প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হচ্ছে। ফলে বিপদে পড়ছেন অনেকেই। জেনে নিন ফেসবুক নিরাপদ রাখার কিছু সহজ উপায়।
একাধিক অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ
একই ব্যবহারকারীর একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলা আগেও নিষিদ্ধ ছিল। তবে খুব একটা কড়াকড়ি ছিল না। এখন এ বিষয়ে ফেসবুক খুব কঠোর নিয়ম মেনে চলছে। ফলে একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
বিনামূল্যে নোটিফিকেশন সুবিধা
ব্যবহারকারীদের বিনামূল্যে টেক্সট মেসেজ নোটিফিকেশন সুবিধা প্রদান করছে ফেসবুক। যখন কোনো কম্পিউটার অথবা মোবাইল থেকে আপনার অ্যাকাউন্টে ঢোকা হবে তখন টেক্সট মেসেজ নোটিফিকেশন আপনার কাছে যাবে। এরপর বুঝতে পারবেন কে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করছে।
ফেসবুকের মেইল থেকে সতর্ক
ফেসবুক থেকে কোন মেইল এলে সতর্ক থাকুন। ইনবক্সে ঢুকেই যদি মেলে থাকা লিঙ্কে ক্লিক করে বসেন, বিপদে পড়বেন। কারণ ওই মেইল হয়তো ফেসবুক থেকে আসেইনি। ইদানীং কিছু অত্যাধুনিক কৌশল কাজে লাগিয়ে হ্যাকাররা ওঁত পেতে রয়েছে আপনার সর্বস্ব হাতানোর জন্য। নেটওয়ার্কিং সাইটে আপনার গতিবিধির উপর সর্বক্ষণ নজর রাখছে তারা। ফেসবুক প্রোফাইলে আপনার উপস্থিতি কিছুদিন টের না পেলেই একটি বিশেষ ধরনের মেইল ও তার সঙ্গে লিঙ্ক পাঠাচ্ছে আপনার ওই অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত মেইল আইডিতে। সেই মেইলে লেখা থাকছে, ‘আপনি বেশ কিছুদিন ফেসবুকে ছিলেন না। আপনার মেসেজগুলো শিগগিরই ডিলিট হতে চলেছে। এর সঙ্গেই আপনাকে দুটো অপশন দেওয়া হবে। ‘ভিউ মেসেজ’ এবং ‘গো টু ফেসবুক’। এর কোন একটিতে ক্লিক করলেই আপনার যাবতীয় তথ্য চলে যেতে পারে হ্যাকারদের হাতে।
তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ ব্যবহারে সতর্কতা
ফেসবুকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ্লিকেশনের অভাব নেই। কিন্তু হ্যাকাররা অ্যাপসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর আইডির নিয়ন্ত্রণ কব্জা করে থাকে। অনেক অ্যাপ কোনো নির্দিষ্ট সময়ে এগুলো ব্যবহার করে থাকি কিন্তু ব্যবহার শেষে সেগুলো মুছে ফেলতে কিংবা নিষ্ক্রিয় করতে ভুলে যাই। তৃতীয় পক্ষের অ্যাপটি কতটুকু নিরাপদ তা ব্যবহারের আগে ভালো করে যাচাই করে নিন।
দ্বিস্তর ভেরিফিকেশন
বিপদের হাত থেকে কিছুটা নিরাপদ রাখতে ফেসবুক ‘টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন’ সুবিধা চালু করেছে। এটি ব্যবহার করলে প্রতিবার নতুন ডিভাইস/ব্রাউজারে আপনার কাঙ্ক্ষিত সেবায় (উদাহরণস্বরূপ ফেসবুকে) সাইন-ইন করার সময় ইউজারনেম-পাসওয়ার্ড ইনপুট করার পরেও সেখানে আরেকটি পিন কোড দিতে হবে। এই কোডটি মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে আসে। এগুলোকে সিকিউরিটি কোডও বলা হয়, যা প্রতিবারই সার্ভার থেকে পাঠানো হয়।
এন্টিভাইরাস ব্যবহার
আপনার পিসির জন্য কিলগার অথবা রিমোট অ্যাকসেস ট্রোজান [RAT] খুবই বিপজ্জনক। এগুলোর হাত থেকে বাঁচার জন্য সঠিক অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন।
ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড এবং সেলফোন নম্বর
দ্বিস্তর ভেরিফিকেশন সক্রিয় থাকা যে কোনো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে চাইলে কমপক্ষে তিনটি বিষয় দখলে থাকতে হবে। সেগুলো হচ্ছে ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড এবং যে মোবাইল নম্বরে সেবাটি রেজিস্ট্রেশন করা আছে। ইউজারনেম-পাসওয়ার্ড নিয়ে নিলেও একই সময়ে আপনার মোবাইল ফোনটি হ্যাকারের হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই ফেসবুকে সাইন-ইন করার সময় সিস্টেম যখন মোবাইলে এসএমএসে আসা পিন চাইবে তখন সেটি তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হবে না। আর এই যাত্রায় আপনার অ্যাকাউন্টটিও হ্যাকিংয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে। লগইন অ্যাপ্রুভাল চালু করতে চাইলে প্রথমে আপনার ফেসবুকে সাইন-ইন করুন।
এরপর ফেসবুক Account Settings > Security সেকশনে থাকা Login Approvals-এর Require me to enter a security code each time an unrecognized computer or device tries to access my account-এ চেক মার্ক করুন। এবার Next ক্লিক করে মোবাইলে SMS এ প্রাপ্ত কোড লিখে Next চাপুন এবং Save বাটনে ক্লিক করুন।
বিজ্ঞাপনে সতর্কতা
বিজ্ঞাপনে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে উল্লেখ করে কিছু লিখতে পারবেন না। মনে করুন, আপনি শার্ট বিক্রি করেন। বিজ্ঞাপনে এই ‘শার্টটি ভালো’ বলার সুযোগ থাকলেও ‘শার্টটি ভালো গ্রেগ’ লেখার সুযোগ নেই।
এ ছাড়াও কোনো লিঙ্কে ক্লিক করলে কোনো শপিং ওয়েবসাইট বা বিজ্ঞাপনের পাতায় পৌঁছে যেতে পারেন। আপনাকে সেখানে নিয়ে ফেলতে পারলে তাতেও সাইবার দুর্বৃত্তদের যথেষ্ট লাভ। কারণ কোনো বিজ্ঞাপন প্রদর্শন বা ওয়েবসাইটে ক্লিক বাড়াতে পারলেই প্রতি ক্লিকের জন্য অর্থ পায় তারা। সঙ্গে বহু ক্ষেত্রে সেই ওয়েবপেজের হাতে চলে আসতে পারে আপনার গোপন নথিও।