দেশের বিভিন্ন খাতে অবদান রাখছেন নারীরা। অনন্যা শীর্ষদশ ২০১৭ তালিকায় উঠে এসেছে যাঁদের নাম তাঁদের সম্পর্কে জানুন:
অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম
শিক্ষা
অধ্যাপক সাদেকা হালিম ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ৪৭ বছরের ইতিহাসে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রথম নারী ডিন।
তাঁর মা-বাবা দুজনই ছিলেন শিক্ষক। বাবা অধ্যাপক ফজলুল হালিম চৌধুরী ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। মা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। তাঁর পৈতৃক নিবাস কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নে। ঢাকার উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। ১৯৮৮ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন নিজ বিভাগে। পরবর্তী সময় কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে পড়তে যান কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিতে। সেখান থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি নেন তিনি। এরপর কমনওয়েলথ স্টাফ ফেলোশিপ নিয়ে পোস্ট-ডক্টরেট করেন যুক্তরাজ্যের বাথ ইউনিভার্সিটি থেকে।
সাদেকা হালিম ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত তথ্য কমিশনে প্রথম নারী তথ্য কমিশনার পদে প্রেষণে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর লেখা প্রায় ৫০টি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। লিঙ্গ-সমতা, বন ও ভ‚মি, উন্নয়ন, আদিবাসী ইস্যু, মানবাধিকার এবং তথ্য অধিকার প্রভৃতি তাঁর গবেষণার বিষয়।
ড. মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানুম
প্রশাসনিক কর্মকর্তা
দেশের প্রথম নারী বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে সম্প্রতি সিলেটে দায়িত্বপ্রাপ্তির একবছর পূর্ণ করেছেন ড. মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানুম। তার সততা এবং দক্ষতায় সিলেটের মানুষ মুগ্ধ। যশোরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাঘার পাড়া উপজেলার আন্দুলবেড়িয়া গ্রাম থেকে উঠে আসেন এই মেধাবী কর্মকর্তা। নড়াইল জেলায় মামাবাড়িতে, তুলারামপুর ইউনিয়ন চাচড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। ছোটবেলায় থেকেই তাঁর বিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখার ইচ্ছে ছিল, যাতে বড় কিছু করতে পারেন। কিন্তু এতটাই প্রত্যন্ত গ্রামে তার বাবার বাড়ি যে, পড়ালেখার জন্য তাকে মামার বাড়ি চলে আসতে হয়। তার বড় মামি এগিয়ে আসেন বাতিঘর হয়ে। তুলারামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হন নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে। মামাবাড়ি থেকে প্রতিদিন ভিক্টোরিয়া কলেজে যেতে তাকে ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হতো। লোকাল বাস ও পায়ে হাঁটা পথে নিত্য যাতায়াত করেই তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাশ করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করার পর ১৯৮৬ সালে ¯^ামীর অনুপ্রেরণায় অষ্টম ব্যাচের বিসিএস ক্যাডার হয়ে তিনি প্রবেশ করেন সরকারি চাকরিতে। ১৯৯৫ সালে জাপান গিয়ে পিএইচডি অর্জন করেন। সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে সততা ও কর্মনিষ্ঠার এক অনন্য নজির গড়ে তুলেছেন নাজমানারা খানুম।
ফারজানা চৌধুরী
নারীউদ্যোক্তা/ কর্পোরেট নারী
মেধা ও দূরদর্শী পরিকল্পনার ভেতর দিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন ফারজানা চৌধুরী। গ্রীন ডেল্টা ইন্সুরেন্স কো¤পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর বাংলাদেশে বীমার জগতে ঈর্ষণীয় সাফল্যের দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে গ্রীন ডেল্টা ইন্সুরেন্স কতগুলো যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রেডিমেড গার্মেন্টস খাতে আরএমজি ও কর্মকর্তাদের জন্য হেলথ বীমা, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সুদিন এবং নিরাময় বীমা, প্রবাসীদের জন্য মাইগ্র্যান্ট লেবার প্রবাসী বীমা, নারীদের জন্য নিবেদিতা প্রজেক্ট ও দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড কৃষির জন্য জলবায়ুর উপর বীমার ব্যবস্থা করে গ্রীন ডেল্টা ইন্সুরেন্স কো¤পানি বীমা জগতে অগ্রসর ভ‚মিকা পালন করে চলেছে।
