২০১৭-১৮ অর্থবছরের শুরুতে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে পোশাক খাত হোঁচট খেলেও অতিদ্রুতই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান এ খাতটি। জুলাই-অক্টোবর সময়ের জন্য রপ্তানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এ খাত এসময়ে আয় হয়েছে তার থেকেও বেশি। তবে ওভেন গার্মেন্টস থেকে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা অর্জিত হয়নি। একই সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি খাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় সামগ্রিক রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার থেকে কিছুটা কম হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে তৈরি পোশাক খাত বা আরএমজিতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯৩২ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৯৪৩ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ পোশাক খাতের রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি হয়েছে ১১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার বা ১ দশমিক ২৩ শতাংশ।
একই সঙ্গে এ রপ্তানি আয়ের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায়ও অনেক বেশি । ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে আরএমজি খাত থেকে রপ্তানি আয় হয় ৮৮২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসের আয় আগের বছরের তুলনায় ৬১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বা ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি ।
তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৬০ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে রপ্তানি আয় হয়েছিল ২৪৭ কোটি ৯২ লাখ ডলার। অর্থাৎ জুলাই মাসে পোশাক খাতের রপ্তানি আইয়ের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার থেকে১২ কোটি ৫৮ লাখ ডলার কম।
তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় আসে নিটওয়্যার ও ওভেন গার্মেন্টস এই দুটি মাধ্যম থেকে। এর মধ্যে নিটওয়্যার থেকে জুলাই-অক্টোবরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৬৬ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৪৯৮ কোটি ৬২ লাখ ডলার।
আর ওভেন গার্মেন্টস থেকে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৬৫ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৪৪৫ কোটি ১৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ তৈরি পোশাক খাতের দুটি মাধ্যমের মধ্যে নিটওয়্যার থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় হলেও ওভেন গার্মেন্টসের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
এদিকে ওভেন গার্মেন্টস’র পাশাপাশি ম্যানুফ্যাকচারিং, কেমিক্যাল পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, রাবার, কাঠ ও কাঠজাত পণ্য, হাতে তৈরি সামগ্রী, বিশেষায়িত বস্ত্র, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্যসহ বেশ কয়েকটি খাতের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ফলে সামগ্রিক রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি।
জুলাই-অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ হাজার ১৫৯ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ১ হাজার ১৫০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ অর্থবছরের চার মাসে রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার থেকে কম এসেছে ৮ কোটি ৬২ লাখ ডলার বা দশমিক ৭৪ শতাংশ। তবে আগের অর্থবছরের তুলনায় এবার রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।
অর্থবছরের প্রথম মাসে প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের উত্থান ঘটলেও জুলাই-অক্টোবর সময়ে এ খাতটি বড় হোঁচট খেয়েছে। জুলাই মাসে প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি হয়েছিল ২০৮ শতাংশ। আর জুলাই-অক্টোবর সময়ে এ খাতের রপ্তানি আয় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার থেকে ৬৪ শতাংশ কম ।
রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্র পূরণ করতে না পারা অন্য খাতগুলোর মধ্যে- ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, কেমিক্যাল পণ্যে ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে ৩৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ, রাবারে ৩৮ দশমিক ৯১ শতাংশ, কাঠ ও কাঠজাত পণ্যে ৯১ দশমকি ৬৭ শতাংশ, হাতে তৈরি সামগ্রীতে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ নকশা করা সামগ্রিতে ২৫ শতাংশ, কার্পেটে ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, বিশেষায়িত বস্ত্র ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ, হোম টেক্সটাইলে ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ কম আয় হয়েছে।
অপরদিকে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া খাতগুলোর মধ্যে- বিল্ডিং সামগ্রী ১০৪ শতাংশ, পাট ও পাটজাত পণ্যে ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, সুতা ও সুতার পণ্যে ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ, কাগজ ও কাগজের পণ্যে ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ, কৃষি পণ্যে ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং হিমায়িত ও জীবিত মাছ থেকে ৩৭ দশমকি ২১ শতাংশ রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি হয়েছে।