হুয়াওয়ে ২০১৮ সালের সাস্টেইনাবিলিটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ২০১৮ এর প্রতিবেদনে হুয়াওয়ে তাদের গ্রহনকৃত চারটি কৌশল ব্যাখ্যা করে। কৌশলগুলো হলো- ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি, নিরাপত্তা এবং বিশ্বস্ততা, পরিবেশ সুরক্ষা, এবং একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুসংহত পরিবেশ ব্যবস্থা।
এছাড়াও, বাংলাদেশে হুয়াওয়ের চলমান বিভিন্ন ত্রাণ বিতরন কর্মসুচি, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের উন্নয়নে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান এবং নারীর ক্ষমতায়নে অন্যান্য পার্টনারদের সাথে সম্মিলিতভাবে নারীদের প্রদানকৃত আইসিটি বিশয়ক শিক্ষা কার্যক্রম গুরুত্ব পেয়েছে এ বছরের রিপোর্টে।
জাতিসংঘের সাস্টেইনেবল ডেভলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) অর্জনে, হুয়াওয়ে তার অংশীদারদের সাথে নিয়ে একটি টেকসই এবং অধিকতর সংযুক্ত ইকোসিস্টেম গড়ার লক্ষ্যে গত বছর থেকে কাজ করে যাচ্ছে এবং এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একই সাথে নিজেদের গ্রহনকৃত কৌশলেরও প্রয়োগ করছে।
গতকাল চীনে আয়োজিত রিপোর্ট প্রকাশ ও পরিবেশন অনুষ্ঠানে, হুয়াওয়ের চেয়ারম্যান লিয়াং হুয়া বলেন, “হুয়াওয়ে তার গ্রাহকদের আরও অধিকতর সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করছে। এসকল কিছুই আমরা করছি যাতে করে আমরা বিশ্বব্যাপী একটি ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন করতে পারি। ডিজিটাল সেবাসমুহকে আমরা আরও সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করে তুলতে চাই এবং আমরা মনে করি কেবলমাত্র এভাবেই সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব।”
ভবিষ্যৎ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনে হুয়াওয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান করছে টাওয়ার ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত শক্তির অপচয় রোধ এবং এর কার্যদক্ষতা বৃদ্ধিতে। এই বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে হয়াওয়ে ৫জি প্রযুক্তির গবেষণা, পণ্য ও প্রকৌশলগত উন্নয়নে নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে। হুয়াওয়ের স্থাপনকৃত প্রতিটি ৫ জি সাইটের বিদ্যুৎ খরচ এই খাতে ব্যবহৃত বিদ্যুতের গড়ের তুলনায় ২০ শতাংশ কম। এটি সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র হুয়াওয়ের উদ্ভাবিত নতুন চিপসেট, সিস্টেম সফ্টওয়্যার, পেশাদার সেবা এবং উন্নত হার্ডওয়্যার এবং তাপ অপচয় নিরধক প্রযুক্তি দ্বারা । এই উদ্ভাবনী প্রযুক্তিগুলি হুয়াওয়ের ৫ জি প্রযুক্তিকে আরও বেশি কার্যদক্ষ করে তুলেছে। এছাড়াও, প্রতিটি ব্যক্তি, বাড়ি এবং সংস্থার কাছে ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা পৌঁছে দিতে, “হুয়াওয়ে টেকফরঅল” নামের একটি বৈশ্বিক ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি ব্যবস্থা শুরু করেছে।
হুয়াওয়ের গ্রহনকৃত নতুন এই কৌশলে রয়েছে দুটি বড় পরিবর্তন। প্রথমত, হুয়াওয়ে ডিজিটাল বিভাজণের সংযোগ স্থাপনকে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তকরণ কৌশলের সাথে যুক্ত করেছে এবং ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনের পরে কোম্পানিটি এখন অধিক গুরুত্ব প্রদান করছে অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে।
দ্বিতীয়ত, “স্থিতিশীল ও নিরাপদ নেটওয়ার্ক পরিচালনা এবং ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষা” প্রকল্পটিকে আপগ্রেড করে গৃহীত হয়েছে “সিকিউরিটি অ্যান্ড ট্রাস্টওয়ার্দিনেস” স্ট্রাটেজি। পরিবেশ রক্ষার্থে হুয়াওয়ে গ্রহণ করেছে “এনভাইরনমেন্ট অ্যান্ড প্রোটেকশন” স্ট্রাটেজি। এই কৌশলের আওতায় হুয়াওয়ে ২০১৮ সালে, ক্লিন এনার্জি উৎস থেকে প্রায় ৯৩২ মিলিয়ন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৪,৫০,০০০ টন কার্বন কম নিঃসরণ হয়েছে এবং গত বছর “সুস্থ ও সুসংহত পরিবেশ” প্রদানের জন্য, স্থানীয় টেকসই উন্নয়নে হুয়াওয়ে বিশ্বব্যাপী ১৭৭ টি কমিউনিটি সহায়তা প্রোগ্রাম সংগঠিত করে।
হুয়াওয়ে সম্পর্কে
হুয়াওয়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। আরও সংযুক্ত এবং বুদ্ধিদীপ্ত পৃথিবী গড়ে তোলার মাধ্যমে মানুষের জীবনমান এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করাই প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য। নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে হুয়াওয়ে একটি পরিপূর্ণ আইসিটি সল্যুশন পোর্টফোলিও প্রতিষ্ঠা করেছে যা গ্রাহকদের টেলিকম ও এন্টারপ্রাইজ নেটওয়ার্ক, ডিভাইস এবং ক্লাউড কম্পিউটিং-এর সুবিধাসমূহ প্রদান করে। হুয়াওয়ের সম্পূর্ণ মালিকানা এর এক লক্ষ ৮০ হাজার কর্মীর যারা বিশ্বজুড়ে টেলিকম সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান, এন্টারপ্রাইজ এবং গ্রাহকদের সর্বচ্চ সেবা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ১৭০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে সেবা দিচ্ছে যা বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ জনসংখ্যার সমান। উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল শেষে হুয়াওয়ের আয় প্রথমবারের মতো ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে যা আগের বছরের চেয়ে ১৯.৫% বেশি। এছাড়া গবেষণা ও উন্নয়নে (আরএন্ডডি) বিনিয়োগ মোট বার্ষিক রাজস্বের ১৪.১%, যার ফলেই পণ্য ও সল্যুশনের ক্ষেত্রে হুয়াওয়ে শীর্ষস্থান নিশ্চিত করতে পেরেছে। বিশেষ করে ফাইভজি’র ক্ষেত্রে হুয়াওয়ে বিশ্বব্যাপী ৪০টি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং ইতোমধ্যে ৭০ হাজার বেইজ স্টেশন হস্তান্তর করেছে। প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় হুয়াওয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যান্যদের চেয়ে অন্তত ১২ থেকে ১৮ মাস এগিয়ে।