বাংলাদেশের ‘এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার’ সেক্টরে পরিচিত একটি নাম মো: সোলায়মান আহমেদ জীসান । তিনি ২০১১ সাল থেকে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার সেক্টরে নিরবিচ্ছিন্ন কাজ করছেন। বাংলাদেশের আই টি মার্কেটে ৩টি জনপ্রিয় এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার (ই-স্ক্যান, এভিজি, পান্ডা সিকিউরিটি) নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার আছে। বর্তমানে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় আই টি প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল ব্র্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেড’ এ ‘পান্ডা সিকিউরিটি’ এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার বিভাগে উর্ধতন কর্মকর্তা (প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট) হিসেবে কর্মরত আছেন।
তিনি প্রতিবেদকের সাথে বাংলাদেশে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারের অবস্থান এবং ক্যারিয়ার নিয়ে তার মতামত প্রকাশ করেছেন।
এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার সেক্টরে ক্যারিয়ার খুবই চ্যালেঞ্জিং ও মজার। অবশ্যই কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সম্পর্কে খুব ভালো ধারনা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
বাংলাদেশের এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার সেক্টর সম্পর্কে কিছু বলুন
জীসান: বাংলাদেশের কম্পিউটার মার্কেটে সফটওয়্যার ব্যাবসার সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার। আমরা জানি যে, সাইবার অপরাধের দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছে। এদেশের বেশিরভাগ কম্পিউটার ব্যাবহারকারী পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যাবহার করে, তারা নিরাপদ ইন্টারন্টে কিভাবে ব্যাবহার করতে হয় জানে না, যা খুশী তাই ডাউনলোড করে আর যে কোনো ফ্রি সফটওয়্যার ব্যাবহার করতে পারদর্শী। তাই, সাইবার অপরাধের ঝুঁকি এড়াতে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যাবহার অতীব গুরুত্বপূর্ন।
এন্টিভাইরাস কেন গুরুত্বপূর্ণ?
জীসান: ধরুন, আপনি বাসার বাইরে গেলেন দরজায় তালা দিয়ে কিন্তু বাসার দরজা জানালা সব খোলা। তাহলে কি আপনি নিরাপদ? অবশ্যই না। আপনি যেমন একটি ফ্রিজ কিনলে সাথে একটা ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার কিনেন, ডেস্কটপ কম্পিউটার কিনলে ইউ পি এস কিনেন ঠিক তেমনি আপনার পিসির তথ্য সুরক্ষায় এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার কিনতে হয়। পিসির চেয়ে আপনার তথ্যের মুল্য কিন্তু অনেক বেশি।
অ্যান্টিভাইরাসের ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার আছে?
জীসান: সবচেয়ে আশার ব্যাপার যেটা সেটা হল, আমাদের দেশের মানুষরা এখন অরিজিনাল সফটওয়্যার লাইসেন্স কিনতে শিখে গেছে। বাংলাদেশে এখন সব প্রসিদ্ধ আন্তর্জাতিক এন্টিভাইরাস কোম্পানীর ডিষ্ট্রিবিউটর আছে, রিসেলার আছে আবার সরাসরি প্রিন্সিপালও আছে। বাংলাদেশে একটি স্বনামধন্য কোম্পানী নিজস্ব এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার বের করে ইতোমধ্যে দেশ ও দেশের বাহিরে বাজারজাত করছে। সবাই যে যার মতো ভালো ব্যাবসা করছে। তাই, এই সেক্টরে কাজ করে এমন লোকের সংখ্যা নেহাতই কম নয়।
এই সেক্টরে ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার মতামত?
জীসান: ক্যারিয়ার খুবই চ্যালেঞ্জিং ও মজার। অবশ্যই কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সম্পর্কে খুব ভালো ধারনা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কারন, এই সেক্টরে প্রধানত কাজ হলো তিনটা।
১. মানুষকে ভাইরাস ও সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে সচেতন করা।
২. তারপর তাকে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যাবহার করতে বলা।
৩. এন্টিভাইরাস ব্যাবহারকারীদেরকে প্রয়োজনে সবসময় কাস্টমার সাপোর্ট দেয়া।
তাই, এন্টিভাইরাস টিমে ৩ ধরনের কাজ হয়।
১. প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট
২. সেলস এন্ড মার্কেটিং
৩. টেকনিক্যাল সাপোর্ট
এ কারনে,যারা এই সেক্টরে কাজ করতে আগ্রোহী তাদেরকে আগে সিদ্বান্ত নিতে হবে সে কোন জায়গাতে কাজ করতে চান।
এই সেক্টরে কাজ করতে হলে কি জানা বেশি জরুরী?
জীসান: আমার মতে, এই সেক্টরে কাজ করতে হলে নিমোক্ত কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে,
১. এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার কি?, কি কি কাজে লাগে এবং কেন ?
২. পৃথিবীতে সেরা এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারের র্যাংকিয়ে কোন কোন প্রোডাক্ট আছে এবং তাদের ব্যাপারে সমস্ত তথ্য।
৩. বাংলাদেশে কোন কোন কোম্পানী এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করছে এবং তাদের প্রোডাক্ট, মার্কেট স্ট্র্যাটেজি, মার্কেট শেয়ার সম্পর্কে বিশদ আকারে জানতে হবে।
৪. ভাইরাস ও এন্টিভাইরাস সম্পর্কে প্রচুর প্রচুর তথ্য ইন্টারনেট থেকে জানতে হবে।
৫. নতুন ভাইরাস ও এর প্রতিকার সম্পর্কে আপডেট থাকতে হবে।
৬. টেকনিক্যাল সাপোর্টে কাজ করতে হলে টেকনিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে।
বাংলাদেশে এই সেক্টরের ভবিষৎ কি?
জীসান: খুবই সম্ভাবনাময়। কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের মানুষ ফ্রি ডাউনলোড করে এই এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করত যার মাঝে কাজের সীমাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু এখন অরিজিনাল লাইসেন্স কেনার মাধ্যমে ব্যবহারকারী এর সম্পূর্ন সুযোগ-সুবিধা পায়। আমাদের দেশের সরকারী ও বেসরকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যেভাবে ডিজিটাল হচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর যেভাবে আধুনিকায়ন হচ্ছে, বিদেশী প্রতিষ্ঠান গুলো এসে যায়গা করে নিচ্ছে, নতুন নতুন ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এতে করে খুব স্বাভাবিকভাবেই সবার তথ্য সুরক্ষায় এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার এর মার্কেট দিন দিন বাড়ছেই।
হোম ইউজারদের যে মার্কেটটা আছে সেটা সম্পর্কে ভবিষৎবাণী করা কঠিন তবে করপোরেট ইউজারদের ব্যাপারে বলা যায় যে, আমাদের দেশের সিকিউরিটি সফটওয়্যারের বাজার আগামী কয়েক বছরে বহুগুন বৃদ্ধি পাবে আর তার জন্য সবচেয়ে বড় অবদান থাকবে করপোরেট ইউজার।
কোথায় কিভাবে কাজ পাওয়া যাবে?
জীসান: এখাতের প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় মার্কেটিং বা বিপণন খাতে লোক চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয়। জব পোর্টালগুলোর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবডেজ ও সোশ্যাল মিডিয়াতে জানতে পারবেন।
ধন্যবাদ আপনাকে।
জীসান: সবাইকে বিশেষ করে টেকজানোর পাঠকদের ধন্যবাদ। যেকোনো বিষয় জানার বা পরামর্শের জন্য কমেন্টের মাধ্যমে প্রশ্ন করতে পারেন।
১ comment
[…] […]