স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭২ সালের তুলনায় বর্তমানে খাদ্য শস্যের উৎপাদন প্রায় ৪ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর উৎপাদিত হচ্ছে ৩৮ মিলিয়ন মেট্রিক টনেরও বেশি খাদ্য শস্য। গবেষণায় দেখা গেছে বার্ষিক ৪ থেকে ৪.৫ শতাংশ হারে কৃষি প্রবৃদ্ধি হলে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় করাও সম্ভব। এছাড়াও কৃষি খাতে কর্মী প্রতি জিডিপি ১ শতাংশ বৃদ্ধি করা গেলে দারিদ্র কমবে ০.৩৯ শতাংশ।
আজ কৃষিবিদ মিলনায়তনে মেটাল গ্রুপ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে কৃষির যান্ত্রিকীকরণঃ বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ ও আর্থিক সেবা খাতের ভূমিকা’- শীর্ষক সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. আতিউর রহমান। সেমিনারে বাংলাদেশের কৃষি খাতের বর্তমান চিত্র তুলে ধরা হয়। গুরুত্বারোপ করা হয় কৃষকদের ঋণ প্রাপ্তির বিষয়ে, যেন তারা কৃষি কাজে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার করতে পারে।
সেমিনারে ড. আতিউর রহমান জানান, বাংলাদেশ সরকার কৃষির যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে প্রান্তিক ও দরিদ্র কৃষকদের যন্ত্র ক্রয়ে ভর্তুকি প্রদান করছে। বেসরকারি খাতকে কৃষি যান্ত্রিকীকরনে ভূমিকা রাখার ব্যপারে উৎসাহ প্রদানের জন্য কৃষি যন্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে রয়েছে বিশেষ শুল্ক সুবিধা। তিনি আরও জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে কৃষি যন্ত্রপাতি খাতে ঋণ প্রদানকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। তিনি বিভিন্ন ব্যাংক ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে অনুরোধ করেছেন কৃষকদের জন্য বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য, যেন তারা কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে পারে। তার মতে, এমনটি করা সম্ভব হলে সেটি হবে ‘পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ’- এর একটি আদর্শ দৃষ্টান্ত।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর এমিরেটাস ডঃ আব্দুস সাত্তার মন্ডল-সহ বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা। এছাড়াও ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকের প্রতিনিধিসহ দেশি ও বিদেশী সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের এবং বাংলাদেশে কর্মরত কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিবৃন্দ। ছিলেন মেটালের গ্রুপ সিইও এএমএম ফরহাদ সহ গনমাধ্যম কর্মীরা। সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন হেলাল আহমেদ চৌধুরী, সুপার নিউমেরারি প্রফেসর, বিআইবিএম এবং সাবেক ব্যাবস্থাপনা পরিচালক, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড; অধ্যাপক ডঃ আব্দুস সাত্তার মণ্ডল, সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; হিদেয়েকি কজিমা, ব্যাবস্থাপনা পরিচালক এমইউএফজি ব্যাংক লিমিটেড; অধ্যাপক হান্নানা বেগম, সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ; ডঃ মোঃ হাবিবুর রহমান, জেনারেল ম্যানেজার, গভর্নর সেক্রেটারিয়েট, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক প্রতিনিধিরা।
সেমিনারে মেটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সাদিদ জামিল বলেন, “বাংলাদেশের কৃষি খাতকে যান্ত্রিকীকরণের জন্য মেটাল ১৯৯৩ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। মেটাল সর্বপ্রথম কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় করার জন্য নিজ উদ্যোগে কৃষকদের ঋণ সুবিধা প্রদান করে। দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও অর্থনৈতিক সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানও কৃষকদের ঋণ সুবিধা প্রদানে এগিয়ে আসে তাহলে বাংলাদেশে কৃষির আধুনিকায়ন দ্রুত হবে। এর ফলে দেশের দারিদ্র কমে আসবে এবং খাদ্য শস্য উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।”
ভবিষ্যতে ব্যাংকিং খাতের কৃষির যান্ত্রিকীকরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার প্রসঙ্গে ড. আতিউর রহমান তিনটি প্রস্তাবনা প্রদান করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। তিনি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করতে ব্যাংক রেট ৫ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ নিয়ে আসতে বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচীতে মোট সরবরাহকৃত ঋণের অন্তত ১০ শতাংশ মৎস চাশে দেয়ার নির্দেশনা আসে। এমনটি কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রেও তিনি করতে বলেন। সর্বশেষ মসলা চাষি ও গাভী খামারিদের জন্য যেমন স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হয়েছিল তেমনটি কৃষির যান্ত্রিকীকরণেও করার জন্য প্রস্তাব দেন তিনি।
কৃষিখাত যান্ত্রিকীকরনের ফলে কমে আসবে দারিদ্র: ড. আতিউর রহমান
previous post