TechJano

ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন

ই-কমার্স ব্যবসা কি , কেন করবেন , কিভাবে শুরু করবেন এই কথাগুলো বারবার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে হবে এই খাতে নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে । প্রতিটা ব্যবসার মূলে একটা কথা থাকে , তা হচ্ছে R&D । এর পুরো অর্থ হচ্ছে রিসার্চএন্ড ডেভেলপমেন্ট । একজন উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীর জীবনে সফলতার গল্প যেমন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে ঠিক তেমনি সফল না হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে । কিন্তু এই R&D যদি আপনি ব্যবসার শুরু এবং ব্যবসা শুরু করার পরেও ব্যবসা চলাকালীন সময় সঠিকভাবে প্রয়োগ না করেন, তবে আপনি সফল হওয়ার জন্যে যথেষ্ট পরিমান নিজে পরিশ্রম ও চেষ্টা করছেননা তা আপনাকেই বুঝে নিতে হবে ।

ই-কমার্স ব্যবসাটি কি ? 

এতগুলো প্রশ্নবোধক চিহ্ন দেয়ার একটাই কারণ হলো এর ব্যাপকতা, আপনার জিজ্ঞাসা ব্যাপক থাকা উচিত । ইলেকট্রনিক কমার্স বুঝায় সোজা কথায় ই-কমার্স। অনলাইনে কেনাকাটা করবেন , অনলাইনে আপনার ক্রেতা একটি প্রোডাক্ট পছন্দ করবে এবং তা কেনার আগ্রহ দেখাবে সেই মানুষ এবং যখন সেই ব্যক্তি আপনার প্রোডাক্ট কেনার জন্যে অনলাইনে টাকা প্রদান করলো , ঠিক তখন থেকে আপনার দায়িত্ব বেড়ে গেলো কয়েকগুন । প্রথমেই অনলাইনে পেমেন্ট কনফার্ম করতে হচ্ছে আপনাকে , তারপর ক্রেতার পছন্দের জিনিসটি আপনার স্টক থেকে খুঁজে বের করে ভালো একটি প্রোডাক্ট ক্রেতার ঠিকানায় ডেলিভারি করতে হবে সঠিকভাবে । এখানেই  উদ্যোক্তার দায়িত্ব সমাপ্ত নয় , কাজ এখান থেকে আরও নিবিড়ভাবে শুরু হয় । ক্রেতা প্রোডাক্ট পাওয়ার পর ক্রেতার সার্ভিস এবং প্রোডাক্ট সম্পর্কে অনুভূতি কি জানতে হবে এবং এই ক্রেতা যেন পরবর্তীতেও আরও প্রোডাক্ট কেনে সেই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং ভালো কাস্টমার সাপোর্ট দিতে হবে , সাথে করে নতুন কোন এক্সুসিভ প্রোডাক্ট আসলে তা ক্রেতাকে সৌজন্য মেসেজের মাধ্যমে জানাতে হবে ।

কেন করবেন ই-কমার্স ব্যবসা

আপনি যথেষ্ট পরিমান দায়িত্বশীল মানুষ ? মানুষকে ভালো সার্ভিস কিভাবে দিতে হয় , প্রোডাক্ট নিয়ে আপনার চিন্তাভাবনা অন্য অনেকের থেকেই খুব সুচারুভাবে সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হবেন, তবেই এই ব্যবসা নামতে পারেন । তবে কিন্তু আছে !! !!

কয়েকবছর এই ব্যবসা সম্পর্কে আপনার বিশদ একটা ধারণা রাখতে হবে । প্রায়োগিক জ্ঞান এবং অর্থ এই দুটোর কোন একটি কম হলেই এই ব্যবসায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটুকু আপনার কমে যাবে ।

সেইজন্যে ভাবুন ! আবার ভাবুন ! আবার ভাবুন ! আমি বলবো আবার ভাবুন !

