করপোরেট প্রতিষ্ঠান, অফিসের চেয়ে বাসাবাড়িতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এখন বেশি ব্যবহার হচ্ছে। বছর খানেক আগেই ছিল উল্টো চিত্র। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, বাসাবাড়িতে এখন প্রায় ৩৩০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে, যা দেশের মোট ব্যবহৃত ব্যান্ডউইথের অর্ধেক।
সবার হাতে মোবাইল ইন্টারনেট থাকলেও তা উচ্চগতি নিশ্চিত করতে পারছে না। তাই বাসাবাড়িতে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়া হচ্ছে। নিরবছিন্নভাবে ভালো রেজ্যুলেশনের সিনেমা দেখা, গেম খেলা, ই্উটিউবে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও দেখতে প্রয়োজন উচ্চগতির ইন্টারনেট।
আইএসপিএবি সূত্র বলছে, বাসাবাড়িতে ১০ ও ২০ এমবিপিএস গতির ব্যান্ডউইথের কদর বেশি। বর্তমানে মাসে দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় এই গতির ইন্টারনেট সেবা মিলছে।
আইএসপিএবি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক বলেন, গত এক বছরে দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ১৫ লাখ। যার বেশিরভাগই ঢাকায়। একই সময়ে করপোরেট তথা প্রাতিষ্ঠানিক ইন্টারনেট গ্রাহক বাড়েনি। গত এক বছরে দেশে ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসা না বাড়াকে এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন।
ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসার সুযোগ তৈরি হলে দেশে প্রাতিষ্ঠানিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা আরও বাড়বে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির হিসাব মতে, (গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত) ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৭ লাখ ৩৩ হাজার।
ইমদাদুল হক বলেন, ২০১৯ সালে আমাদের টার্গেট ৩০ লাখ নতুন গ্রাহক। আইএসপিগুলো যেভাবে ঢাকার বাইরে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করছে তাতে এই টার্গেটের কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি মোবাইল ইন্টারনেট থাকার পরও বাসাবাড়িতে ওয়াই-ফাই সংযোগ চালুর হার বেড়েছে। এর মাসিক বিলের পরিমাণ এক থেকে দেড় হাজার টাকা।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভালো রেজ্যুলেশনে মুভি দেখা, ইউটিউবে শিক্ষামূলক ভিডিও দেখা, অনলাইনে গেম খেলা, রান্নার অনুষ্ঠান দেখা, হালে নাটক দেখার পরিমাণ বেশি দেখতে পাই আমরা বাসাবাড়ির ইন্টারনেট ব্যবহারে। বাসায় ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়ার আগে গেমাররা আমাদের কাছে জানতে চায় ম্যাক্সিমাম ব্যান্ডউইথ কত পাওয়া যাবে, সিঙ্গাপুর, ইউরোপের বিভিন্ন অনলাইনের গেমস স্পটের ল্যাটেন্সি কেমন?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইএসপিগুলোর মাধ্যমে ট্রিপল প্লে (ভয়েস, ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ) সেবা চালু হলে বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার আরও বাড়বে। এটা চালু হলে একজন গ্রাহক কম খরচে একটি ক্যাবলের মাধ্যমে তিনটি সেবা ব্যবহার করতে পারবে। ফলে ঢাকার শহরের ঝুলন্ত তারের (ওভারহেড ক্যাবল) জঞ্জালও কমবে।
অগ্নি সিস্টেমস, আম্বার আইটি, অপটিম্যাক্স কমিউনিকেশন লিমিটেড, লিংকথ্রিসহ একাধিক আইএসপি এখন বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট সেবাদানকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
এ বিষেয় জানতে চাইলে আম্বার আইটির প্রধান নির্বাহী আমিনুল হাকিম বলেন, বাসাবাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগে ভালো সাড়া পাচ্ছি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ২২টি জেলায় আম্বার আইটি তাদের সেবা বিস্তৃত করেছে। গত তিন-চার মাসে সব আইএসপিই ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বাসাবাড়ি থেকে ২০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট চাওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, যদিও বাসাবাড়িতে মাসে (১২০০ টাকা খরচে) ১০ এমবিপিএস গতির চাহিদা আসছে বেশি।
জানা গেছে, বাসাবাড়িতে ১ হাজার টাকায় মাসে ৮-১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেটের চাহিদা বেশ কিছু দিন ধরে। তবে আইএসপিগুলোর প্রিমিয়াম সেবা পেতে হলে খরচের পরিমাণ কিছু বাড়বে, গতিও পাওয়া যাবে বেশি।