করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’ এই প্রবচনটি আমাদের জীবনে আলাদা গুরুত্ব নিয়ে হাজির হয়েছে। বিশেষ করে, মহামারির পর থেকে বিশ্বজুড়ে মানুষ নিজেদের স্বাস্থ্য ও এর সুরক্ষাকে অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া শুরু করেছে। সঙ্কটের পর থেকে সবাই বুঝতে শুরু করেছে, মানুষের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে সুস্বাস্থ্য ধরে রাখা; আর সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো।
শরীর ও মনকে সচল রাখতে ঘুম প্রয়োজন। শরীরকে কর্মক্ষম, মনকে চাঙ্গা ও ক্লান্তিহীনভাবে যে কোনো কাজ করার জন্য রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিয়েছেন এমন ব্যক্তি, প্রয়োজনের চেয়ে কম বিশ্রাম নিয়েছেন এমন যে কারও চেয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক বেশি কর্মক্ষম থাকেন। করোনা মহামারির কারণে আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসে অনেক পরিবর্তন এসেছে; এর মধ্যে খুব বেশি না হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের ঘুমের অভ্যাস।
বৈশ্বিক মহামারি শুরুর পর থেকে বিশ্বব্যাপী কীভাবে ঘুমের পরিমাণ ও কার্যকারিতার ওপর প্রভাব পড়েছে, আজ আমরা তাই আলাপ করবো।
ঘুমের পরিমাণ না কি মানসম্মত ঘুম: কোনটা প্রয়োজন
পরিমাণে বেশি ঘুমালেই তা সবসময় মানসম্মত ঘুম হবে, বিষয়টি আসলে এরকম নয়। সাধারণত মানুষ মনে করে থাকেন, ঘুমের পরিমাণ অর্থাৎ প্রতি রাতে একটি নির্দিষ্ট সময় ঘুমানোই হয়ত মানসম্মত ঘুম। ঘুমের পরিমাণ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু মানসম্মত ঘুমের জন্য এটিই একমাত্র বিবেচ্য বিষয় নয়। মানসম্মত ঘুমের মানে হলো: একটি স্বাস্থ্যকর ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম, যা শরীরকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম দেয়ার মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। আমরা দেখতে পারছি, মহামারির সময়ে বিশ্বের সকল দেশের মানুষের ঘুমের সময় গড়ে বেড়ে গেলেও আসলে ঘুমের কর্মক্ষমতা কমে গেছে।
ঘুমের অভ্যাসে মহামারির প্রভাব
অঞ্চলের ভিত্তিতে ঘুমের অভ্যাস নির্ভর করে কি না, তা জানতে ১৬টি দেশের স্যামসাং হেলথ অ্যাপ ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে স্যামসাং। যেখানে দেখা যায়, ১৬টি দেশের সবকটিতেই আগের তুলনায় গড়ে মানুষের ঘুমের পরিমাণ বেড়েছে। তারা আগের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠছেন। তবে, মানসম্মত ঘুমের বিষয়ে মিশ্র ফল এসেছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মহামারির আগে সবচেয়ে কম মানসম্মত ঘুম হতো ইন্দোনেশিয়ায়, যা এখন ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ১৬টি দেশ থেকে উপাত্ত নিয়ে দেখা গেছে, মহামারির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানসম্মত ঘুমের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। মহামারি শুরুর তুলনায় ইন্দোনেশিয়ায় ঘুম থেকে ওঠার সময় গড়ে ১১ মিনিট পিছিয়েছে। এছাড়া বলা যায়, ভারতের মতো দেশে মহামারির আগে ঘুমের গড় সময় ছিলো ৬ ঘণ্টা ৩০ মিনিট, মহামারির পর যা বেড়ে হয়েছে ৬ ঘণ্টা ৩৯ মিনিট।
ঘুমের মান কীভাবে বাড়ানো যায়
এটা প্রায়ই বলা হয় যে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের জন্য রাতের ৮ ঘণ্টা ঘুম খুব জরুরি। তবে, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে, এক্ষেত্রে মানসম্মত ঘুমকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনায় রাখতে হবে। এর মধ্যে ভালো ও মানসম্মত ঘুম নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি উপায় হতে পারে, ঘুম ট্র্যাক করার মাধ্যমে ঘুমের ধরণ বুঝতে পারা। আর পরিপূর্ণভাবে ঘুম ট্র্যাক করার জন্য আপনার ঘুমের সঙ্গী হিসেবে স্যামসাং সম্প্রতি নিয়ে এসেছে- অত্যাধুনিক গ্যালাক্সি ওয়াচ।
গ্যালাক্সি ওয়াচফাইভের ‘স্লিপ স্কোর’ ফিচার আপনার ঘুমের ধরণ ট্র্যাক করবে; এটা আপনাকে গভীর ঘুমে প্রবেশের সময়, আরইএম (র্যাপিড আই মুভমেন্ট) ঘুম, ঘুম কেমন হলো এবং জেগে ওঠার সময় সহ ঘুম-সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য দিবে। রক্তে অক্সিজেন প্রবাহ ও নাক ডাকার সময়ের ওপর ভিত্তি করে আপনি আপনার ঘুমের ধরণ ও পুরো স্বাস্থ্যের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আপনার আশপাশে স্মার্টফোন না থাকলেও সর্বাধুনিক গ্যালাক্সি ওয়াচফাইভ নিজেই এ কাজগুলো করতে পারবে।
তার ওপর ঘড়িটির ‘স্লিপ কোচিং’ ফিচার ঘুম সম্পর্কে বোঝাপড়া বাড়াতে ও আপনাকে আরও ভালোভাবে ঘুমাতে সাহায্য করতে আপনার অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে নিজস্ব ‘স্লিপ গাইড প্রোগ্রাম’ নির্দিষ্ট করে দিতে পারবে। এছাড়াও, স্লিপ কোচ ফিচারটি স্যামসাং হেলথ অ্যাপ থেকে চালু করা যাবে। ফিচারটি প্রথমে আপনার ১ সপ্তাহের ঘুমের ধরণ যাচাই করে দেখবে। এরপর আপনার ঘুমের অভ্যাস উন্নত করতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা সহ ৪ সপ্তাহের একটি স্লিপ কোচিং প্ল্যান দিবে।
এটা ঠিক যে আপনার ঘুমের জন্য আদর্শ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য ঘরের তাপমাত্রা ও আলো নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি কোথায় ঘুমাচ্ছেন এটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এখন সর্বাধুনিক স্যামসাং গ্যালাক্সি ওয়াচফাইভের মাধ্যমে আরও উন্নত স্লিপ ট্র্যাকিং প্রোগ্রাম নিশ্চিত করছে স্যামসাং হেলথ অ্যাপ।
মহামারিতে আমাদের ঘুমের ধরণ পরিবর্তিত হয়েছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, বরং এখন আবার এটাকে গুছিয়ে আনার সময় এসেছে। পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ঘুম প্রত্যেক মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের মাধ্যমে এগুলো নিশ্চিত করা এখন আরও সহজ হয়েছে। তাই, কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখুন সবসময়।