সময় নিন আপনার কি কি বিষয় জানা কম আছে যা এই ব্যবসায় নামার আগে আপনাকে কঠিন অবস্থার সম্মুখীন করতে পারে । টেকনিক্যাল বিষয় , প্রোডাক্ট সোর্সিং , প্রোডাক্ট ডেলেভারি , পেমেন্ট , কমিনিকেশন , রিসার্চ , ডেভেলপমেন্ট , কাস্টমার সাপোর্ট , মার্কেটিং , সময়ের সাথে পলিসি ঠিক করা , আইনি বিষয়ে নিজে কতটুক জানেন এসব বিষয় আপনাকে জানতে হবে ।

এখন হয়ত প্রশ্ন আসতে পারে আমি এইসব ব্যাপারে দক্ষ লোক রাখবো । তবে বলবো , সেই দক্ষ লোককে চেনার জন্যেও আপনার দক্ষতা থাকতে হবে এবং দক্ষ থাকলেও আপনাকে ব্যবসার পুরো দিক সম্পর্কে আসলেই ভালো কিছু বিষয় এবং অবস্থানগত বিষয় ভালোভাবে জানতে হবে । সেটাই এই ব্যবসায়ের জন্যে মূল চালিকাশক্তি ।

কিভাবে শুরু করবেন ই-কমার্সব্যবসা

ব্যবসা শুরু করার আগে কয়েকটি বিষয় আপনাকে অনেক গুরুত্বের সাথে চিন্তা করতে হবে । সেই বিষয়গুলো হলোঃ

১।আপনি কি প্রস্তুত এই ব্যবসার জন্যে

আপনি এই ব্যবসায় আসতে আর্থিক এবং মনগতভাবে প্রস্তুত কিনা । আপনার কাছে কি আসলেই যথেষ্ট পরিমান  অর্থের ব্যবস্থা আছে । এবং ব্যবসার চ্যালেঞ্জিং মুহূর্তগুলো মোকাবেলার মত যথেষ্ট  পরিমান মনোবল আছে । নিজের সাথে কথা বলুন এবং ভাবুন । ভাবুন এবং আবার কথা বলুন । নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে জানুন । আপনি আসলে কি করতে পারেন এবং কি পরিমান পদক্ষেপ কতটুকু করতে পারবেন সেই বিষয়ে পুরো একটি গ্রাফ কিংবা ছক করুন ।

২।কি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে চান         

কি ধরণের প্রোডাক্ট মূলত বিক্রি করবেন সেই বিষয়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করুন । একসাথে কতগুলো প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করা আপনার পক্ষ্যে সম্ভব । মানুষ আসলে কি ধরণের প্রোডাক্ট  কিনতে চায় সেই প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করা প্রোডাক্টগুলো কি সহজে সংগ্রহ করা যাবে নাকি না । যদি  সম্ভব হয় তবে কত কম খরচে তা সংগ্রহ করা যাবে তা ঠিক করতে হবে এবং সংগ্রহ করা আপনার পক্ষে অনেক কঠিন হলে কত সহজে সংগ্রহ করা যায় খেয়াল করতে হবে ।

৩।প্রোডাক্ট এরখরচ এবং পরিবহন খরচ

অল্প সময়ে ভালো প্রোডাক্ট কিভাবে আনা যাবে ও কত কম খরচ পরবে প্রোডাক্ট আনতে তা খেয়াল রাখতে হবে । মনে রাখতে হবে প্রোডাক্ট যত কম দামে আপনি কিনতে পারবেন ও পরিবহন খরচ যত কম হবে আনতে, আপনার খরচ মূলত তত কমবে এবং আপনি তত কম মূল্যে ক্রেতার কাছে বিক্রি করতে সক্ষম হবেন প্রোডাক্ট । আর এই খরচ যত কমাতে পারবেন প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ঠিকে থাকা আপনার পক্ষে তত বেশি সম্ভব । ক্রেতার কাছে ততবেশি আপনি কাছে পৌঁছাতে পারবেন । কত বেশি লাভ করতে পারবেন তা নয় বরং কত কম দামে ভালো প্রোডাক্ট কিনে কত কম লাভে বিক্রি করতে পারবেন তা লক্ষ্য থাকবে ।

