রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুভ উদ্বোধন হলো উই সামিট ২০২২ এর। উদ্বোধন করেন মাননীয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি।
প্রায় ১৩ লাখ সদস্যের এই ফেসবুক গ্রুপ গত ২০১৭ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে। দেশের নারী উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বড় কমিউনিটি উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট-উই’র মাধ্যমে সারাদেশে প্রায় ৪ লাখ নারী উদ্যোক্তা হয়েছেন। আর এই নারী উদ্যোক্তাদের নিয়েই প্রতিবছর উই এর চমৎকার আয়োজন উই সামিট, দেশের নারী উদ্যোক্তাদের এক অনন্য মিলনমেলা।
সামিটের উদ্বোধনী আয়োজনে মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম. মোজাম্মেল হক বলেন,“আমাদের দেশের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় পদে নারীরা নিজেদের যোগ্যতায় জায়গা করে নিয়েছে। নারীরা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেলে পরিবার ও দেশের জন্য ভালো। নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে সারা দেশে প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করেছে সরকার।“
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ছিলেন ব্যাংক এশিয়ার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জিয়াউল হাসান মোল্লা, উইয়ের উপদেষ্টা ও সিল্কক গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৌম্য বসু, স্টার টেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজওয়ানা খান ,সরকারের আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সেক্রেটারি এন এম জিয়াউল আলম পিএএ, এবং উইম্যান এন্ড ইকমার্স ট্রাস্ট এর প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা।
আয়োজনের মূল সহযোগী হিসেবে রয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রজেক্ট উই-ফাই। উইমেন এন্টারপ্রেনারস ফাইন্যান্স ইনিশিয়েটিভ (উই-ফাই) হল একটি বিশ্বব্যাংকের একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প যা নারী এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য বাজারের সুযোগ তৈরি নিয়ে কাজ করে।
এবারের সামিটে দুই দিনব্যাপী থাকছে নানা আয়োজন। প্রথম দিনে উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়ীক কাজে বেশ সহায়তা করবে এমন কিছু শিক্ষণীয় আলোচনা পর্বের আয়োজন করা হয় । ফেসবুক কর্মাসের সুষ্ঠু ব্যবহার, প্রযুক্তির সহায়তায় ব্যবসাকে আরো এগিয়ে নেওয়া, কুরিয়ার ও লজিস্টিক সেবা ব্যবহারসহ নানা বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা পর্ব গুলো।
নানা সেশানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর ডিজি এ. এইচ. এম. শফিকুজ্জামান, উইম্যান এন্ড ইকমার্স ট্রাস্ট এর প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা, ব্রেকবাইট কমিউনিকেসন্স এর প্রধান নির্বাহী আসিফ আহনাফ, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথোরিটি এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডক্টর বিকর্ণ কুমার ঘোষ, ডেইলি স্টারের চীফ বিজনেস অফিসার তাজদীন হাসান, উই এডভাইজর কবির সাকিব, স্টার্টাপ বাংলাদেশ লিমিটেড এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সামি আহমেদ, আকিজ ভেঞ্চার লিমিটেড এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ আলমগীর, নিজের বলার মতো গল্প এর প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল বাহার জাহিদ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এর We-Fi প্রজেক্ট এর হোসনা ফেরদৌস সুমি, স্টেডফাস্ট কুরিয়ার লিমিটেড এর প্রতিষ্ঠাতা রিদওয়ানুল বারী জিয়ন,ইস্টার্ন ব্যাংক বাংলাদেশ থেকে হেড অফ ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস আহসানউল্লাহ চৌধুরী,হেড অফ কার্ডস নাহিদ ফারজানা সহ প্রমুখ।
ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সহায়তায় উই উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। মূলত দেশের নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন এবং সামাজিক পুঁজিতে উন্নত করার উদ্দেশ্যে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষণা পত্র নিয়ে আলোচনা পর্বে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর এ.এন.এম শিবলী নোমান খান বলেন, ” লিঙ্গ, সামাজিক পুঁজি, উদ্যোগ, সরকারি এজেন্সি এবং মার্কেটিং ও ব্যবস্থাপনা ; আমরা এই পাচটা জিনিশের উপর ভিত্তি করে আমাদের রিসার্চ ফ্রেমওয়ার্ক টি সাজিয়েছি। গবেষনাটির মাধ্যমে আমরা পেয়েছি নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য গুলো কিভাবে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হতে পারে,আমরা জেনেছি দেশের কোন কোন ক্ষেত্র গুলোতে এখনো নারীদের অনেক বেশি অবদান প্রয়োজন।”
তিনি আরো বলেন,” উই এবং উই প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা কে ধন্যবাদ আমাদের সহায়তা করা এবং নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য। এই গবেষণা থেকে পাওয়া ফলাফল গুলো অনেক বেশি সাহায্য করবে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে!
আয়োজনের বিকালের পর্বে উই উদ্যোক্তাদের সাথে যুক্ত হন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন এমপি। নারী স্বাবলম্বীকরণে উই এর ভূমিকা নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আজকে আমাদের সবার অজান্তেই নারীরা দেশের অর্থনীতির অনেকটা অংশে ভুমিকা পালন করছেন। আমাদের নারীরা আজ বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছে।”
তিনি আরো বলেন,” শিক্ষা,গবেষণা, খেলাধুলায় এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা,আজ প্রমাণ হলো ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই দেশের নারীরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, তিনি একজন দূরদর্শী নেত্রী। তার অবদানেই আজ নারীদের এতো উন্নয়ন।”
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন এমপি সবসময় সরকারের পক্ষ থেকে উই এর উদ্যোক্তাদের পাশে থাকার কথা বলেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মাননীয় সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি এমপি ,ইকমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শমী কায়সার, উই এর প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা এবং উই এডভাইজর কবির সাকিব। উই উদ্যোক্তা এবং পুরো আয়োজন নিয়ে নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, “আমাদের এই নারী উদ্যোক্তা কমিউনিটি পাঁচ বছরে পা দিয়েছে। ৫ বছরে আমি দেখেছি সমাজের একেকজন সাধারণ নারী কিভাবে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর অন্যতম একজন মানুষ হয়ে উঠেছে। আমাদের উই উদ্যোক্তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা গল্প আছে,আলাদা আলাদা সংগ্রাম আছে। আমরা খুব শ্রীঘ্রই জেলা ভিত্তিক আয়োজনগুলোতে আরো জোরদার হবো যাতে দেশের আনাচে কানাচে থেকে গড়ে উঠে নারী উদ্যোক্তা।
সৃষ্টির শুরু থেকে আমাদের উদ্যোক্তারা যেকোনো কাজে সরকারের সর্বোচ্চ সহায়তা পেয়ে আসছে। সরকারের এই অবিরত সহায়তার কারনেই আজ আমাদের কমিউনিটির উদ্যোক্তারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে তার উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করছে।”
পুরো আয়োজনের সহযোগী হিসেবে রয়েছে আইসিটি বিভাগ, কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটিজ-সিসিএ, বিকাশ, ব্যাংক এশিয়া, স্টেডফাস্ট কুরিয়ার।
আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে থাকছে নারীদের জয়ী অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান। এবছর দুইটি ক্যাটাগরিতে জয়ী এওয়ার্ড প্রদান করা হবে, সমাজের উন্নয়নে অবদান নারীদের এবং উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া নারীদেরকে। সামিটের দ্বিতীয় দিনের এই অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করবেন মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি।