লড়াই বেধেছে অপো আর শাওমির। কে জিতবে? আপাতত বাজার গবেষকেরা বলেছে, গত তিন মাসে বিশ্বজুড়ে অপোকে পেছনে ফেলেছে শাওমি। কিন্তু অপো কি আর ছেড়েে কথা বলবে? আগামী প্রান্তিকে আরও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে চার আর পাঁচ নম্বর পজিশন নিয়ে। কারণ, এক দুই ও তিন মোটামুটি ফিক্স করা। একে যথারীতি স্যামসাং, দুইয়ে অ্যাপল আর হুয়াওয়ে তিনে।
বাজার দখলের হিসেবে শীর্ষস্থানে থাকা ব্র্যান্ডগুলো হচ্ছে স্যামসাং, অ্যাপল, হুয়াওয়ে, শাওমি ও অপো। এর বাইরে নকিয়াসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলো ভালো করলেও এখনো সেরা ৫ এর তালিকার বাইরে। অথচ, কি এক দিন ছিল নকিয়ার!
যাই হোক, স্মার্টফোনের বাজারে এখন তীব্র প্রতিযোগিতা। কে কাকে হটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারে তারই প্রতিযোগিতা চলছে। এ প্রতিযোগিতায় ভারত ও চীনের বাজারে দ্রুত জনপ্রিয় হওয়া চীনা স্মার্টফোন ব্র্যান্ড শাওমি অনেকটাই এগিয়েছে। বার্ষিক ১২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করে স্মার্টফোনের বাজারে চতুর্থ অবস্থানে উঠে এসেছে শাওমি।
বাজার গবেষকেরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোন বাজারে আসার হার ২ শতাংশ কমলেও শাওমির প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে অনেক। অন্যদিকে, অ্যাপল-স্যামসাংয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্যামসাং বেশ কিছুটা এগিয়েছে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজি অ্যানালাইটিকস সম্প্রতি স্মার্টফোনের বাজার সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।
স্ট্র্যাটেজি অ্যানালাইটিকসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ এ তিন মাস বা প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে ২০১৮ সালের প্রথম প্রান্তিকে ২ শতাংশ কম স্মার্টফোন বাজারে এসেছে। ২০১৭ সালের প্রথম প্রান্তিকে যেখানে ৩৫ কোটি ৩৮ লাখ স্মার্টফোন বাজারে এসেছিল, সেখানে ২০১৮ সালের প্রথম প্রান্তিকে এসেছে ৩৪ কোটি ৫৪ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন। এ সময় চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা অপোকে পেছনে ফেলে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে আরেক চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা শাওমি। অপো নেমে গেছে স্মার্টফোনের তালিকার পাঁচ নম্বরে।
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে শাওমি ২ কোটি ৮৩ লাখ ইউনিট ফোন এনে বাজারে আট দশমিক দুই শতাংশ দখল করেছে। ২০১৭ সালের প্রথম প্রান্তিকে শাওমির দখলে ছিল বাজারের মাত্র তিন দশমিক ছয় শতাংশ।
অন্যদিকে, অপো এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে ২ কোটি ৪১ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন এনেছে। বাজার দখলের হিসেবে গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে কিছুটা পিছিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে অপোর দখলে ছিল বাজারের সাত দশমিক ৮ শতাংশ যা এ বছরে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
স্ট্র্যাটেজি অ্যানালাইটিকসের পরিচালক লিন্ডা সুই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে ছাপিয়ে শাওমির ১২৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারতে শাওমি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৭ শতাংশ বাজার দখল করে পাঁচে নেমে গেছে অপো যা এক বছর আগে ছিল প্রায় ৮ শতাংশ। শাওমির দ্রুত খুচরা বিক্রি বাড়ানো এবং আরেক চীনা স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হুয়াওয়ের উন্নত অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের পোর্টফোলিও বাড়ানোয় তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে অপো।
এতো গেল চার আর পাঁচ নম্বরের যুদ্ধ। স্মার্টফোন বাজারের শীর্ষস্থান নিয়েও তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এ প্রান্তিকে দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাংকে হটিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছিল মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। তবে, বছরের প্রথম প্রান্তিক অর্থাৎ, জানুয়ারি থেকে মার্চ এ তিন মাসের হিসাবে আবার শীর্ষে উঠে এসেছে স্যামসাং। এ সময় সাত কোটি ৮২ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বাজারে এনে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ দখলে নিয়েছ স্যামসাং। অন্যদিকে ৫ কোটি ২২ লাখ ইউনিট আইফোন বাজারে এনে দ্বিতীয় অবস্থানে নেমে গেছে অ্যাপল। অ্যাপল দখল করেছে বাজারের ১৫ দশমিক এক শতাংশ।
স্মার্টফোনের বাজারে তৃতীয় অবস্থানটির অবশ্য কোনো রদবদল হয়নি। বাজারের ১১ দশমিক ৪ শতাংশ দখল নিয়ে তৃতীয় অবস্থান ধরে রেখেছ হুয়াওয়ে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে তিন কোটি ৯৩ লাখ ইউনিট ফোন বাজারে এনেছে হুয়াওয়ে।
স্ট্র্যাটেজি অ্যানালাইটিকসের নির্বাহী পরিচালক নেইল মাউসটন বলেছেন, উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ ও দক্ষিণ কোরিয়ার বাজার ধরে রেখেছে স্যামসাং। অবশ্য চীন ও ভারতে শাওমির মতো ব্র্যান্ডের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে স্যামসাংকে। বার্ষিক হিসেবে অ্যাপলের ৩ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত চার প্রান্তিকের মধ্যে টানা তিন প্রান্তিকে আইফোনের বিক্রি বেড়েছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আইফোন এক্সের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এ ছাড়া ভারত ও আফ্রিকায় অ্যাপলের বাজার বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
স্মার্টফােনের বাজারে সেরা ৫, শাওমি কত নম্বরে?
previous post