বিশ্বের সর্ববৃহৎ অন ডিম্যান্ড রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবার বাংলাদেশে আজ থেকে চালু করলো ‘সেফটি টুলকিট’। এই অপশনের মাধ্যমে যাত্রীরা উবারের সব সেফটি ফিচার সহজেই খুঁজে পাবেন অ্যাপের একটি নির্দিষ্ট স্থানে। যুক্তরাষ্ট্রে চালু হবার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে চালু হলো উবারের এই ফিচারটি।
অভিনব প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি নতুন সেফটি টুলকিটটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন বাংলাদেশের যাত্রীরা সহজেই উবারের সেফটি ফিচারগুলো ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি পুরাতন এবং নতুন উভয় ফিচারগুলোর ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে এই টুলকিটটি। চালক ট্রিপ গ্রহণ করার সাথে সাথে অ্যাপের হোম স্ক্রিনে ভেসে উঠবে সেফটি টুলকিট অপশনটি, যা ট্রিপ শেষ হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।
বাংলাদেশে সেফটি টুলকিট চালু করার বিষয়ে উবারের প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট ডিরেক্টর শচীন কানসাল বলেন, “উবারে যাত্রী ও চালকদের নিরাপত্তার বিষয়কে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। সে লক্ষ্যে আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার করে তাদের নিরাপত্তা জনিত বিষয়গুলো সমাধানে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের হাজার হাজার যাত্রীদের জন্য ‘সেফটি টুলকিট’ চালু করা আমাদের এই প্রচেষ্টারই একটি অংশ। আমাদের সেফটি ফিচারগুলো সম্বন্ধে সবাইকে আরো সচেতন করতে এবং এগুলোর সহজ ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা আমাদের প্ল্যাটফর্মটি আপডেট করেছি। সেফটি টুলকিটের অন্যতম একটি ফিচার ‘ট্রাস্টেড কন্ট্যাক্টস’। এই ফিচারটির সাহায্যে যাত্রীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের সকল ট্রিপ অথবা বাছায়কৃত কিছু ট্রিপের সম্পর্কে তাদের পরিবারের সদস্য ও কাছের মানুষদের জানাতে পারবেন।”
হাজার হাজার যাত্রীদের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে সেফটি টুলকিটটি। এবছরের মে মাসে ফিচারটি সর্বপ্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চালু করা হয়েছে।
নতুন ফিচার এবং বিনিয়োগসমূহ-
সেফটি সেন্টার:
- যাত্রীরা আইন প্রয়োগকারীদের সহায়তায় তৈরি সেফটি টিপসগুলো দেখতে পারবেন এবং আমাদের ইনস্যুরেন্স সুবিধা এবং কমিউনিটি গাইডলাইনস সম্পর্কে জানতে পারবেন।
- একটি নির্দিষ্ট স্থানে প্রধান নিরাপত্তা ফিচারসহ অন্যান্য সকল ফিচার পাওয়া যাবে, যা যাত্রীদের জন্য খুবই সহায়ক।
ট্রাস্টেড কন্ট্যাক্টস:
- যাত্রীরা আমাদের জানিয়েছেন যে আমাদের শেয়ার ট্রিপ ফিচার তাদেরকে এক ধরনের মানসিক স্বস্তি প্রদান করে। কিন্তু সচেতনতার অভাবে এবং সহজে দেখতে না পাওয়ার কারণে এই ফিচারটি তুলনামূলক কম ব্যবহৃত হয়।
- আমাদের নতুন ফিচারটি একজন যাত্রীকে তার ঘনিষ্ঠ পাঁচ জন ব্যক্তির সাথে নিয়মিতভাবে ট্রিপ শেয়ার করার অপশন প্রদান করবে।
- যাত্রীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ট্রিপ শেয়ার সেটিংস ঠিক করতে পারবেন। ট্রিপ শেয়ারিং সেটিংসের মধ্যে থাকছে সকল ট্রিপ শেয়ার, শুধুমাত্র রাতের ট্রিপ শেয়ার এবং কোনো ট্রিপ শেয়ার না করার অপশন।
