন স্ক্রাইব ভবিষ্যতে সিনিয়র স্ক্রাইব, স্ক্রাইব ট্রেইনার, টিমলিডার, কোয়ালিটি স্পেশালিস্ট, ম্যানেজার থেকে শুরু করে আরও অনেক উচ্চ পদে যেতে পারেন।
আবেদনে যে যোগ্যতা লাগবে
স্নাতক পাস বা তার চেয়ে বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা স্ক্রাইব পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া অগমেডিক্সে যোগ্যতার ভিত্তিতে অন্যান্য পদও রয়েছে। ইংরেজি, গণিতসহ যেকোনো বিষয়ের পারদর্শীরা আবেদন করতে পারবেন। তবে ইংরেজি ভালো জানতে হবে। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। এগুলো পার হয়ে তবে চূড়ান্ত নিয়োগ পাওয়া যাবে। স্ক্রাইবরা সাধারণত বাংলাদেশে বসে যুক্তরাষ্ট্রের সেবা দেবেন বলে যেকোনো শিফটে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। এ কাজ শেখার পর তাঁর উন্নতির নানা সুযোগ আছে। সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয় বলে এ খাতে তিনি দক্ষ হয়ে উঠে দেশের চিকিৎসা খাতে দক্ষ কর্মী হয়ে উঠতে পারবেন। প্রচলিত নিয়মে সব ধরনের সুবিধাসহ বেতন-ভাতা পাবেন স্ক্রাইবরা।
আবেদনের লিংক https://www.augmedix.com/jobs/