গ্রীন ডেল্টার ‘নিবেদিতা’ এখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও সমাদৃত। নিবেদিতা ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে নারীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য অবদান রাখায় বাংলাদেশের প্রথম এসডিজি পায়োনিয়র হিসেবে ফারজানা চৌধুরীকে ¯^ীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট। তিনি অস্ট্রেলিয়ার মনাশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা প্রশাসনে মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি ব্র্যাক ব্যাংকে সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে এসএমই ব্যাংকিংয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রত্যয়, শ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি আজ নারীদের আদর্শের একজন।
স্বপ্না রাণী
গ্রামীণ নারীর স্বনর্ভিরতা
স্বপ্না রাণীর গল্প অনেকটা স্বপ্নের মতো। উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম শহরে একজন নারী অটোরিকশা চালাবেন, এটা বাংলাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের রক্ষণশীল সমাজ ভালো চোখে দেখে না। কিন্তু কী করবেন স্বপ্না রাণী? বিধবা মা অভাবের সংসারে পুতুলখেলার বয়সেই বিয়ে দেন স্বপ্না রাণীকে। অত্যাচার শুরু করে যৌতুকের জন্য। স্বপ্না রাণী কাজ শুরু করেন জোগালি কিংবা মাটি কাটার। এভাবে দিন চলে অর্ধাহারে, অনাহারে। কিন্তু এক দিন সকাল শুরু হয় অন্যভাবে। এমন সকাল যা পাল্টে দেয় কারো কারো জীবন। স্বপ্না র এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল হক গ্রামের নারীদের অটোরিকশা চালানোর একটি সরকারি প্রকল্পের কথা বলেন। কোনো দ্বিধা নয়, স্বপ্না রাণী লুফে নেন সেই প্রস্তাব। অল্পদিনের মধ্যে ঝানু চালকের মতো অত্যন্ত সাবলীলভাবে অটোরিকশা চালাতে শুরু করেন স্বপ্না রাণী। নিজে পড়তে পারেননি, শিকার হয়েছেন বাল্য বিবাহের, কিন্তু ছেলে ও মেয়েকে তিনি সাধ্যমতো পড়ালেখা করাতে পারছেন, পেটপুরে খাওয়াতে পারছেন। শিক্ষাবঞ্চিত একজন গ্রামীণ-নারী হয়েও অদম্য সাহস ও চেষ্টার মাধ্যমে কীভাবে নিজের পায়ে শক্তভাবে দাঁড়াতে হয়, স্বপ্না রাণী তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
নাদিরা খানম
তৃতীয় লিঙ্গ-অধিকারকর্মী
আমাদের দেশে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মানুষই ভাবেন না অনেকে। কিন্তু সারা বিশে^ই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা ¯^-¯^ প্রতিভা অনুযায়ী সমাজ-রাষ্ট্রে বিশেষ অবদান রাখছেন। বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে হিজড়াদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে ¯^ীকৃতি দিয়েছে। আর তৃতীয় লিঙ্গের একজন প্রতিনিধি হয়ে দিনাজপুরের মেয়ে নাদিরা খানম রংপুর সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নতুন পথের দিশারি হয়েছেন। মোবাইল ফোন প্রতীক নিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৮, ২০ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন নাদিরা খানম। আঠারো বছর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন নাদিরা। আদমজী জুট মিলসের কর্মকর্তার চার সন্তানের মধ্যে নাদিরা দ্বিতীয়। নাদিরা মেধাবী ছিলেন, জীবনটা আর দশজনের মতো খুব ¯^াভাবিক ও সহজ হতে পারত। কিন্তু সব কিছু উল্টেপাল্টে দেয় তার তৃতীয় লিঙ্গের পরিচয়, যেই পরিচয়ে তার কোনো হাত নেই। নাদিরা খানমের সেই মর্মস্পর্শী সংগ্রামের কথা শুনতে শুনতে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যাপারে যেকেউ নতুন করে ভাবতে শিখবে। এই কারণে নাদিরা খানমের কাঁটা-বিছানো-পথের গল্প বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত অনুপ্রেরণার।
