রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আদাবর থানা সংলগ্ন হীরা টাওয়ারে অবস্থিত মেগা স্টোরে এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঈদুল ফিতর ২০১৯ কালেকশন উদ্বোধন করেছে লা রিভ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মন্নুজান নার্গিস ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। আয়োজনে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কুশলাদী বিনিময় করে ঈদ কালেকশন উদ্বোধন করেন মন্নুজান নার্গিস।
এবারের ঈদ কালেকশন নিয়ে তিনি জানান, ‘ঈদুল ফিতর ২০১৯ এর পোশাকসমূহের মূল উপজীব্য অরিজিন তথা উৎসমূল। দেশীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চলের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বাহারি নকশা ও বৈচিত্র্যময় ছাঁটে আনা হয়েছে এবারের কালেকশন।’
তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দেশের মতো আমাদেরও রয়েছে নিজস্ব শিল্প ও সংস্কৃতি। বস্ত্রখাত আমাদের ঐতিহ্য। অনেক অঞ্চলের মানুষ যখন গুহাবাসী, বাঙালি তখন অনেক সৃজনকর্মেই স্বচ্ছন্দ। এর একটা বস্ত্রবয়ন। তুলা উৎপাদন থেকে সুতা কাটা, কাপড় বোনায় বাঙালি ছিল অতুলনীয়। তা-ও কেবল যেনতেন কাপড় নয়, উচ্চমানসম্পন্ন কাপড়ও বাঙালি সেই সময় থেকে বুনে আসছে। এমনকি তা বিভিন্ন
দেশে রপ্তানিও যে হয়েছে, তার প্রমাণ মিসরের মমিতে পাওয়া মসলিন। লা রিভ এবারের ঈদ আয়োজনে মসলিনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আরেক উৎসমূল জামদানি মোটিফ নিয়েও বহুমাত্রিক কাজ করেছে।’
‘বিশ্বের আদি বয়নশিল্পের হাতে গোনা যে কয়টি ধারা আজও টিকে রয়েছে, জামদানি তার একটি। এই বয়নের বৈশিষ্ট্য রীতিমতো মনোগ্রাহী। পরম্পরাগতভাবে বয়নশিল্পীরা স্মৃতি থেকেযে নকশায় জামদানি বুনে থাকেন সেই বয়নরীতি অনুসরণে জামদানি মোটিফে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ঈদের অনেক পোশাক।’
পোশাকের কালেকশন নিয়ে তিনি জানান, ‘নতুন ট্রেন্ডে নারীদের জন্য থাকছে ফ্লোর টাচ টু পিস সেট, জিপার অ্যাডেড সালোয়ার-কামিজ, সিগারেট প্যান্ট এবং কামিজ প্যাটার্ন পালাজ্জোসহ ফিউশনভিত্তিক শর্ট টপ এন্ড পালাজ্জো উইথ এটাচড দোপাট্টা যা জিপসি ড্রেস নামেও পরিচিত।মোটিফের ক্ষেত্রে জামদানি ছাড়াও ব্যবহার করা হয়েছে ইসলামিক মোটিফ, ফ্লোরাল মোটিফ, আলপনা, চিরায়ত দেশীয় উপাদান এবং ম্যান্ডালা ইত্যাদি। রুচিশীল মানসম্মত শাড়ির সমারোহে থাকছে বিভিন্ন রকম সুতি, তাঁত কটন,
হাফ সিল্ক, কাতান ও মসলিনের শাড়ি। প্রিন্ট, মেশিন এমব্রয়ডারি, ট্যাসেল ও কারচুপি সমৃদ্ধ এসব শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে বাহারি রং ও নকশায়।’
পুরুষদের কালেকশন নিয়ে তিনি জানান, ‘ঈদ আয়োজনে ভিন্নমাত্রিক ফ্যাশন সচেতন পুরুষদের জন্য স্বল্প সংখ্যক ভেজিটেবল ডাই পাঞ্জাবি করা হয়েছে। ভেজিটেবল ডাই এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- পিঁয়াজ, হরিতকী, ডালিমের খোসা, খয়ের, হলুদ ইত্যাদি উদ্ভিজ
উপকরণ দিয়ে কাপড়ে নকশা করা হয়। এছাড়াও, জামদানি মোটিফের বাহারি পাঞ্জাবির পাশাপাশি প্রথমবারের মতো কাট এন্ড ড্র্যাপড এবং কাঁথা স্টিচের পাঞ্জাবিসহ অজস্র প্যাটার্ন বেজড পাঞ্জাবি আনা হয়েছে। কলার আর প্ল্যাকেটে বৈচিত্রের সঙ্গে সিল্ক, কটন, টু টোন, টাই-ডাই, স্লাব লিনেন ও ডবি কাপড়ে তৈরিকৃত এসব পাঞ্জাবিতে মিডিয়াম হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে স্ক্রিন প্রিন্ট, কারচুপি ও মেশিন এমব্রয়ডারি।
ঈদের সাজ ও নামাজে পূর্ণতা আনতে লা রিভ ঈদ সমাহারে আরও আছে আলীগড় ও প্যান্ট পাজামাসহ ভেজিটেবল ডাইকৃত বাহারি টুপি।’
শিশুদের পোশাক পরিকল্পনায় আরামের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। শিশুদের পোশাকে তাই কটন ও কটন ব্লেন্ডেড কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে বেশি। বিভিন্ন প্রাকৃতিক অনুষঙ্গ যেমন আগুন, সম ও বিসম পাতার আকৃতি, বৃষ্টির পানির ফোঁটা, ফুল ইত্যাদি মোটিফে নকশা করা হয়েছে শিশুদের পোশাকসমূহ। শুধু ঈদ নয়, ঈদের পরপর বিয়েসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠান থাকে। সে জন্য অনেকে একবারেই কেনাকাটার কাজটা সেরে নেন। তাই তেমন অনুষ্ঠানের কথা চিন্তা করেও কিছু পোশাকের নকশা করা হয়েছে। শুন্য থেকে ১৮ মাসের নবজাতক ও শিশুদের আরামদায়ক পোশাকের পাশাপাশি দুই থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের পোশাকে রং বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও প্রাধান্য পেয়েছে উৎসবের ছোঁয়া। জানান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মন্নুজান নার্গিস।
প্রসঙ্গত, লা রিভ-এর মোহাম্মদপুরে আদাবর থানা সংলগ্ন হীরা টাওয়ার ও বাসাবো আগমন সিনেমা কমপ্লেক্সে মেগা স্টোরসহ ঢাকার বনশ্রী, ধানমন্ডি, মিরপুর ১ ও ১২, উত্তরা, ওয়ারী, বেইলি রোড, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটি ও পুলিশ প্লাজাসহ নারায়ণগঞ্জ, খুলনা এবং সিলেটে নিজস্ব আউটলেট রয়েছে। এছাড়াও, পণ্য হাতে পেয়ে মূল্য পরিশোধের সুবিধায় www.lerevecraze.com থেকেও ঘরে বসেই বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকেই লা রিভ পণ্য কেনা যায়।