ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডাকঘরেরদেশব্যাপী নেটওয়ার্ক ও বিশাল অবকাঠামো আমাদের বিশাল সম্পদ। এই সম্পদকে জাতির কল্যাণে কাজে লাগাতে হবে। ডিজিটাইজেশনের প্রভাবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে চিঠি আদান-প্রদানের যুগ শেষ হয়ে গেলেও পণ্য পরিবহণে ডাক বিভাগকে শ্রেষ্ঠতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি পুরো ডাক ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করছি আমরা। তখন ডাকঘর ডিজিটাল সেবা প্রদানের কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হবে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী আজ শনিবার ঢাকায় ডাক ভবন মিলনায়তনে বিশ্ব ডাক দিবস উপলক্ষ্য ডাক অধিদপ্তর আয়োজিত আলোচনা সভা ও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রলিখন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: সিরাজ উদ্দিন – এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: আফজাল হোসেন এবং অনুষ্ঠানে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বক্তৃতা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বিশ্ব ডাক দিবসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন,ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডাকঘরকে পণ্য পরিবহণ ও বিতরণের ব্যাকবোন হিসেবে প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই । তিনি বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে চিঠির যুগ শেষ হয়ে গেলেও ডাক সেবার প্রয়োজন শেষ হয়ে যায়নি বরং উত্তরোত্তর এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে। বহুমাত্রিক ডিজিটাল সেবা প্রদানের বদৌলতে-উদ্ভাবনের হাত ধরেই আগামীর ডিজিটাল শিল্পবিপ্লবের পৃথিবীতেও ডাক সেবার প্রয়োজনীয়তা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, ডাকঘরকে ডিজিটাইজেশনের জন্য ডিজিটাল সার্ভিস ল্যাব করেছি। সেখান থেকে ডিজিটাল প্রক্রিয়া কিভাবে করা যায়-সে লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে।ইতোমধ্যে ডিজিটাল ডাকঘরের উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে ২০০টি ডিজিটাল সরকাারি সেবা প্রদান করা হচ্ছে উল্লেখ করে কম্পিউটারে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের অগ্রদূত মোস্তাফা জব্বার বলেন, জনবলকে দক্ষ করে তৈরি করা থেকে শুরু করে অবকাঠামো পর্যন্ত ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ ধরেই এগুবে ডাক বিভাগ।
১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ইউনিভার্সেল পোস্টাল ইউনিয়ন (ইউপিইউ) এবং আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) এর সদস্য পদ অর্জনের ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের বিভিন্ন গৌরবোজ্জ্বল অর্জনের কথা তুলে ধরেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ডাক বিভাগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
কম্পিউটারে বাংলা ভাষার জনক মোস্তাফা জব্বার ৫০তম আন্তর্জাতিক চিঠি লেখন প্রতিযোগিতায় (এলএলডব্লিউসি) জয়ী কিশোরী নুবায়শা ইসলামের অর্জনকে দেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বলে উল্লেখ করেন এবং তাকে ও তার পরিবারকে এ জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় বাংলা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার গৌরব অর্জনের পাশাপাশি নুবায়শাদের সফলতার পথ বেয়ে বাংলা ইউনিভার্সল পোস্টাল ইউনিয়নের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে একদিন প্রতিষ্ঠা পাবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ডাক সার্ভিসকে লাগসই প্রযুক্তিতে রূপান্তর করার বিকল্প নেই উল্লেখ করেন। তিনি বলেন ডিজিটালাইজেশন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ডাক অধিদপ্তরে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস, ডিজিটাল মানিঅর্ডার, পোস্টাল ক্যাশর্কাড এবং ডিজিটাল কমার্স ইত্যাদি র্কাযক্রম চালু করা হয়েছে।
বিটিআরসি‘র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার ডাক বিভাগের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, প্রাচীনকালে যেমন ডাক বিভাগের প্রয়োজন ছিল আগামীতেও থাকবে । তিনি বলেন একাত্তরের ২৯ জুলাই মুজিবনগর সরকার এবং যুক্তরাজ্যের হাউজ অব কমন্স থেকে প্রকাশিত ৮টি স্মারক ডাকটিকেট বিশ্বে আমাদের জাতিসত্ত্বা, রাষ্ট্রসত্ত্বা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
সভাপতির বক্তৃতায় ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: সিরাজ উদ্দিন বলেন, বহুমাত্রিক ডিজিটাল সেবা প্রদানের বদৌলতে-উদ্ভাবনের হাত ধরেই আগামীর ডিজিটাল শিল্পবিপ্লবের পৃথিবীতেও ডাক সেবার প্রয়োজনীয়তা অব্যাহত থাকবে।
মন্ত্রী বিশ্ব ডাক সংস্থা ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন (ইউপইউ) আয়োজতি ৫০তম পত্র লিখন প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক বিজয়ী সিলেট আনন্দ নিকেতন বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুবায়শা ইসলামকে পুরস্কৃত করেন। এছাড়াও মন্ত্রী ৪৮,৪৯ ও ৫০তম আন্তর্জাতিক পত্রলিখন প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।