মাহফুজা আক্তার কিরণ
ক্রীড়া সংগঠক
বাংলাদেশে নারীদের ফুটবল যে এগিয়ে যাচ্ছে, তার পেছনের অন্যতম প্রধান কারিগরের নাম মাহফুজা আক্তার কিরণ। তাঁর নেতৃত্বে মেয়েদের ফুটবলে সাফল্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসে ব্রোঞ্জ পদক এবং ২০১৫ সালে নেপালে এবং ২০১৬ সালে তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল রিজিওনাল চ্যা¤িপয়নশিপে শিরোপা জয়, ২০১৬ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যা¤িপয়শিপের ঢাকা পর্ব চ্যা¤িপয়ন হয়ে চ‚ড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন। এটি দেশের যে কোনো পর্যায়ের ফুটবলে প্রথম দল হিসেবে এশিয়ার সেরা আটে খেলা।
সম্প্রতি তিনি সংগঠক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার সদস্য। ফিফার সদস্য হওয়া ছাড়াও মাহফুজা আক্তার কিরণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানাভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ফিফার ম্যাচ কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন অনূর্ধ্ব-২০ মহিলা বিশ্বকাপ ও যুব মহিলা বিশ্বকাপে। ফিফার প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটিরও ডেপুটি চেয়ারম্যান তিনি। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কিরণ সংস্থাটির মহিলা কমিটিরও সদস্য। তিনি ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ মহিলা বিশ্বকাপের সাংগঠনিক কমিটির সদস্য, দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) মহিলা কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং অলি¤িপক কাউন্সিল অব এশিয়ার (ওসিএ) অ্যাথলেটিক কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন।
নবনীতা চৌধুরী
সাংবাদিকতা
সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বিবিসি রেডিওতে কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০১২ সালে একাত্তর টেলিভিশনে কাজ শুরু করেন নবনীতা চৌধুরী। রাজনৈতিক খবর ও বিশ্লেষণধর্মী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা শুরু করেন তিনি। একই সঙ্গে তাঁর জনপ্রিয়তার পারদ চড়তে শুরু করে। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েই ভোরের কাগজের সহসম্পাদক হিসেবে বার্তা কক্ষে যোগ দেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। এইসময় একুশে টেলিভিশনের ‘দেশজুড়ে’ অনুষ্ঠানের গবেষক হিসেবে সুযোগ মেলে নতুন চ্যালেঞ্জের। একুশে টেলিভিশন বন্ধ হয়ে গেলে, নবনীতা যোগ দেন বিটপি এডভার্টাইজিং এজেন্সিতে। এলএলবি অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার সময় বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে প্রযোজক ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট হিসেবে কাজের জন্য নির্বাচিত হন তিনি। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের চাকরি ছেড়ে ঢাকায় ফিরে আইস মিডিয়া লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ‘চারবেলা চারদিক’ স¤পাদনা করেন এবং আইস টুডে, আইস বিজনেস টাইমস, বেঙ্গল বারতা এবং শিল্প সাহিত্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘যামিনী’র ব্যবস্থাপনা স¤পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একাত্তর টেলিভিশনে ‘একাত্তর জার্নাল’ এবং ‘একাত্তর সংযোগ’ সঞ্চালনা তাকে একজন সাহসী ও ¯পষ্টবাদী সাংবাদিক হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়। নবনীতা চৌধুরী বর্তমানে ডিবিসি নিউজের স¤পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।
নাজিয়া জাবীন
সমাজসেবা
রবি ঠাকুর বলেছেন, ‘অন্ধজনে দেহো আলো’। এই আলোটাকে তুলনা করা যায় মৃতজনে প্রাণ দেওয়ার মতো। কিন্তু কি করে আলো দান করা যায় অন্ধজনের নয়নে? তাদের নয়ন আসলে স্পর্শের ভেতরে লুকিয়ে থাকে। সেই স্পর্শ নিয়ে গৌরবময় কাজ করে চলেছেন নাজিয়া জাবীন।
