যুক্তরাষ্ট্রে হুয়াওয়ে পণ্য নিষিদ্ধ করার অভিযোগে দেশটির ফেডারেল আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে চীনের টেলিকম প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। ০৭ মার্চ চীনের শেনজেনে হুয়াওয়ের হেডকোয়ার্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান হুয়াওয়ের রোটেটিং চেয়ারম্যান গুও পিং। সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডিফেন্স অথোরাইজেশন অ্যাক্টের (এনডিএএ) ৮৮৯ ধারা চ্যালেঞ্জ করে হুয়াওয়ে এই অভিযোগ দায়ের করে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে হুয়াওয়ে আশা করছে, তাদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেটা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হোক এবং এসব নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে একটি স্থায়ী সমাধান আসুক।
হুয়াওয়ের রোটেটিং চেয়ারম্যান গুও পিং বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস হুয়াওয়ের পণ্য ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। আমরা যথাযথ ও শেষ উপায় হিসেবে এই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কারণ এই নিষেধাজ্ঞা শুধু বেআইনিই নয়, বরং একটি স্বচ্ছ প্রতিযোগিতায় হুয়াওয়ের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাহকদেরও ক্ষতি করা। আমরা আদালতের বিচারের দিকে তাকিয়ে আছি এবং বিশ্বাস করি, সেটা হুয়াওয়ে ও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য লাভজনক হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের প্লানোতে ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে এই মামলাটি করেছে হুয়াওয়ে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, এনডিএএ-২০১৯-এর ৮৮৯ ধারা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সরকারি এজেন্সিকে হুয়াওয়ের পণ্য ক্রয় ও সেবা গ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এমনকি নির্বাহী বা জুডিশিয়াল প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া তৃতীয় পক্ষের (যারা হুয়াওয়ের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করে বা তাদের সেবা নেয়) সাথে যোগাযোগ করা এবং গ্যারান্টি বা ঋণ না নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ফলে এই নিষেধাজ্ঞা বিল অব অ্যাটেইনডার ও ডিউ প্রসেস আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করে হুয়াওয়ে। শুধু তাই নয় এটা যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানে উল্লেখিত ‘ক্ষমতার বিভাজন’ নীতিমালারও পরিপন্থী। কারণ কংগ্রেস নিজেই এসব আইন তৈরি করছে এবংনিজেদের স্বার্থে নিজেদের মতো করে সেগুলো প্রয়োগ করছে।
হুয়াওয়ের প্রধান আইন কর্মকর্তা সং লিউপিং বলেন, ‘এনডিএএ-২০১৯-এর ৮৮৯ ধারাটি মূলত অসত্য, অপ্রমাণিত এবং অপরিক্ষিত বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। হুয়াওয়ে চীন সরকারের মালিকাধীন, নিয়ন্ত্রিত বা প্রভাবিত নয়। যাইহোক, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুয়াওয়ের খুবই শক্তিশালী ট্র্যাক রেকর্ড আছে। এখনও পর্যন্ত কেউ আমাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি।’
হুয়াওয়ের গ্লোবাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রাইভেসি অফিসার জন সাফোক বলেন, ‘আমরা গর্বিত যে, আমরা বিশ্বের সবচেয়ে উন্মুক্ত, স্বচ্ছ এবং নিরীক্ষিত কোম্পানি। খুব অল্প সংখ্যক কোম্পানি আছে যারা নিরাপত্তা দিতে আমাদের মতো ডিজাইন ডেভলপমেন্ট ও ডিপ্লয়মেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে।’
হুয়াওয়ের মনে করে, এনডিএএ-এর নিষেধাজ্ঞাগুলো হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাহকদের জন্য আরো উন্নত ফাইভজি প্রযুক্তি নিশ্চিত করতে বাধা দিচ্ছে, যা ফাইভজির বাণিজ্যিকীকরণক ও নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করবে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ব্যয়বহুল এবং হুয়াওয়ের সাশ্রয়ী উন্নত প্রযুক্তির মধ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাম ও দূরবর্তী অঞ্চলে গ্রাহকরা সরকারি ব্যয়বহুল প্রযুক্তি কিনতে বাধ্য থাকবে, যা নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন প্রক্রিয়াকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করবে। এর ফলে ডিজিটাল বিভক্তিকরণ প্রকট হবে। এমনকি হুয়াওয়ের ওপর এসব নিষেধাজ্ঞার ফলে সুস্থ প্রতিযোগিতা বাধাগ্রস্ত হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাহকদের বেশি দাম দিয়ে নিম্নমানের পণ্য কিনতে হবে।
সাম্প্রতিক ইন্ডাস্ট্রি গবেষণায় দেখা গেছে, হুয়াওয়েকে প্রতিযোগিতায় স্বাভাবিকভাবে থাকতে দিলে তারবিহীন অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় ১৫-৪০ শতাংশ কমবে। এর ফলে উত্তর আমেরিকার আগামী চার বছরে অন্তত পক্ষে ২০ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে।
গুও পিং আরো বলেন, ‘যদি এই আইনটি বাদ দেওয়া হয় তাহলে হুয়াওয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরো উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে আসতে পারবে এবং দেশটির সেরা ফাইভজি নেটওয়ার্ক নির্মাণে সহায়তা করতে পারবে। হুয়াওয়ে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। এনডিএএ বাতিল করা হলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষে হুয়াওয়ের সাথে আরো সহজভাবে কাজ করা এবং নিরাপত্তাজনিত ইস্যুগুলো সমাধান সম্ভব হবে।