৪।প্রোডাক্ট এর গুণগত মান রক্ষা

প্রোডাক্ট ভালো এবং সুন্দরভাবে সুরক্ষিত উপায়ে পৌঁছে দিতে সক্ষম হতে পারা ব্যবসার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ । কত সময় প্রোডাক্ট ভালো থাকবে এবং কিভাবে রাখলে ভালো অবস্থায় সংরক্ষিত থাকবে তা নিজেকে সঠিক উপায়ে ঠিক  করতে হবে । প্রোডাক্টকে ভালোভাবে প্যাকিং করতে হবে , যাতে ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে । প্রোডাক্ট সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে । ক্রেতা যেই ধরণের প্রোডাক্ট বিষয়ে কথা বলা হয়েছে সেই প্রোডাক্ট অক্ষুন্নভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ।

৫।প্রতিষ্ঠানের নাম নির্ধারণ ও আইনি কাজ

প্রতিষ্ঠানের নাম নির্ধারণ করতে হবে । যদি বিশেষ কোন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে থাকে তবে সেই প্রোডাক্ট এর নামে প্রতিষ্ঠানের নাম খোলা যায় , আর যদি বেশকিছু প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে থাকে তবে প্রোডাক্টগুলোর সাথে মানানসই সেইরকম ভাবে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিক করতে হবে এবং ট্রেডমার্ক , লোগো সহ যাবতীয় আইনি কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে । নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমসাময়িক শব্দ কিংবা কিওয়ার্ড নিয়ে দারুণভাবে সময়কে পর্যবেক্ষণ করতে এবং মানুষ কোন শব্দ পছন্দ করে তা নিয়ে আলোচনা – চিন্তা করতে হবে । তাহলেই ভালো নাম মনে আসবে । মনে রাখতে বিজনেজ দাঁড় করানোর প্রথম পদক্ষেপই হচ্ছে নাম । নাম দিয়েই মানুষ আপনার প্রতিষ্ঠানকে চিনবে । নাম নির্বাচন ও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । মনে রাখতে হবে “নেমইজব্র্যান্ড”, তারপর মানুষের কাছেই আপনি আপনার কোম্পানির ভালো সেবা নিয়ে খুব সহজে ভালো স্থান করতে পারবেন  ।

৬।ডোমেইন এবং হোস্টিং নির্বাচন

ডোমেইন এবং হোস্টিং নির্বাচন করতে হবে । ডোমেইন নিয়ে রিসার্চ করতে হবে কি ধরণের ডোমেইন নাম অর্থাৎ ওয়েবসাইটের ঠিকানা কি হলে মানুষ খুব পছন্দ করবে। সহজে পড়া যায় এবং সুন্দর একটা নাম রাখতে হবে । যেই নাম দিয়েই আপনি ক্রেতার কাছে  আকর্ষণ করতে পারবেন আপনার সার্ভিসের বিষয়ে। আশেপাশে পরিচিত সুন্দর শব্দগুলো  থেকেই সঠিক উপায়ে নাম নির্ধারণ করতে হবে । একটা নাম এখানে অনেক কিছু অর্থ বহন করে । এরপর ডোমেইন প্রোভাইডাররা পুরো কন্ট্রোল প্যানেল দিচ্ছে নাকি সেটা খেয়াল রাখতে হবে। আপনাকে সিক্রেট কোড দিচ্ছে নাকি সেটা দেখতে হবে ।    তারপর খেয়াল রাখতে হোস্টিং এর ব্যাপারে । কত পরিমান ডাটা এবং কত ব্যান্ডউইথ নিয়ে আপনাকে কাজ করতে হবে সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে । কতজন আপনার সাইট একসাথে ভিজিট করতে সক্ষম তার সম্যক একটা ধারণা অবশ্যই আপনাকে রাখতে হবে আর তা না হলে WebsiteTemporaryUnavilable এর সমস্যায় পরতে হতে পারে যার ফলে আপনার সাইটের সুনাম ধরে রাখতে পারবেন না , CPUUse Limitএর সমস্যার জন্যে এটি হয় অর্থাৎ  বেশি ভিজিটর আসলে এই সমস্যায় পরতে হয় এবং সেই হিসেব করেই আপনাকে তাই নিতে হবে আপনার পছন্দমত হোস্টিং  প্ল্যান । ডেডিকেটেড হোস্টিং সার্ভার  প্ল্যান নিতে হবে । লিনাক্স , ভিপিএস কিংবা  ক্লাউড হোস্টিং প্ল্যানের মতন আপনাকে একটা প্ল্যান নিতে হবে আপনার হোস্টিং সাপোর্ট প্রতিষ্ঠান যেইরকম প্ল্যান সেবা দিয়ে থাকে। শেয়ারড হোস্টিং নেয়া যাবেনা , এতে করে সাইট স্লো হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট থাকে কারণ এই হোস্টিং এ অনেকের একাধিক সাইট শেয়ারড অবস্থায় থাকে আর তাই সাইট স্লো হয় । তাই হাইস্পিড ,খরচ , আপটাইম , সার্ভিস সবকিছু খেয়াল করে প্ল্যান নিতে হবে। ব্যাকআপ কতদিন দিবে এই প্ল্যানে সেই ব্যাপারেও আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে । প্ল্যানে ব্যাকআপ কি কয়েকদিন দেয়ার কথা থাকবে নাকি সপ্তাহ নাকি মাস থাকবে সেই ব্যাপারে আপনার ধারণা রাখতে হবে  । SSL সার্ভিস নেয়া যায়, আর সাইটের নিরাপত্তার জন্যে SITE LOCK সার্ভিস এবংহোস্টিং এব্যবহার করতে পারেন CDN সার্ভিস ।

