আমাদের মাঝে অনেকে প্রতিবন্ধীতাকে বাধা মনে করেন। কিন্তু প্রতিবন্ধীতা কোন বাধা নয়, এটা চ্যালেঞ্জ। শুধু একটু বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ এবং ব্যক্তি-পরিবার-রাষ্ট্রের সহযোগিতা পেলে তারা শুধু নিজেকেই জয় করে না, বদলে দেয় পুরো পৃথিবী, হয়ে ওঠেন পুরো পৃথিবীর অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। শেখ হাসিনার সরকার তাদেরকে সহযোগিতা করতে বদ্ধপরিকর। তার সুযোগ্য কন্যা প্রতিবন্ধীদের জীবনমানের উন্নয়ন ও সম্মানজনক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে কাজ করছেন। আজ সকালে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল আয়োজিত বিশেষভাবে সক্ষম(প্রতিবন্ধী) ব্যক্তিদের জন্য আয়োজিত চাকুরী মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী পলক এ সময় আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের চেতনাকে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টার তত্ত্বাবধানে একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজ গঠনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছি। আমরা বিশ্বাস করি প্রতিবন্ধীতা অজেয় নয়। তাদেরকে একটু সহযোগিতা করলে তাঁরাও এই পৃথিবীটাকে বদলে দিতে পারে।
এ সময় তিনি বলেন, ডিজিটাল ডিভাইড যেন গ্রাম-শহর, নবীন-প্রবীণ এমনকি যারা বিভিন্ন প্রকার প্রতিবন্ধীতা নিয়ে জীবনযাপন করছে, তাদের মধ্য যেন কোনও প্রকার বৈষম্য তৈরী না করে সেজন্য আইসিটি ডিভিশন কাজ করে যাচ্ছে। তার অনন্য উদাহরণ কিন্তু আপনাদের সামনেই বসে আছে–আমাদের জাহিদ,যিনি হুইল চেয়ারে বসে তার দুটি হাত ও অদম্য মেধা ব্যবহার করে হাজার হাজার ডলার ইনকাম করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অংশ নেয়ার পাশাপাশি নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। এভাবে অজস্র উদাহরণ আপনাদের আশেপাশেই আছে। ওরা আমাদের স্টার্ট-আপ প্রতিযোগিতাসহ সকল উদ্ভাবনী কর্মকান্ডে লক্ষণীয়ভাবে ভালো করছে। তাই, তাদেরকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এগিয়ে দিতে ইতোমধ্যে আমরা তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্সংস্থানের মাধ্যমে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজএবিলিটিসহ সব ধরণের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ক্ষমতায়ন শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী ৩ বছরে ৩ হাজার প্রতিবন্ধীকে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। আর এ খাতে তাদের সাথে চাকুরীদাতাদের সমন্বয় ঘটিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা নিয়মিতভাবে ইংরেজী নববর্ষের প্রথম দিনটি তাদের জন্য চাকুরী মেলার আয়োজন করছি।
অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের জন্য ‘কথা বলতে চাই’ নামে একটি যোগাযোগ অ্যাপের উদ্বোধন করা হয়।
মেলায় বিগত বছরের চাকুরী প্রদানকারী মাই আউটসোর্সিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানজিরুল বাশার ও ফিফোটেক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদ হোসেনকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ কম্পিু্টার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার সরকারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পার্থ প্রতিম দেব, সিএসআইডি’র নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। মেলা শেষে প্রতিমন্ত্রী স্টলগুলো পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১১ সাল হতে বিসিসি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে আসছে। এ প্রশিক্ষণ বিসিসি’র ঢাকা প্রধান কার্যালয়সহ রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট ও ফরিদপুর জেলার মোট ৭টি কেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছে। এযাবৎ বিসিসি হতে মোট ৫১১ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিনামূল্যে আইসিটি প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আইসিটি প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি প্রশিক্ষিত জনবলের কর্মসংস্থানের জন্য আইসিটি বিভাগ চাকুরী দাতা প্রতিষ্ঠান ও প্রার্থীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের ব্যবস্থা করে থাকে। এজন্যই বিসিসি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য চাকুরী মেলার আয়োজন করে আসছে। বিগত ৩ আয়োজনের মধ্যে প্রথমবারের মেলায় ১০টি প্রতিষ্ঠান অংশ এবং ৩২ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। ২০১৬ সালের দ্বিতীয় চাকুরী মেলায় ১২টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে এবং ৬০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। ২০১৭ সালে ১৫টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয় এবং ১১৫ জনের কর্মসংস্থান হয়। এবারের মেলায় ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। ফলে এবার চাকুরী প্রদানের হারও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। মেলা আজ সন্ধ্যা ৪.৩০টা পর্যন্ত মেলা চলবে।