প্রতি মুহূর্তে বিশ্বে লক্ষ লক্ষ তথ্যের জন্ম হচ্ছে। আবার প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্যের হালনাগাদও হচ্ছে। নানা জরিপের মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর তথ্য সংগ্রহ শেষে তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে পরবর্তী করনীয় নির্ধারণ হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডেটা সায়েন্স। আর এ ধরণের কাজের আয়োজনকে বলা হয় ডেটাথন।সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘হারউইল’ এবং বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন)এনাবলিং সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস ফর বাংলাদেশ (ইএসডিজি৪বিডি) প্রকল্প শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েদের নিয়ে অ্যাডা লাভলেস ডেটাথন ২০২১ এর আয়োজন করে।
বিশ্বের প্রথম নারী প্রোগ্রামার ও বিখ্যাত ব্রিটিশ কবি লর্ড বায়রনের মেয়ে অ্যাডা লাভলেসকে স্মরণ করতে তার নামে আয়োজিত অ্যাডা লাভলেস সেলিব্রেশন ২০২১ -এর অংশ হিসেবে এই ডাটাথন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।এই ডেটাথনে বিজয়ী সেরা তিন টিমকে সম্মানিত করে প্রাইজমানি হাতে তুলে দিল বাংলাদেশ। রাজধানীর ক্রিয়েটিভ আইটি ইন্সটিটিউটের অডিটোরিয়ামে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের হাতে এই প্রাইজমানি তুলে দেয়া হয়। বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক জনাব মুনির হাসান,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব কাজী হাসান রবিন এবং ক্রিয়েটিভ আইটি ইন্সটিটিউটের হেড অব বিজনেস নাজিব রাফে ডিউক বিজয়ীদের হাতে এ প্রাইজমানি এবং সার্টিফিকেট তুলে দেন।
উল্লেখ্য,কোভিড ১৯ এর কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব পড়েছে তার ওপর একটি জরিপ করেন জাপানের টকুশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর উচিউমি ও তার টিম। সেই জরিপটিকেই ডেটা সায়েন্সের প্রজেক্টের জন্য বেছে নিয়ে এই ডাটাথন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩৮টি টিমের ১৪৪ জন মেয়ে তাদের প্রজেক্ট জমা দেয়। শুধু বাংলাদেশেই নয় একমাত্র মেয়েদের জন্য এমন আয়োজন বিশ্বে এটাই প্রথম। দেশি-বিদেশি মেন্টর, সুপারভাইজার ও বিচারকদের সমন্বয়ে একটানা ৪৮ ঘন্টার ডেটাথন শেষে চূড়ান্তভাবে ৩টি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
এ প্রতিযোগিতায় ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ( গাজীপুর) টিম রিইনফোর্সড নুবস চ্যাম্পিয়ন,বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম টেসেরা প্রথম রানার আপ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম ডিইউ হুরুক্কা দ্বিতীয় রানার আপ নির্বাচিত হয়। প্রাইজমানি হিসেবে চ্যাম্পিয়ন দলকে ১৫ হাজার টাকা,প্রথম রানার আপ দলকে ১০ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় রানার আপ দলকে ৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
ডাটাথন প্রতিযোগিতা সম্পর্কে চ্যাম্পিয়ন টিম রিইনফোর্সড নুবস এর রিসন সায়েরা বলেন, “ইতিহাসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন হলো ‘মেশিন লার্নিং’। এই ক্ষেত্রটি সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুব কম ছিল। ডেটাথনে অংশ নিয়ে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারি। ওয়ার্কশপগুলিতে হাতে-কলমে একেবারে শুরু থেকে কিভাবে একটি এমএল মডেল তৈরি করতে হয় এবং বাস্তব জীবনে কিভাবে প্রয়োগ করতে হয় তা শেখানো হয়।” তিনি আরো জানান, টিমওয়ার্ক করে কাজ করাই তাদের চ্যাম্পিয়ন করে তুলতে সাহায্য করেছে। যেহেতু ক্যাগল একটি রিয়েলটাইম প্লাটফর্ম নয় সেহেতু তাদের প্রতি এক সেকেন্ডে সমন্বয় করতে হয়েছিল।
এছাড়া প্রথম রানার আপ টিম টেসেরার আনিশা ইসলাম জানান ডেটাথনের আগের কর্মশালাগুলো খুবই সময়োপযোগী ছিল। প্রাথমিক বিষয়গুলো বুঝতে এটা প্রচুর সহায়তা করেছে। এছাড়া সুপারভাইজার এবং মেন্টরদের সার্বক্ষণিক সহায়তা তাদেরকে এ অবস্থানে আসার জন্য ভুমিকা রেখেছে। দ্বিতীয় রানার আপ টিম ডিইউ হুরুক্কার রাবেয়া আকতার বিডিওএসএন ও হারউইলকে এই ডেটাথন আয়োজনের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
ডেটাথনের সমন্বয়ক হুমায়ূন কবীর এ আয়োজন সম্পর্কে বলেন,“বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে মেয়েদের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তির প্রচলিত সফটওয়্যার নির্মান ধারার সাথে তারা পরিচিত থাকলেও,কার্যকরী নতুন ধারণার সাথে সেভাবে সখ্যতা গড়ে ওঠেনি। মেশিন লার্নিং,ডেটা সায়েন্স,বিগডেটা,ডেটা এনাইলাইটিক্স টার্মগুলোর জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমরা মেয়েদের ডেটা সায়েন্সের প্রতি আগ্রহী করতে দেশ ও বিদেশের ডেটা সায়েন্টিস্টদের সমন্বয়ে তাদের হাতে কলমে শেখানোর চেষ্টা করেছি। চারটি কর্মশালার মধ্যে দিয়ে অ্যাডা লাভলেস ডেটাথনের শুরু হয়। আমাদের বিশেষজ্ঞরা কর্মশালায় টেকনিক্যাল টার্মগুলো ব্যাখ্যা করেন এবং কিছু বাস্তব ডেটাসেট নিয়ে কাজ করেন। আমরা আশা করি মেয়েরা তাদের ডেটা সায়েন্সের প্রতি আগ্রহের দ্বিতীয় ধাপে বাস্তবিক প্রয়োগ করবে।”