নাজিয়া জাবীনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এক শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমাজভাবনাসমৃদ্ধ পরিবারে। মা ড. নুরুন্নাহার ফয়জন নেসা ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী, ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক। বাবা সৈয়দ মকসুদ আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ছিলেন। ১৯৯০ সালে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় কবলিত হয় পুরো পরিবার। পরিবারের একজনের দুটি চোখ মারাত্মক ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের দুঃখ তাকে ভাবতে শেখায় নতুন করে। ২০০৯ সালে ‘ছড়ার তালে মনটা দোলে’ নাজিয়া জাবীনের লেখা বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ বই, যা ব্রেইলে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা ৬১টি ব্রেইল বই প্রকাশ করেছে। আর সবার মতো দৃষ্টিজয়ী ব্যক্তিরাও খুঁজে নিতে পারছেন তাদের প্রিয় লেখকের বই। স্পর্শ প্রকাশনা আজ দৃষ্টিজয়ীদের ভেতরে ছড়িয়ে দিচ্ছে জ্ঞানের ¯পর্শ, আলোর ¯পর্শ, ভালোবাসার ¯পর্শ, দেশপ্রেম ও মানবতার ¯পর্শ।
শারমিন সুলতানা সুমি
সংগীত
বাংলাদেশের জনপ্রিয় আরবান ফোকরক ব্যান্ড চিরকুটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শারমিন সুলতানা সুমি। তিনি একইসঙ্গে কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার এবং সুরকার। ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। সুমি ‘চিরকুট’-কে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সংগীত উৎসব এসএক্সএস ডব্লিউ-তে প্রথম বাংলাদেশি ব্যান্ড হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। নরওয়ে ট্যুর, ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে কনসার্ট, সাউথ এশিয়ান ব্যান্ড ফেস্টিভ্যাল (ইন্ডিয়া), জাফনা মিউজিক ফেস্টিভ্যাল (শ্রীলঙ্কা), গল লিটার্যা রি ফেস্টিভ্যাল (শ্রীলঙ্কা)-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিসরে অংশ নিয়েছেন। ২০১৫ সালে তিনি ‘ইন্সপাইরিং উইমেন ইন মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘এসিআই-পার্সোনা উইমেন অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। কয়েকটি হিট অ্যালবামের পাশাপাশি সুমির ব্যান্ড দল বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনার কাজ করেছে। ‘জালালের গল্প’, ‘টেলিভিশন’ ও ‘আয়নাবাজি’ সিনেমায় সুমির গান জনপ্রিয় হয়েছে। ২০১৭ সালে ‘ডুব’ ছবির একমাত্র গান ‘আহারে জীবন’ দিয়ে ভীষণভাবে প্রশংসিত হন তিনি।
মারিয়া মান্ডা
খেলাধুলা
বাবা বীরেন্দ্র মারাক এত ছোট বয়সে মারা গেছেন যে, পিতৃস্নেহের কোনো স্মৃতি নেই মারিয়ার জীবনে। বাবার মৃত্যুর পর অভাবী সংসারে মা এনাতো মান্ডা বাড়ি বাড়ি কাজ করে কোনো রকমে জীবনধারণ করেন। এমন একটি হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা মারিয়া মান্ডাই আজ দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের স্মারক। বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৫ নারীদলের অধিনায়ক তিনি। সাত বছর আগে বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু। ২০১৩ সালে ধোবাউড়ার কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম চ্যা¤িপয়ন হওয়া দলের সদস্য তিনি। ২০১৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় দলে ডাক পান মারিয়া। তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যা¤িপয়নশিপে তার সহ-অধিনায়কত্বেই চ্যা¤িপয়ন হয় বাংলাদেশ। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বে অপরাজিত চ্যা¤িপয়ন দলের সহ-অধিনায়কও মারিয়া। এরপর জায়গা করে নেন মূল জাতীয় দলে। অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে তার যোগ্য নেতৃত্বে চার ম্যাচে শতভাগ জয়ে অপরাজিত থেকেই শিরোপা জিতল বাংলাদেশ। এখনো গুছিয়ে কথা বলতে কষ্ট হয় মারিয়ার। কিন্তু কথায় না বড় হয়ে মারিয়া মান্ডা কাজে হয়েছেন সবচেয়ে বড়। সেই কারণে রতœগর্ভা মা এনাতো মান্ডার দুর্বিষহ কষ্টের জীবনও সহজ হয়েছে অনেক। মারিয়া মান্ডা প্রমাণ করেছেন জীর্ণকুটিরে আটকে রাখা যায় না প্রতিভার স্ফুরণ।