আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে দেশীয় পণ্যের প্রসার ও প্রচারে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছেন উদ্যোক্তারা। মেইড ইন বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশে তৈরি পণ্য দেশ ও বিদেশে ডিজিটাল বাংলাদেশকে নতুন করে তুলে ধরছে। বিশেষ করে ইলেক্ট্রো ম্যানুফ্যাকচারিং সার্ভিসেস (ইএমএস) খাতে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে মাথায় রেখেই ২০১৫ সালে মেইড ইন বাংলাদেশ প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সেলট্রন ইলেক্ট্রো ম্যানুফ্যাকচারিং সার্ভিসেস লিমিটেড প্রথমবারের মতো বাংলাদেশেই চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত পণ্য উৎপাদন শুরু করে। চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আমাদের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এত সম্ভাবনাময় হওয়া সত্তে¡ও আমদানি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রিতে অনেক লাভ হওয়ায় কেউ উৎপাদনখাতে সরাসরি বিনিয়োগ করতে উৎসাহী নয়। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এই সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগের উদ্যোগ নেয় সেলট্রন ইলেক্ট্রো মেডিকেল সার্ভিসেস লিমিটেড।
শুরুতে বাংলাদেশে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট তৈরি শুরু করতে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সেলট্রনকে। সার্কিট বোর্ড ডিজাইন ও প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার তৈরিতে দক্ষ জনবলের অভাব, অনুমতি বা লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে সম্যক দিকনির্দেশনা না থাকাসহ বেশকিছু সমস্যার কারণে বাধাগ্রস্থ হয় উৎপাদন।
কঠোর পরিশ্রম আর সরকার ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সৌহার্দ্যপূর্ণ দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতায় পরবর্তীতে কঠোর মাননিয়ন্ত্রণের যাচাই বাছাই শেষে চারটি মেডিকেল ইকুপমেন্ট তৈরির লাইসেন্স পায় সেলট্রন ইএমএস। বর্তমানে সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশেই তারা ১২ ও ৬ চ্যানেল ইসিজি মেশিন, ফটোথেরাপি, এক্সরে ভিউবক্স ও পেশেন্ট মনিটর তৈরি ও বাজারজাত করছে। চিকিৎসাখাতে ব্যবহৃত পণ্য উৎপাদন অনেক সূ² ও জটিল একটি প্রযুক্তি। এখানে পণ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ, কারখানার সক্ষমতা ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এসকল বিষয়ে শতভাগ সক্ষমতা অর্জন করায় সেলট্রন অর্জন করেছে আইএসও সার্টিফিকেট। একইসঙ্গে তারা জাপান সরকারের অনুমোদনও পেয়েছে।
বাংলাদেশে তৈরি ওষুধের বিপুল চাহিদা রয়েছে বিদেশে। ওষুধ শিল্পের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবায় ব্যবহৃত পণ্য উৎপাদনের এই উদ্যোগ চতুর্থ প্রজন্মের শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও স্বনির্ভরতার প্রতীক হিসেবে সেলট্রনের তৈরি প্রোডাক্টগুলোর ব্যান্ড নাম দেয়া হয়েছে অপরাজেয়। দেশীয় পণ্য হওয়ার প্রথম দিকে গুনগত মান নিয়ে মানুষ প্রশ্ন তুললেও এখন পাল্টে গেছে সেই চিত্র।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল-নার্সিং হোম, ক্লিনিকে সেলট্রনের তৈরি মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে। কাঁচামালের সহজলভ্যতা, সস্তা শ্রম ও স্থানীয় বাজারের কারণে এসব পণ্যের দামও হাতের নাগালে। যেখানে বিদেশি ইসিজি মেশিন ক্রয় করতে খরচ হয় ৯০ হাজার থেকে ১২০ হাজার টাকার মতো সেখানে একই মানের পণ্য সেলট্রনের কাছে ৭৫ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। অতীতে মেডিকেল পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে বাংলাদেশকে ২ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা প্রতিবছর খরচ করতে হতো। এখন স্থানীয়ভাবে তৈরি হওয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে।
একইসঙ্গে এই খাতের উন্নয়নের ফলে দেশে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, দূর হবে বেকারত্ব সমস্যা। বিশেষ করে চিকিৎসাখাতে জনগণের ব্যয় কমাতে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা মেডিকেল শিল্প ব্যাপকভাবে ভূমিকা পালন করবে। সর্বস্তরের জনগণের আস্থা ও সহযোগিতা পেলে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে একসময় প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ আফ্রিকার বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশেও বাংলাদেশে তৈরি মেডিকেল পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।