প্রযুক্তির উৎকর্ষতা আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে এক ক্লিকেই আমরা পেয়ে যাচ্ছি অত্যাধুনিক সব সেবা। প্রযুক্তির হাত ধরে সহজ হয়েছে জীবন যাত্রা, বেড়েছে অপশনের পরিমাণ।
কেনাকাটাঃ
কেনাকাটায় এক বিপ্লব এসেছে ইন্টারনেটের কল্যাণে। প্রচুর পণ্য প্রতিদিন কেনাবেচা হচ্ছে অনলাইনে । আধুনিক গ্রাহকরা পন্য কেনার সময় প্রথমে অনলাইনে পণ্যের রিভিউ দেখে নিচ্ছেন। তারপর খুঁজে দেখছেন কোথায় পণ্যটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে এবন তাদের দামের পার্থক্য। এরপর একজন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তিনি পণ্যটি কোথা থেকে কিনবেন। এক ক্লিকেই পাওয়া যাচ্ছে পছন্দের পোশাক , বাস-ট্রেনের টিকিট, হোটেল বুকিং, খাবার অর্ডার , সদাইপাতির বাজার ইত্যাদি। কলম থেকে শুরু থেকে মোবাইল, নানা রকম গ্যাজেট এমনকি গাড়ি ও কেনাবেচা হচ্ছে অনলাইনে। দেশীয় কেনাকাটার সাইটগুলোর মধ্যে
রকমারি ডটকম ( http://www.rokomari.com/) চালডাল, পিকাবু, কিকশা গ্রাহকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
রাইড শেয়ারিং এবং ট্রাফিক সম্পর্কে জানতে প্রযুক্তিঃ
গত কয়েক বছরেঢাকাবাসীর যাতায়াতে রাইড শেয়ারিং এর বদৌলতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।এক ক্লিকেই প্রয়োজনের সময় পাওয়া যাচ্ছে গাড়ি, বাইক। রাতের বেলা এখন আর ছিনতাইকারীর ভয় নেই যদি আপনি কোনো স্বণামধণ্য রাইড শেয়ারিং কোম্পানীর গাড়িতে থাকেন তাই একা রাতে বাসায় ফিরতে ও কোনো ভয় নেই। উবার বা পাঠাও অ্যাপ ডাউনলোড করা থাকলে রাইড পাওয়া যাবে সহজেই। রাস্তায় ট্রাফিকের অবস্থা জানতে এখন আর রাস্তায় নামতে হয় না। ঘরে বসেই বিভিন্ন অ্যাপের সাহায্যে ট্রাফিকের অবস্থা জানা যায়।
সামাজিক যোগাযোগ এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমঃ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তাই ছোটবেলার স্কুলের বন্ধুরা এখন আর হারিয়ে যায় না। খুঁজে পাওয়া যায় ফেসবুকে ‘সার্চ’ করলেই। আর সবসময় এই বন্ধুত্ব অটুট রাখা যায়। কাছের মানুষদের সাথে যোগাযোগ রাখা, আত্মীয়দের খোঁজ নেয়া ও নেটওয়ার্কিং এখন অনেক সহজ অন্তর্জালের কল্যাণে।
অনলাইনে বই পড়াঃ
এখন আমরা বই ও পড়তে পারি অনলাইনে। ডিজিটাল জীবনযাত্রা আমাদের জীবনে বইপড়ার ক্ষেত্রেও এক দারুণ পরিবেশ তৈরি করেছে। পিডিএফ বুক, বুক রিডার পাওয়া যাচ্ছে হাতের নাগালেই। এছাড়া বিভিন্ন অ্যাপ এ এখন বই পড়ার সুবিধা রয়েছে। অ্যাপগুলোতে এ সময়ের বিখ্যাত লেখকদের যেমন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, রাবেয়া খাতুন, ফরিদুর রেজা সাগর, থেকে শুরু করে কালজয়ী লেখক রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎ চন্দ্র, বিভূতিভূষণ, জীবনানন্দ, সুকুমার রায় এবং অন্যান্য লেখকেরবই পাওয়া যায়। এখন চাইলে অনলাইনে বই কেনাও যায়। রকমারি ডটকম (http://bit.ly/2LAnT1R ) এক্ষেত্রে সেরা।
লেখালেখির সুবিধায় প্রযুক্তিঃ
প্রযুক্তির কল্যাণে লেখক এবং সাংবাদিকরা পাচ্ছেন বিভিন্ন সুবিধা। গ্রামার চেক, পিডিএফ ফাইল ও ওয়ার্ডে কনভার্ট করা ইত্যাদি এখন অনলাইনেই করা যাচ্ছে। ইংরেজিতে লেখা যেকোন প্রবন্ধের ব্যকরণ পরীক্ষা করে নেয়া যায় ‘গ্রামারলি’র মাধ্যমে। কোন সংবাদের লিংক বড় কোনো প্লাটফর্মে দেয়ার লিংকের আকার ছোট করে নিতে পারেন ‘বিটলি’র মাধ্যমে। চমকপ্রদ ব্যপার হচ্ছে, এই সুবিধাগুলো আমরা পেতে পারি একদম বিনা খরচে।
যখন কার সংবাদ তখনঃ
তাৎক্ষণিক সংবাদ জানার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি বিরাট ভূমিকা পালন করছে। দ্রুত দেশ-বিদেশে কোথায় কি হচ্ছে তা আমরা জেনে যাচ্ছি ডিজিটাল মাধ্যমে। প্রচলিত প্রিন্ট, টিভি মিডিয়ার সাথে দ্রুত খবর পৌঁছানোতে ব্যপক ভূমিকা রাখছে সংবাদ পোর্টাল এবং পত্রিকাগুলোর অনলাইন ভার্সনগুলো। আবার এসব মাধ্যমের মেসেজ অ্যালার্ট সার্ভিস অ্যাকটিভ করার সুবিধা ও পাওয়া যায় অনেক ক্ষেত্রে। ‘গুগল অ্যালার্ট’ সার্ভিসের মাধ্যমে আপনার ঠিক যেই ব্যপারে জানতে চান, সেই ব্যপারেই আপনি সব সংবাদ পাবে। টেকজানো ডটকম (https://techjano.com/) সেরা উদাহরণ।
গ্রাহক সেবাঃ
প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে গ্রাহকসেবা এখন অনেক সহজলভ্য। বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসেবা আমরা এখন অনলাইনেই পাচ্ছি যা আমাদের সময় নষ্ট হওয়া এবং ধকল অনেকাংশেই কমিয়ে দিচ্ছে।
ডিজিটাল বিভিন্ন সেবা ব্যপক পরিবর্তন এনেছে আমাদের জীবনে। প্রযুক্তির ব্যপ্তির কারণেআমাদের জীবনযাত্রা প্রকৃতপক্ষেই ডিজিটাল হচ্ছে। ডিজিটাল জীবনযাপনের পদ্ধতি জীবনকে করেছে অনেক সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময়। এই পরিবর্তনের ইতিবাচক দিকগুলো গ্রহণ করে প্রয়োজণীয় এবং ভালো কাজে লাগিয়ে জীবনকে অনেক সমৃদ্ধ করা যেতে পারে।
লেখক: সুমাইয়া আকতার
sumaiya.subu@gmail.com