সমগ্র বাংলাদেশজুড়ে ১০ লাখ স্কুলের শিশু নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার সংক্রান্ত সনদ পাবে আগামি এক বছরের মধ্যে, যা কেবল তাদের অনলাইন অভিজ্ঞতাকেই নিরাপদ করবে না, দেশকেও নিয়ে যাবে একটি অনন্য বিশ্ব রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে। ক্রমবর্ধমান নেট-সংযুক্ত বিশ্বে এদেশের শিশু ও কিশোর–কিশোরীরা অনলাইনে যেসব ঝুঁকি ও বিপদের মুখোমুখি হয় তা কমিয়ে আনতে ইউনিসেফের সহায়তায় সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিভাগ এই কার্যক্রম শুরু করবে।
‘নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস ২০২০’ উপলক্ষে আজ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঘোষণাটি দেয়া হয় । স্কুলের শিশু, আইসিটি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সংশ্লিষ্ট বিষয় ও সামাজিক মাধ্যম বিশেষজ্ঞ, টেলিকম অপারেটর, মিডিয়া কর্মী, প্রখ্যাত অভিনেতা, বাণিজ্য সমিতির প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইন বিষয়ক ক্রমবর্ধমান সমস্যা ও ধারা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ২০০৪ সাল থেকে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে। ‘নিরাপদ ইন্টারনেট দিবস: ভালো ইন্টারনেটের জন্য একত্র হই’ শীর্ষক এবারের আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “এক বছর সময়ের মধ্যে আমরা ১০ লাখ স্কুলগামী শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের সনদ প্রদানের মাধ্যমে ইতিহাস তৈরি করবো এবং লুকায়িত অনলাইন ঝুঁকির বিরুদ্ধে আমাদের শিশুদের অতি প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি সাধন করব।”
অন্যান্য বিষয়ে মধ্যে, দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে শিশু ও বাবা–মাদের মধ্যে স্থানীয় ইন্টারনেট কনটেন্ট সম্পর্কে প্রচার চালানো হয়, শিশুদের জন্য নেট এটিকেট (ইন্টারনেট শিষ্টাচার) বিষয়ক সেশন পরিচালনা করা হয়, উন্মুক্ত আলোচনাকে উৎসাহিত করা হয় এবং ইন্টারনেটের নিরাপত্তামূলক বিষয়গুলো সম্পর্কে শিশু, বাবা–মা ও শিক্ষকদের অবগত করা হয়।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি তোমো হোজুমি বলেন, “সাইবার প্রযুক্তির ঝুঁকি ও সম্ভাবনাগুলো বিবেচনা করার এবং ঝুঁকিগুলো কমিয়ে আনতে আমাদের সম্মিলিত প্রজ্ঞা ও শক্তি ব্যবহারের সময় এসেছে। শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া কোনো সমাধান হতে পারে না, কারণ এটি একইসঙ্গে বিশাল জ্ঞান ও তথ্যের উৎস হিসেবে কাজ করে, যা আজকের এই বিশ্বে শিশুদের জন্য প্রয়োজন।”
এর আগে ২০১৯ সালে, ইউনিসেফের একটি জরিপ পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে সাইবার নিপীড়ন (সাইবার বুল্যিং) বাংলাদেশে অন্যতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৩২ শতাংশ তাদের বাহ্যিক অবয়ব, পরীক্ষার ফল, ধর্ম ইত্যাদি কারণে অনলাইনে নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা জানায়।
‘বাংলাদেশে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা’ শীর্ষক সমীক্ষার অংশ হিসেবে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১০–১৭ বছর বয়সী ১,২৮১ জন শিশুর ওপর জরিপ চালানো হয়। সমীক্ষা ফলাফল অনুযায়ী দেখা যায়, প্রায় ২৫ শতাংশ শিশু তাদের বয়স ১১ বছর হওয়ার আগেই ডিজিটাল বিশ্বে প্রবেশ করতে শুরু করে। যদিও বেশি বয়সী শিশুরা কম বয়সী শিশুদের চেয়ে অধিক মাত্রায় সাইবার নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে, তবে সার্বিকভাবে সব শিশুরাই ক্ষতিকর কনটেন্ট, যৌন হয়রানি এবং সাইবার নিপীড়ন আশংকায় রয়েছে। শিশু নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার সংক্রান্ত কোর্সটি যা আজকে উদ্বোধন করা হল তা সারা বাংলাদেশের শিশুদের অনলাইনে নিরাপদে থাকার জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে সহায়তা করবে।