৭।ওয়েবসাইট এর প্ল্যাটফরম তৈরি

ওয়েবসাইট এর প্ল্যাটফরম কি হবে এবং কোনটি সহজ সবকিছু বিবেচনা করে CMS কিংবা কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সিলেক্ট করতে হবে ।

কয়েকটি উল্লেখযোগ্য (CMS কিংবা কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম )

ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হিসেবে এটি ব্যবহার করা যায় ।

বিভিন্ন  ধরণের জনপ্রিয় ফিচার রয়েছে ই-কমার্স এর জন্যে জনপ্রিয় এই ফ্রি

ওপেনসোর্সম্যাজেন্টো’তে ।

সুন্দর এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনের জন্যে এটি বেশ জনপ্রিয়।

একটি ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন এটি ।

৮।কিওয়ার্ড রিসার্চ-

কিওয়ার্ড রিসার্চ একজন উদ্যোক্তাকে তার নেয়া উদ্যোগের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে নেবে । কিওয়ার্ড নিয়ে নিজের  সম্ভাব্য প্রোডাক্ট নিয়ে রিভিউ লিখে ব্লগ করা যেতে পারে । সার্চ ইঞ্জিনে যেসব প্রোডাক্ট কিওয়ার্ড নিয়ে মানুষ বেশি সার্চ করে সেইসব কিওয়ার্ড নিয়ে ই-কমার্স সাইটের ব্লগে কাজ করা উচিত নিজের প্রোডাক্ট এর ওপর । এতে করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং ব্লগের মাধ্যমে ক্রেতার কাছে নিজের কোম্পানির প্রোডাক্ট সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরা যাবে । পেইড টুল লংটেল প্রো ( Long tail pro v3) সফটওয়্যারটি  www.longtailpro.com/ থেকে কিনে ব্যবহার করা যায় এবং পেইড ও ফ্রি টুল Moz দিয়ে  কিওয়ার্ড রিসার্চ করা যাবে ।

