দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে নিজস্ব প্রযুক্তি উদ্ভাবনে তরুণদের নিয়োজিত হবার আহবান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল মোমেন।সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০১৯’ উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতের অগ্রগতির প্রশংসা করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
‘মেড ইন বাংলাদেশ’ স্লোগানে শুরু হলো তিনদিন ব্যাপী দেশের সর্ববৃহৎ প্রযুক্তি প্রদর্শনী। ১৪ অক্টোবর থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনীটি। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত।
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, আইডিয়া প্রজেক্ট, এটুআই এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এর যৌথ উদ্যোগে ডিজিটাল পণ্য এবং তরুণ প্রজন্মের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি প্রদর্শন করা হবে এখানে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংকের গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশ এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্রততম অর্থনীতির একটি। জাতিসংঘ বলছে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে গত দশ বছরে ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রণীত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ পরিকল্পনা বাংলাদেশকে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মোমেন।
সাবেক ক‚টনৈতিক মোমেন বলেন, তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক বাজার সপ্রসারনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্ব দরবারে নতুন পরিচয় পেয়েছে। যার পেছনে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং সময়ভিত্তিক বাস্তবায়ন।
দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রশংসা করে বক্তব্য শুরু করেন তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, এমপি।
জুনায়েদ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ বছরে চার কোটি মোবাইল ফোন আমদানি করে। সরকারের ব্যবসায় বান্ধব নীতির কারণে গত এক বছরে ওয়ালটন, সিম্ফোনিসহ কোরিয়ান স্যামসাং আমাদের হাইটেক পার্কে সেট উৎপাদন করছে।
বাংলাদেশ হাইটেক পার্কের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি ব্যবসায় উদ্যোক্তাদের সরকার সহযোগিতা করে আসছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ।
তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজস্ব সক্ষমতা প্রদর্শন করা হবে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, উদ্ভাবক এবং ব্যবসায়ীদের একই জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় কমিটির প্রধান একেএম রহমতুল্লাহ বলেন, প্রযুক্তিখাতে বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে।
রহমতুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের নেতৃত্বে দেশের প্রযুক্তি খাতে অসামান্য অগ্রগতি হয়েছে।
আইসিটি বিভাগের জেষ্ঠ্য সচিব জিয়াউল আলাম জানান, প্রযুক্তিখাতের স¤প্রসারনের সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে আইসিটি আইন-২০০৯ কে গত দশ বছরে দুইবার হালনাগাদ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, এনডিসি বলেন, তরুণ উদ্ভাবকেরাই ডিজিটাল বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ায় মূখ্য ভ‚মিকা পালন করছে।
হোসনে আরা বেগম জানান, আইসিটি বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে তরুণদের উদ্ভাবনী, ব্যবসায়ীক এবং সেবাভিত্তিক প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
উইটসার মহাসচিব জেমস (জিম) পয়জান্ট বাংলাদেশি তরুণদের স্থানীয় সমস্যা সমাধানে প্রযুক্তি উন্নয়নে মনযোগী হবার আহবান জানান।
বিসিএস সভাপতি শহীদ উল মুনীর বলেন, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) ১৯৮৭ সাল থেকে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছে দিতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৯২ সালে দেশে প্রথমবারের মতো কম্পিউটার মেলার আয়োজন করে বিসিএস। ২০০৯ এবং ২০১০ সালে আমরা বিসিএস ডিজিটাল এক্সপোর আয়োজন করি যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এভাবেই এগিয়ে যাবে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ।
