ক্রেতাদের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে ও অনলাইনে কেনাকাটা করার ক্রমর্বধমান চাহদিা পূরণের লক্ষ্যে দেশের বৃহত্তম হোম ডেলিভারি নেটওর্য়াক পেপারফ্লাই গতকাল মাস্টারর্কাড ও ইর্স্টান ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) সাথে পার্টনারশিপের মাধ্যমে একটি ডিজিটাল পেমেন্ট অন ডেলিভারি সল্যুশন-‘ক্যাশলেস পে’ উদ্বোধন করেছে। যেসব ক্রেতা অনলাইনে অর্ডার দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে পণ্য নিজেদের দোরগোড়ায় পেতে চান তারা পেপাররফ্লাই এর নতুন এই ডিজিটিাল পেমেন্টে সেবার মাধ্যমে এখন থেকে পণ্য গ্রহণের সময় নগদে মূল্য পরিশোধের (ক্যাশ অন ডেলিভারি-সিওডি) পরিবর্তে ডিজিটিাল উপায়ে মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। সারা দেশেই মিলবে এই সেবা।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, জুনায়েদ আহমেদ পলক প্রধান অতিথি হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিজিটাল পেমেন্ট-অন-ডেলিভারি সিস্টেম ‘ক্যাশলেস পে’ উদ্বোধন করেছেন।
এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবির, সৈয়দ আলমাস কবির, চেয়ারম্যান, বেসিস এবং শামী কায়সার, চেয়ারম্যান, ই-ক্যাব ।
নতুন এই ‘ক্যাশলেস পে’ সেবাটি হলো একটি অগ্রসর প্রযুক্তিভিত্তিক সমাধান। ইর্স্টান ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) এর মাধ্যমে মাস্টারকার্ডের পেমেন্ট টেকনোলজির সহযোগীতায় সেবাটি নিশ্চিত করবে পেপারফ্লাই। ক্যাশলেস পেমেন্টের ক্ষেত্রে এটি প্রথম সেবা, যার জন্য কোনো পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) মেশিনের প্রয়োজন নেই। ক্রেতারা পেপারফ্লাই এর সরবরাহ করা পণ্যের দাম পরিশোধ করতে নিজেদের র্স্মাটফোন ব্রাউজার ও তাতে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলইে সহজে ক্যাশলেস পে’র মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। সময়োপযোগী এই উদ্যোগের ফলে ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার বা প্রযুক্তিভিত্তিক লেনদেনে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নেটওয়ার্ক অনলাইনে গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর মাধ্যমে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
ই-কর্মাস তথা অনলাইন প্ল্যাটর্ফম ক্রেতা-ভোক্তাদের ঘরে বসইে ডিজিটাল উপায়ে নিরাপদে,স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিশ্চিন্ত মনে নিজেদের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কেনার সুযোগ এনে দিয়েছে। মাস্টারকার্ডের সাম্প্রতিক এক গবেষনায় দেখা যায়, সারা বিশ্বে ক্রেতারা এখন সশরীরে দোকানে বা সুপারশপে যাওয়ার চেয়ে ঘরে বসে ই-কর্মাস বা অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য কেনাকাটায় ঝুঁকছেন। মাস্টারর্কাড এর সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা গেছে বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৬ জন জানিয়েছেন যে তারা র্বতমান করোনাকালে গতানুগতিক ধারা ছেড়ে অনলাইনভিত্তিক লেনদেন করছেন এবং করোনার পরেও স্থায়ীভাবে এই পদ্ধতিতে কেনাকাটা করতে চান। আবার প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি মানুষ জানিয়েছেন, তারা করোনার পরে নগদ র্অথ ব্যবহার কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে অনলাইনভিত্তিক কেনাকাটার দাম পরিশোধের ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশই সম্পন্ন হয়ে থাকে ক্যাশ-অন-ডেলিভারি (সিওডি) র্অথাৎ ক্রেতা পণ্য পেয়ে নগদ অর্থ প্রদানের মাধ্যমে। কোভিড-১৯ মানুষকে নগদ অর্থ লেনদেনের পরিবর্তে ডিজিটাল পেমেন্টের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক নোট বা নগদ টাকা র্স্পশ করাও এখন স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, এমন আশঙ্কা থাকায় মানুষ ক্রমান্বয়ে ক্যাশলেস লেনদেনে ঝুঁকে পড়ছে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ‘ক্যাশলেস পে’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “আন্তঃলেনদেন সুবিধা নিশ্চিত করে স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে লেনদেনের পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব হবে”।