৯। মার্কেটিং –

যত ভালো অবস্থাই থাকুক প্রতিষ্ঠানের , আপনি ঠিকমত যদি মার্কেটিং করতে না পারেন তবে আপনি আপনার কাস্টমারদের কাছে পৌঁছাতে পারবেন না । আর কাস্টমারদের কাছে পৌঁছাতে না পুরো ব্যবসাই লাভের দেখা পাবেনা । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সঠিক ব্যবহার করতে হবে , ফেসবুক , টুইটার সহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেইড বিজ্ঞাপন করতে হবে । পেজ প্রমোট করতে হবে , সাথে পেজ থেকে বুস্টপোস্ট করতে হবে । এছাড়া এসইও, ইমেইল মার্কেটিং , এসএমএস  মার্কেটিং , পোস্টারিং , লিফলেট , ডিজিটাল বিজ্ঞাপন সবকিছুর নিয়ে চিন্তা করতে হবে একজন উদ্যোক্তাকে তার বাজেট অনুযায়ী । বাজেট যেমন হবে সেইরকম চিন্তা রেখে মার্কেটিং করতে হবে । তবে আপনাকে ধরে রাখতে হবে মূল ব্যবসায়ের ৩৫-৪৫% এর মতন অর্থ ব্যবস্থা রাখতে হবে নূন্যতম মার্কেটিং এর জন্যে । এতে করে ক্রেতার কাছে সহজে আপনি আপনার প্রোডাক্ট নিয়ে পৌঁছাতে পারবেন ।

১০।পেমেন্ট সিস্টেম –

পেমেন্ট প্রসেস কি হবে সেই সম্পর্কে ভালোরকম ধারণা পোষণ করতে হবে একজন নতুন উদ্যোক্তাকে । ক্যাশ অন ডেলেভারি এবং অনলাইন পেমেন্ট দুইটি মাধ্যমের ব্যবস্থা রাখতে হবে । ক্রেতাকে সময়ের সাথে সাথে  অনলাইনে পেমেন্ট করে কেনাকাটায় আগ্রহী করে তুলতে চেষ্টা করতে হবে । এতে করে কেনাকাটার পদ্ধতি এবং লেনদেন অনেক সহজতর হবে এবং ক্যাশ অন ডেলেভারি প্রসেস পুরোপুরি ব্যবস্থা করতে হবে । SSL ব্যবস্থা রাখা উচিত সাইটে যাবতীয় অনলাইন পেমেন্ট নিরাপত্তা রাখার পাশাপাশি ।

১১।প্রোডাক্ট ডেলিভারি-

প্রোডাক্ট ডেলিভারির সময় ট্রেকিং পদ্ধতি চালু করতে পারলে খুব ভালো হয়। প্রোডাক্ট এখন কোন এলাকায় আছে তা যদি জানা যায় তবে ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে এক দারুণ সমন্বয় ঘটবে । প্রোডাক্ট ঠিকমত ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে কত সময় লাগবে তা সঠিক নিরূপণ করে ক্রেতাকে জানানো সম্ভব হলে তা ক্রেতার কাছে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে কেনার ব্যাপারে দারুণ আগ্রহী করে তুলবে । প্রোডাক্ট ডেলিভারির সময় খুব সুন্দরভাবে কোম্পানির লোগোর মোড়ানো পেপার দিয়ে প্যাকিং করে দিতে হবে এবং প্রোডাক্ট এর গুণগতমান যেন ভালো থাকে তা লক্ষ্য রাখতে হবে । তাহলে ক্রেতা ভালো প্রোডাক্ট পাবে ।

১২।কাস্টমার সাপোর্ট-

অনেক সময় প্রোডাক্ট নিয়ে অনেক সমস্যা হয় । সেই বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্যে ২৪ ঘণ্টা  কাস্টমার সাপোর্ট ব্যবস্থা করতে হবে ,যা ক্রেতার সন্তুষ্টি অনেকাংশে বৃদ্ধি করবে । ক্রেতার সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারা ব্যবসার এক গুরুত্বপূর্ণ দিক । ক্রেতা কাস্টমার সাপোর্ট পেয়ে সন্তুষ্ট হলেই পরবর্তীতে সেই ব্যক্তি  একই প্রতিষ্ঠান থেকে আগ্রহী হবে প্রোডাক্ট কিনতে । কোন সমস্যা হলো কিনা ডেলেভারি নিয়ে তা  জেনে নেওয়া এবং কি ধরণের সেবা ক্রেতা চাচ্ছেন তা সম্পর্কে জেনে নিবে । ভালো কাস্টমার সাপোর্ট দেই যেই প্রতিষ্ঠান সেই প্রতিষ্ঠানের এইদিক দিয়ে মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে । কারণ ক্রেতা সন্তুষ্ট হয় এবং সাথে আরও কয়েকজনকে প্রতিষ্ঠানের ভালো সার্ভিসের ব্যাপারে জানায় মানুষকে । সবকিছুই একটা ভালো দিকে এই ক্ষেত্রে ।

