দেশের সাধারণ মানুষকে ইংরেজিতে দক্ষ করে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ফেসবুকে যাত্রা শুরু করে ইংরেজি ভাষা শেখার গ্রুপ ‘সার্চ ইংলিশ’। গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা রাজীব আহমেদ। ইংরেজি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ের যেন শেষ নেই। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হয়ে সব বিষয়ে ভালো করলেও ইংরেজিতে অকৃতকার্য হয়ে পিছিয়ে পড়েন অনেকেই। এমনই ভাবনা থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখছিলেন রাজিব আহমেদ।
একটা পরিবারে কত সদস্য হতে পারে? বড়জোর ৮ জন। কিন্তু সার্চ ইংলিশ এখন ১১ লাখ সদস্যর পরিবার। এ পরিবার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে। বিশ্বের সবচয়ে বড় পরিবার সার্চ ইংলিশ। ফেসবুকের সার্চ ইংলিশ গ্রুপই সবচেয়ে বড় গ্রুপ যেখানে ১১ লাখেরও বেশী সদস্য রয়েছে। এতে অনেকেই সক্রিয়ভাবে ইংরেজি চর্চা করেন।
প্রথাগত ইংরেজি শিক্ষার দিকে না গিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী পন্থায় ইংরেজি চর্চার ফলে এই প্ল্যাটফর্ম খুবই অল্প সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। রাজিব আহমেদ বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে ইংরেজি চর্চায় উৎসাহিত করতে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখছে ‘সার্চ ইংলিশ’। অল্প সময়ের মধ্যে এই ফেসবুক গ্রুপে বিভিন্ন বয়স ও পেশার মানুষ যোগ দিয়ে নিয়মিত ইংরেজি চর্চা করছেন।
সম্প্রতি জিপি অ্যাক্সিলেরেটর ৫ম ব্যাচের জন্য নির্বাচিত হয়েছে ‘সার্চ ইংলিশ’। পঞ্চম ব্যাচের জন্য জিপি অ্যাক্সিলেরেটর দুই সপ্তাহে এক হাজারের বেশি আবেদন পেয়েছিল। কঠিন বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে দুইদিনের বুট ক্যাম্পে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং এদের মধ্যে থেকে ১৫টি স্টার্টআপকে নির্বাচন করা হয় আরো আরো যাচাই, মুখোমুখি সাক্ষাৎকার এবং প্রেজেন্টেশনের জন্য। তীব্র প্রতিযোগিতার পর ৫টি স্টার্টআপকে জিপি অ্যাক্সিলেরেটর পঞ্চম ব্যাচের জন্য নির্বাচন করা হয়।
চার মাসের এ্ই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীরা স্থানীয় ও বিদেশি মেন্টর, খাত বিশেষজ্ঞ এবং পেশাজীবীদের কাছ থেকে টার্ম শিট, মূল্যায়ন, আর্থিক মডেলিং ও ব্র্যান্ডিং এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শিখতে পারে। একই সাথে এই প্ল্যাটফর্ম সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। আর এক্ষেত্রেও ‘সার্চ ইংলিশ’ তার যোগ্যতা আবারো প্রমাণ করবে।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় এই ফেসবুক গ্রুপটিকে নিয়ে গত বছরের অক্টোবরে তথ্যচিত্র নির্মাণ করে ফেসবুক বিজনেস। যা শুধু বাংলাদেশের প্রথম কোনো ফেসবুক গ্রুপকে নিয়ে নয় বরঞ্চ পুরো এশিয়ায় প্রথম কোনো গ্রুপের ওপর তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
আরো একটি আন্তর্জাতিক সাফল্য অর্জন করেছে সার্চ ইংলিশ। সোশ্যাল মিডিয়া ফর এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এর জন্যে মনোনীত হয়েছে বাংলাদেশের এই ফেসবুক গ্রুপটি। কমিউনিটি মোবিলাইজেশন শাখায় গ্রুপটি এই মনোনয়ন লাভ করেছে। আরো নয়টি প্রতিষ্ঠান এই শাখায় মনোনয়ন লাভ করেছে। ১৮০টি উদ্যোগের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সার্চ ইংলিশ এই মনোনয়ন লাভ করেছে।
এ উপলক্ষে সার্চ ইংলিশের প্রতিষ্ঠাতা রাজিব আহমেদ বলেন, ‘এটা নি:সন্দেহে সার্চ ইংলিশের জন্যে বিশাল অর্জন। তবে আমরা তখন নিজেদের সফল মনে করবো যেদিন বাংলাদেশের সব গ্রামে ইংরেজি ভাষা চর্চার সংস্কৃতি জনপ্রিয় হবে।’
সার্চ ইংলিশের পাশাপাশি আরো দুটি বাংলাদেশি প্রজেক্ট এই অ্যাওয়ার্ডের জন্যে মনোনীত হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে- ইউনিসেফের ‘ন্যাশনাল মাল্টিমিডিয়া ইনিশিয়েটিভ ফর এন্ডিং চাইল্ড ম্যারেজ’। এটি কমিউনিকেশন, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্টিভিজম শাখায় মনোনয়ন পেয়েছে। আরেকটি হচ্ছে- বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন, বাংলাদেশের ‘হ্যালো চেক!- নাউ ইট’স ইওর টার্ন টু সে’ শিরোনামের প্রজেক্ট কমিউনিটি মোবিলাইজেশন শাখায় মনোনয়ন পেয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে যেসব সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে তাদের প্রচেষ্টাকে সম্মানিত করার উদ্দেশ্য নিয়েই ২০১৩ সালে ডিজিটাল এমপাওয়ারমেন্ট ফোরাম (ডিইএফ) এই অ্যাওয়ার্ড চালু করে। দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের প্রতিষ্ঠানকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। আগামী মে মাসের ২৫ তারিখে দিল্লীতে এই অ্যাওয়ার্ডের গালা ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে।
এতো স্বীকৃতির পরে তো বলতেই হয় রাজিব আহমেদের ‘সার্চ ইংলিশ’ অবশ্যই সেরা।
ফেসবুকে সার্চ ইংলিশ গ্রুপ- www.facebook.com/ groups/SearchEnglish
ওয়েবসাইট- www.searchenglish.com