তিনি আরও বলেন, “পরিবর্তিত নতুন সময়ে ভার্চুয়াল মুদ্রার দিকে আমাদের মনযোগী হতে হবে। বিটকয়েন এর মতো মুদ্রাকে অনুমোদন না দিলেও এই বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে। বিষয়টি নিয়ে নীতি নির্ধারনি বৈঠক করতে হবে। তা না হলে আমরা পিছিয়ে পড়বো এবং সাইবার সিকিউরিটির দিকে নজর দিয়েই আমরা ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ে তুলবো।”
পেপারফ্লাই’র চীফ মার্কেটিং অফিসার (সিএমও) রাহাত আহমদে এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের এই উদ্যোগ ডিজিটাল বা প্রযুক্তিভিত্তিকসেবা ই-কর্মাস ইকোসিস্টেমের প্রসারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে এখন থেকে ক্রেতা-ভোক্তাদের সামনে যেমন ক্যাশলেস উপায়ে পণ্যরে দাম পরিশোধের নতুন বিকল্প এসে গেছে তেমনি আমাদের মতো অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং অনলাইনে পণ্য বিক্রয়কারীদের জন্যও দ্রুত নগদ অর্থ প্রবাহের সুযোগ তৈরি হয়ছে। প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে একসঙ্গে এভাবে ক্রেতা-ভোক্তা উভয়ের জন্যই পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নগদ অর্থের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। কারণ তা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আমাদের নতুন সেবা চালুর সুবাদে সমগ্র অনলাইন ইকো-সিস্টেমে নগদ অর্থের লেনদেন প্রচলিত ব্যবস্থার চেয়ে অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন হবে। আমরা আশা করি এখন থেকে অনলাইনে পণ্য বিক্রেতারা আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ হবেন এবং ই-কমার্সের বিকাশে জোরালো ভূমিকা রাখবেন।”
ইর্স্টান ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও আলী রেজা ইফতেখার বলেন, “ইবিএল সব সময়ই তার গ্রাহকদের নিরাপত্তার বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়। কোভডি- ১৯ এর প্রার্দুভাব শুরু হওয়ার সময় থেকেই আমরা বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লউএইচও) নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরন করে আসছি। পেপারফ্লাইর সঙ্গে ক্রেতা-ভোক্তাদের জন্য অনলাইনে পণ্যের অর্ডার দিয়ে ক্যাশলেস উপায়ে মূল্য পরিশোধের এমন একটি সময়োপযোগী সেবা চালু করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। ডিজিটাল পেমেন্ট বা প্রযুক্তিভিত্তিক সেবার মাধ্যমে লেনদেন করার বিষয়ে দেশের ভোক্তাদের বিশ্বাস দিন দিন বাড়ছে। এভাবে নতুন এই ‘ক্যাশলেস পে’ সেবাটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই সেবা চালুর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের রুপকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা আরো এক ধাপ এগিয়ে যাব।’
মাস্টারর্কাড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন “সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের রুপকল্প বাস্তবায়নে সহয়তা করতে মাস্টারর্কাড তার পার্টনারদের সঙ্গে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে কাজ করে চলেছে, যাতে নিত্যনতুন ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা সহজলভ্য করে তোলা যায়।” তিনি আরো বলেন, ”বর্তমান কোভিড- ১৯ মহামারি দুঃসময়ে ই-কর্মাস ও ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা জনগণের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে, জনগণ এখন নগদ অর্থে লেনদেন কমিয়ে ডিজিটাল উপায়ে লেনদেনের দিকে ঝুঁকছেন। মাস্টারর্কাড বিশ্বাস করে, কোভডি- ১৯ মহামারির পরওে এই ডিজিটাল উপায়ে লেনদেন অব্যাহত থাকবে। নতুন এই ‘ক্যাশলেস পে’ সেবা চালুর ফলে ভোক্তা-গ্রাহকরা নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দে লেনদেন করতে পারবেন। তারা অনলাইনে নিজেদের অর্ডার করা পণ্যের ডেলিভারি বা পণ্য হাতে পাওয়ার পরে মাস্টারকার্ডের ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ড এবং মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।”