১৩।টিম ম্যানেজমেন্টঃ

কোন বিষয়ে কোন মানুষ দক্ষ সেটা যদি একজন উদ্যোক্তা বুঝতে না পারেন তাহলে সমস্ত প্রসেস চেইন ঠিকমত কাজ করবেনা । সাপ্লাই থেকে শুরু করে পুরো প্রসেস এবং পেমেন্ট , প্রোডাক্ট সোর্সিং সব বিষয়গুলো একটি ডিপার্টমেন্ট আরেকটি ডিপার্টমেন্ট এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত । প্রতিটি পদক্ষেপ তখনই হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সফল যখন প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট এর লোক ঠিকমত কাজ করে দক্ষতার সাথে । এইজন্যে ট্রেনিং সেশন প্রতিষ্ঠানে চালু রাখা উচিত । কারো পারফর্ম নেমে গেলেই তাকে ট্রেনিং সেশনে পাঠিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি নিয়ে কাজ শেখানো এবং দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর কাজ করা দরকার । সমস্যা বুঝতে হবে টিমের । কে আসলে কোথায় বাঁধা পরছে ,সেই জায়গায় কাজ করতে হবে । তবেই প্রতিষ্ঠান ভালো করবে ।

১৪।বাজেট নির্ধারণঃ

সব উদ্যোগ ও কাজগুলো সম্পূর্ণ করতে চাই একটি সুনির্দিষ্ট বাজেট । কখন, কোথায়, কিভাবে, কত পরিমাণ বাজেট নির্ধারণ করতে হবে তার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে । প্রতিষ্ঠান শুরুর পূর্ববর্তী রিসার্চ করার সময়ই ব্যাপারগুলো উঠে আসে । যেই পরিমান অর্থ নিয়ে প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর দরকার মনে করছেন ,ঠিক সেই পরিমান টাকা আপনার সাপোর্টিং বাজেট হিসেবে রাখুন । যাতে প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর সময় কিংবা দাঁড় করানোর পরেও কোনরুপ সমস্যার সম্মুখীন হলে সেই সাপোর্টিং বাজেট আপনাকে সহায়তা করতে হবে । এটা অবশ্যই আমাদের দেশে উদ্যোক্তাদের ব্যবসার শুরুতেই ভাবা উচিত । ঠিক একই পরিমান বাজেট , যে বাজেট নিয়ে আপনি ব্যবসা করছেন সেটা কিভাবে খরচ করবেন কোন খাতে সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে । ৩৫-৪০ ভাগ বাজেটের টাকা মার্কেটিং , ৩৫-৪০ ভাগ প্রোডাক্ট ও প্রোডাক্ট কোথায় পাওয়া যায় , আনার বিষয়ে বাজেট ধরতে হবে  এবং কারিগরি দিক ও প্রতিষ্ঠান চালানো খরচ ২০-২৫ ভাগ বাজেট রাখতে হবে । বাজেটের আকারভেদে আপনার ইচ্ছেয় বিভিন্ন বিষয় বুঝে সেই হিসেবে সঠিকভাবে বাজেট রাখতে পারেন ।

ব্যবসার প্রতি ধাপ ব্যবসার সামনের দিক ঠিক করবে ।

সবাইকে শুভেচ্ছা, ভালো থাকবেন ।

লেখক : লেখক: নাজমুল হাসান মজুমদার, তথ্যপ্রযুক্তি লেখক

ইউরোপের ই-কমার্স ব্যবসা কেমন?  সুইডেনের ই-কমার্সের খুঁটিনাটি

ওয়েব ডিজাইনারদের জন্য দরকারি ১০ টিপস

ড্রয়েড ডেলিভারি সিস্টেম

ফেসবুকে পেজ বুস্ট করব কিভাবে? ফেসবুক বিজ্ঞাপন দেওয়ার উপায়

 

Exit mobile version