পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নজর এখন ওয়ালটন শেয়ারের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও’র প্রতি। ওয়ালটন শেয়ারে বিনিয়োগ করে ভালো ক্যাপিটাল গেইন করতে পারবে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। আর তাই ওয়ালটনের আইপিও’তে আবেদনের জন্য হাতে টাকা নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন অনেকেই। পুঁজিবাজারের একাধিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।
জানা গেছে, ওয়ালটনের আইপিও আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া চলবে আগামী ৯ খেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত। একটি বিও অ্যাকাউন্টের বিপরীতে সর্বোচ্চ এক লটের জন্য আবেদন করা যাবে। প্রতি লটে থাকছে ২০টি শেয়ার। প্রতি শেয়ারের মূল্য ২৫২ টাকা।
দীর্ঘদিন পরে পুঁজিবাজারে ওয়ালটনের মতো একটি ভালো কোম্পানির আইপিও আসছে শুনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। দেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডের পাশাপাশি কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) ও নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) খুবই ভালো। এসব দিক বিবেচনায় ওয়ালটন শেয়ারে বিনিয়োগে ঝুঁকি কম বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
প্রসপেক্টাসে উল্লিখিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ওয়ালটনের শেয়ার প্রতি মুনাফা বা ইপিএস ৪৫.৮৭ টাকা। নিট সম্পদ মূল্য বা এনএভি ২৪৩.১৬ টাকা। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ অর্থবছরের ইপিএসের বিবেচনায় ওয়ালটন ৮ম স্থানে রয়েছে। এমনকি বহুজাতিক বার্জার পেইন্টস ও গ্রামীণফোনের চেয়েও ওয়ালটনের ইপিএস বেশি। আবার এনএভি’র বিবেচনায় শীর্ষ ৫-এ রয়েছে ওয়ালটন। তালিকাভুক্ত দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে ওয়ালটন দ্বিতীয় অবস্থানে।
ওয়ালটন আইপিও প্রসঙ্গে জয়তুন সিকিউরিটিজ ইন্টারন্যাশনালের বিনিয়োগকারী মো. আতাউর রহমান বলেন, প্রায় সাত মাস পুঁজিবাজারে আইপিও আসা বন্ধ রয়েছে। আর বিগত কয়েক বছরে যেসব কোম্পানি আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজারে এসেছে তাদের অধিকাংশই বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। ফলে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। এমন পরিস্থিতিতে ওয়ালটনের মতো ভালো ও মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আবার আশার হয়েছে। আমার মতো অনেক বিনিয়োগকারী ওয়ালটন আইপিও’তে আবেদন করার জন্য হাতে টাকা নিয়ে বসে রয়েছেন। ওয়ালটন শেয়ারে বিনিয়োগ করে ভালো ক্যাপিটাল গেইন করতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী।
এমটিবি সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী কামরুজ্জামান তন্ময় বলেন, ওয়ালটন পুঁজিবাজারে আসছে এটা অত্যন্ত খুশির সংবাদ। কোম্পানিটি বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স খাতের র্শীষ ব্র্যান্ড। ওয়ালটনের শেয়ার প্রতি এনএভি ও ইপিএস খুব ভালো। তারা পুঁজিবাজারে এলে ভালো শেয়ারের যোগান যেমন বাড়বে, তেমনি আমার মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে।
ইবিএল সিকিউরিটিজের সদ্য বিও হিসাবধারী মো. মামুন সরদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ভাবছিলাম শেয়াবাজারে বিনিয়োগ করব। কিন্তু পুঁজিবাজারে ধারাবাহিকভাবে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করায় বিনিয়োগের সাহস করিনি। সম্প্রতি ওয়ালটন পুঁজিবাজারে আসছে শুনে বিও এক্যাউন্ট খুলেছি। ওয়ালটনই হবে আমার প্রথম আইপিও। মূলত ওয়ালটনের কারণেই পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া। ওয়ালটন শেয়ারে বিনিয়োগ করে ভালো লভ্যাংশ পাবো বলে প্রত্যাশা করছি।
প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের চিফ বিজনেস অপারেশন (সিবিও) কাজী আহসান হাবিব বলেন, ওয়ালটনের ইপিএস ও এনএভি খুবই আকর্ষণীয়। ঋণও তেমন নেই। সার্বিক বিবেচনায় ওয়ালটন নিঃসন্দেহে একটি ভালো স্টক। তাই কোম্পানিটির সাবক্রিপশন খারাপ হওয়ার সুযোগ নেই। আমার বিশ্বাস- আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ওয়ালটন পুঁজিবাজারকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে।
সূত্রমতে, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকার তহবিল উত্তোলন করবে ওয়ালটন হাই-টেক। সংগৃহীত তহবিল ব্যবসা সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন, ঋণ পরিশোধ ও আইপিও পরিচালনা খাতে ব্যয় হবে।
এর আগে দেশে সর্বপ্রথম ডাচ পদ্ধতিতে গত ২ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত ওয়ালটনের নিলাম (বিডিং) শেষ কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ করা হয় ৩১৫ টাকা। আইন অনুসারে, কাট-অফ প্রাইসের ১০ শতাংশ কমে (ডিসকাউন্ট) আইপিওতে শেয়ার ইস্যুর বিধান থাকলেও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ২০ শতাংশ কমে প্রতিটি শেয়ার ২৫২ টাকায় ইস্যু করবে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।