প্রতিবছরের মতো এবারও অনন্যা বর্ষব্যাপী আলোচিত-আলোকিত দশ কৃতীনারীকে সম্মাননা প্রদান করা হলো। ৭ এপ্রিল ২০১৮ শনিবার বিকাল ৪.৩০মিনিটে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা ২০১৭’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবারের সম্মাননাপ্রাপ্ত নারীরা হলেন- অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম (শিক্ষা), ড. মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানুম (প্রশাসনিক কর্মকর্তা), ফারজানা চৌধুরী (নারীউদ্যোক্তা/কর্পোরেট নারী), নবনীতা চৌধুরী (সাংবাদিকতা), স্বপ্না রাণী (গ্রামীণ নারীর স্বনির্ভরতা), নাদিরা খানম (তৃতীয় লিঙ্গ-অধিকারকর্মী), মাহফুজা আক্তার কিরণ (ক্রীড়া সংগঠক), নাজিয়া জাবীন (সমাজসেবা), শারমিন সুলতানা সুমি (সংগীত) ও মারিয়া মান্ডা (খেলাধুলা)
অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানপর্বে নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যনন্দন নৃত্যসংগঠন এবং সংগীত পরিবেশন করেন অণিমা মুক্তি গোমেজ। পুরস্কারপ্রদান পর্বে অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের পরিচালনায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন ডাঃ দীপু মনি, এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে সম্মাননাজয়ী নারীদের ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। উত্তরীয় পরিয়ে দেন সেলিনা হোসেন, ক্রেস্ট তুলে দেন অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম এবং সনদ তুলে দেন ডা. দীপু মনি।
অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে শীর্ষদশজয়ী নারীদের ভেতর অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষায় নারীরা অনেক এগিয়ে গেছে। তৃতীয় লিঙ্গের নাদিরা খানম বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে তৃতীয় লিঙ্গের কণ্ঠস্বর হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ কৌটার দাবি জানাই আমরা। মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, অন্যান্য খেলাধুলার মতো ফুটবলেও মেয়েরা ভাল করছে। ওদের সঠিক যতœ নিতে পারলে মেয়েরা খেলাধুলায় বাংলাদেশকে বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে পারবে। নবনীতা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে প্রায় সবখানে নারীদের জন্য প্রতিবন্ধকতা আছে। কিন্তু সত্য হলো কোনোকিছুই বাংলার মেয়েদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। মেয়েরা বের হয়ে এসেছে। অধিকার আদায় করে নিচ্ছে। স্বপ্না রাণী বলেন, আমি জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে অটোরিকশা চালানো শুরু করেছি। আমার সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছি। ফারজানা চৌধুরী বলেন, দেশের অর্থনীতিতে নারীদের অবদান এখন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। একদিন হয়ত জিডিপিতে পুরুষের সমান তারা অবদান রাখবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, অনন্যা বিভিন্ন সেক্টর থেকে নারী-অগ্রযাত্রার নমুনা আমাদের সামনে তুলে আনছে প্রতিবছর।
সভাপতির বক্তব্যে ডাঃ দীপু মনি বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নে নারীর অবদান এখন দৃশ্যত এবং উল্লেখযোগ্য। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীরাই প্রতিনিধিত্বশীল ভূমিকা রাখছেন।
অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, অনন্যা প্রতিবছর শীর্ষদশ নারী নির্বাচনে বেশ হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। কারণ নারীরা এখন সমাজ, অর্থনীতি, রাষ্ট্র, শিল্প ও সংস্কৃতির নানা ক্ষেত্রে এত বেশি অবদান রাখছেন যে মাত্র দশজনকে নির্বাচন করা দুঃসাধ্য কাজ হয়ে পড়েছে। আমরা হয়ত কয়েকজন প্রতিনিধিকে তুলে আনছে পারছি মাত্র।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সাল থেকে অনন্যা শীর্ষদশ সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিবছর নিজ নিজ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশের ১০জন বিশিষ্ট নারীকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।