প্রদর্শনীটি সকাল থেকেই সবার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। তবে প্রদর্শনীতে প্রবেশের জন্য প্রদর্শনীর ওয়েবসাইট (https://ddiexpo.com/registration) অথবা স্মার্টফোনে আইওএস (https://apple.co/2ohSA1v) ও অ্যান্ড্রয়েড (https://bit.ly/35j2PDg) থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন করতে হচ্ছে। উল্লেখিত সাইট বা অ্যাপে প্রদর্শনী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পুরো প্রদর্শনী অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিং করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি খাতে দেশের সক্ষমতা, দক্ষতা, হার্ডওয়্যার পণ্য উৎপাদনে সম্ভাবনা এবং কর্মপ্রচেষ্টার বাস্তবচিত্র এই প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও হাই-টেক পার্ক এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নয়ন কাঠামোর অগ্রগতিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া সম্পর্কেও দর্শনার্থীরা সম্যক ধারণা অর্জন করতে পারছেন। দেশীয় প্রযুক্তির সমাহার দিয়ে এবারের প্রদর্শনীকে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। রাখা হয়েছে ৮টি জোন। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ জোনে দেশীয় প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানদের এক ছাদের নিচে পাওয়া যাবে। থাকছে ইনোভেশন জোন।
এই জোনে নিত্য নতুন উদ্ভাবন সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। আইডিয়া প্রজেক্টের ৩০টি প্রজেক্ট, এটুআই এর ৩০টি প্রজেক্ট এবং ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি দিয়ে সাজানো হয়েছে ইনোভেশন জোন। অ্যাক্টিভেশন প্রোগ্রামগুলো থেকে নির্বাচিত সেরা ৩০টি উদ্ভাবন এক্সপোতে প্রদর্শিত হবে এবং প্রদর্শনীটি শেষ হওয়ার পরে শীর্ষ ১০ তরুণ উদ্ভাবককে বঙ্গবন্ধু উদ্ভাবনী অনুদান (বিআইজি) দিয়ে ভূষিত করা হবে। স্টার্টআপ জোনে নতুন উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রজেক্ট সম্পর্কে ধারণা পাবেন দর্শনার্থীরা। মেলার অন্যতম আকর্ষণ রোবোটিক জোন। এই জোনে শিক্ষার্থীদের তৈরি রোবটের পদচারণা রয়েছে।
মঙ্গলে যাওয়ার স্বপ্নকে সত্যি করতে এই প্রদর্শনীতে রয়েছে মঙ্গলযাত্রার নিবন্ধন। ২০৪১ সালে মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার পরিকল্পনাকে বাস্তবে রুপ দিতে এই জোন দর্শনার্থীদের আশার সঞ্চার করছে। বিসিএস এক্সপো জোন এ পাওয়া যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির সকল হালনাগাদ পণ্য। স্বনামধন্য প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানরা তাদের সর্বশেষ প্রযুক্তি প্রদর্শন করছে। প্রযুক্তিপণ্য কেনার সুযোগ মিলছে এই জোনে। এক্সপো জোনে থাকছে ১১০ টি প্যাভেলিয়ন এবং স্টল। ১০০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের (আসুস, এইচপি, ডেল, ইন্টেল, স্যামসাং ইত্যাদি) প্রদর্শন করবে প্রযুক্তি পণ্যের সমাহারে সাজানো হয়েছে। রয়েছে বিটুবি এবং মিডিয়া কর্ণার।
গেমারদের জন্য রয়েছে গেমজোন। নানা ধরনের উপহারের ছড়াছড়ি। দেশের তৈরি বিখ্যাত ল্যাম্বারগিনি গাড়ির আদলে তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ির দেখা পাওয়া যাবে এক্সপোতে। রয়েছে রোবট আঁকাসহ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এক্সপোর দ্বিতীয় দিন দর্শনার্থীদের জন্য দেশের নাম করা ব্যান্ডের অংশগ্রহণে রয়েছে কনসার্ট। তথ্যপ্রযুক্তিতে অবদান রাখার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অবদান রাখা ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদান করা হবে। মেলার লক্ষ্য হচ্ছে হার্ডওয়্যার পণ্য উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচিত করে তোলা। নতুন উদ্যোক্তাদের বাণিজ্যিকভাবে তাদের পণ্য বাজারজাত করতে সহযোগিতা হিসেবে ইন্ড্রাস্ট্রি এবং উদ্যোক্তাদের সেতুবন্ধন করে দিবে এই এক্সপো।
সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ৫ লাখ দর্শনার্থী সরাসরি এবং ১০ লাখ ভিউয়ারস এই প্রদর্শনী অনলাইনে উপভোগ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রদর্শনীর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি রোবট ‘লি’। ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০১৯ এর প্লাটিনাম স্পন্সর ওয়ালটন। গোল্ড স্পন্সর ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স। যৌথভাবে সিলভার স্পন্সর সিম্ফনি এবং ডিবিবিএল। প্রদর্শনীর ফোরজি এলটিই পার্টনার বাংলালায়ন। এডিএন টেলিকম, বাংলাদেশ টেকনো সিটি লিমিটেড, ডাহুয়া, ডেল, এইচপি, হিকভিশন, ইউসিসি এক্সপোর পার্টনার। গেমিং পার্টনার গিগাবাইট। ই-কর্মাস পার্টনার প্রিয়শপ ডটকম।
দেশের ২১টি বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০১৯ এর নলেজ পার্টনার। এক্সপোকে সফল করার জন্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য), সিটিও ফোরাম, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), বাংলাদেশ ওম্যান ইন টেকনোলজি (বিডবিøউআইটি), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এবং বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করছে।