- এখন থেকে আপনজনদের সাথে ট্রিপ শেয়ার করা আরও সহজ হবে এবং আপনার গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত সমস্ত খবরাখবর জানবেন আপনার কাছের মানুষজন এবং এই সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সময় গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে।
ইমারজেন্সি বাটন:
ইমারজেন্সি বাটন যাত্রীকে সরাসরি পুলিশ কন্ট্রল রুম নম্বর ৯৯৯ এ কল করার সুযোগ প্রদান করবে। এর ফলে জরুরি সময়ে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত প্রয়োজনে দ্রুততম সময়ে নিরাপত্তা পাওয়া সহজ হবে।
উবার বাংলাদেশের সর্বপ্রথম রাইডশেয়ারিং কোম্পানি, যারা ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে তাদের অ্যাপে সরকারের হেল্পলাইন নম্বর সংযুক্ত করে। যা যাত্রীদের জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ এ কল করার সুযোগ প্রদান করে। এই ফিচারটি উবার অ্যাপের সেফটি ফিচারকে আরও জোরদার করে। এছাড়াও যাত্রা শুরুর পূর্বে, যাত্রার সময়ে এবং যাত্রা শেষ হবার পরেও যাত্রী এবং চালকদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে উবার সর্বদা নতুন কিছু করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
নতুন ফিচারগুলি রাইডশেয়ারিংয়ে যাত্রী ও চালকের নিরাপত্তার মান আরও জোরদার করবে। যাত্রীদের নিরাপদ রাইড প্রদান করা, জিপিএস এর মাধ্যমে ট্রিপ ট্র্যাক করা এবং স্থানীয় পুলিশের সাথে সেফটি অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা।
প্রতিটি ট্রিপে যাত্রীদের নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং এই বিষয়ে স্বচ্ছতা নিয়ে আসতে উবার প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করছে। কোম্পানিটি তাদের অ্যাপে রিয়েল টাইম আইডি চেক, ইমারজেন্সি বাটন, শেয়ার স্ট্যাটাস অপশন, চালক ও যাত্রী উভয়ের জন্য টু ওয়ে রেটিং সহ আরও অনেক নতুন ফিচার যুক্ত করেছে, যা তাদের চালক এবং যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার একটি অংশ।
নিরাপত্তার বিষয়ে নতুন উদ্ভাবনের অঙ্গীকার থেকে কোম্পানিটি গত সপ্তাহে ল্যাটিন আমেরিকার সাও পাওলো-তে তাদের প্রথম টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার স্থাপন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে এবং এখানে শুধুমাত্র নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করা হবে। ব্রাজিলের এই ডেভেলপমেন্ট সেন্টারটি আধুনিক প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে সারাবিশ্বের নিরাপত্তার উন্নয়নে কাজ করবে। এখানে প্রায় ১৫০ জন বিশেষজ্ঞ বিশ্বব্যাপী কাজ করবে এমন ফিচার উদ্ভাবনের জন্য, এডভান্সড টেলিম্যাটিক্স, মেশিন লার্নিং, হাই স্কেল ডিস্ট্রিবিউটেড সিস্টেমস, রিয়েল টাইম ডাটা প্রোসেসিং, মোবাইল ডেভেলপমেন্ট সহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে কাজ করবেন।
উবার-এর লক্ষ্য সব জায়গায়, সবার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য পরিবহন ব্যবস্থা তৈরি করা। আপনি কীভাবে বাটনের এক চাপে যাতায়াতের জন্য একটি গাড়ি পেতে পারেন? এ সমস্যার সমাধান খুঁজতে আমাদের শুরুটা হয় ২০১০ সালে। ৮ বছর পর এবং ১০ বিলিয়ন ট্রিপ শেষে এখন আমরা বৃহত্তর একটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ শুরু করেছি, সেটি হচ্ছে অল্প গাড়িতে বেশি মানুষ যাতায়াতের ব্যবস্থা করে শহরে যানজট এবং দূষণ কমানো।