কলরেট বেড়ে গেছে। সাধারণ গ্রাহকের খরচ হচ্ছে বেশি। বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ১৯ আগষ্ট জাতীয় প্রেসক্লাব সম্মুখে “ভয়েস কলরেট বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন” অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন সিপিবি’র সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, ন্যাশনাল কংগ্রেস বাংলাদেশের চেয়ারম্যান কাজী ছাবের আহমেদ ছাব্বীর, দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি হারুন অর রশিদ খান, নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন, সমাজাতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সামছুল আলম প্রমুখ।
মানবন্ধনে সঞ্চালনা করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য কাজী আমান উল্যাহ মাহফুজ।
মানববন্ধনে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন এর সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনায় না নিয়ে শুধুমাত্র অপারেটরদের স্বার্থ বিবেচনা করে ভয়েস কলের ফ্লোর রেটের কল রেট ২৫ পয়সা থেকে বৃদ্ধি করে ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করেছে।
আমরা মনে করি এ ধরণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার পূর্বে গ্রহকদের মতামত নেয়া উচিৎ ছিল। কারণ বর্তমানের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ফলে গ্রাহকদের ব্যায় বৃদ্ধি পাবে বৈ কমবে না। এর জন্য কমিশন প্রয়োজনে গণ শুনানী করতে পারতো। তা না করে তাদের নেয়া সিদ্ধান্ত গ্রাহককে মানতে বাধ্য করা একটি অগণতান্ত্রিক ও অনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমরা গণমাধ্যমে বিটিআরসি কর্মকর্তাদের বক্তব্যে জানতে পারলাম, পূর্বের ২৫ পয়সা কাগজে কলমে হলেও রেট পরতো ৩৫ পয়সার উপরে।
আমরা মনে করি, তাদের এ ধরণের বক্তব্য ভোক্তা অধিকার আইনের পরিপন্থি। এতে করে অপারেটরদের দুর্নীতিকে প্রকাশ্যে নিয়ন্ত্রণ কমিশন প্রশয় দিয়েছে। বর্তমান রেটে অপারেটর+আইসিএক্স+ আইজডব্লিউ+এনটিটিএন এর ভ্যাট যোগ করলে কলরেট দাঁড়াবে প্রায় ৫২ পয়সা যা পূর্বের অফনেটের ফ্লোররেটের সমান। এই কলরেট বৃদ্ধির ফলে অপারেটররা সাময়িকভাবে লাভবান হলেও ভবিষ্যতে গ্রাহকরা বিকল্প পথে কথা বলা শুরু করলে অপারেটরা ব্যবসায় বিনিয়োগ হারাতে পারে।
বর্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এ ধরনের হটকারি সিদ্ধান্ত জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া যায় কি না তা আমাদের জানা নেই। যদিও এমএনপি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে দুর্বল অপরারেটরদের বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে এ ধরণের সিদ্ধান্ত বিটিআরসি নিয়েছে বলে আমরা মনে করি। অথচ অত্যান্ত দুঃখের বিষয় সরকার বাজেট ঘোষণায় ইন্টারনেটের মূল্যের উপর ১০% ভ্যাট প্রত্যাহার করলেও বাজেট পাশ হওয়ার দেড় মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও বাস্তবায়ন হয় নাই।
অন্যদিকে কল রেটের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ জারি হলো। আমরা সরকারের কাছে দাবী করছি এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে জনমত যাচাই করে বাস্তবায়ন করার।
মানববন্ধনে সিপিবি’র সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, শুধুমাত্র অপারেটরদের আবেদনের প্রেক্ষিতে লোকচক্ষুর অন্তরালে এই মূল্যবৃদ্ধি মেনে নেওয়া যায় না। অতিদ্রুত মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করে জনগণের কাছ থেকে নেয়া অতিরিক্ত অর্থ জনগণকে ফেরত প্রদান করার দাবি জানাচ্ছি।
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করেন।
বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, নতুন এই কলরেটের ফলে গ্রাহকের পকেট থেকে বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হবে। তাই মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে সরকারকে দ্রুত নতুন কলরেট বাতিল করা আহ্বান জানাই।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে গ্রামীণফোন থেকে ৯০ শতাংশ কল হয় অননেটে, ১০ শতাংশ কল অফনেটে হয়। অন্যদিকে, সরকারের মালিকানাধীন অপারেটর টেলিটকের ১০ শতাংশ কল অননেটে ও ৯০ শতাংশ কল অফনেটে হচ্ছে। রবি ও বাংলালিংকের অননেট-অফনেট কলের পরিমাণ ৭০ ও ৩০ শতাংশ।