ডিজিটাল বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাজ করতে সম্মত হয়েছে আসিয়ান অঞ্চলের অর্থনীতি ও মুক্ত বাণিজ্য জোট। এর ধারাবাহিকতায়, সরকারি সংস্থা, চিন্তাবিদ ও সংশ্লিষ্ট খাত থেকে বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে ক্রস-বর্ডার ডিজিটাল ট্রেড ফ্রেমওয়ার্ক ও সাপ্লাই চেইন নিয়ে যৌথভাবে অনলাইনে ডিজিটাল ট্রেড ফোরাম আয়োজন করেছে নিক্কেই গ্রুপ ও আইএসইএএস (ইউসফ ইশাক ইনস্টিটিউট)।
“আসিয়ান অঞ্চলের ডিজিটাল অর্থনীতি কমিউনিটির অন্তর্ভুক্ত, টেকসই ও সমন্বিত রূপান্তরের ক্ষেত্রে আগামী পাঁচ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায়,” বলেন আসিয়ান সেক্রেটারিয়েটের আইসিটি ও ট্যুরিজমের সহকারী পরিচালক ড. লে কুয়াং ল্যান। তিনি বলেন, “এ প্রক্রিয়ার জন্য আসিয়ান সদস্য দেশগুলোর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া, আসিয়ানের সেক্টোরাল বডির মধ্যে সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং বেসরকারি খাতসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।” এ ফোরাম আয়োজনের জন্য তিনি নিক্কেই, আইএসইএএস ও হুয়াওয়েকে ধন্যবাদ জানান।
ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরির পাশাপাশি এ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির জন্য তরুণদের সম্ভাবনা উন্মোচন করে ডিজিটাল রূপান্তর ত্বরাণ্বিত করা এবং অংশীদারিত্বের নতুন নিয়ম নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিকের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে চেন। তিনি বলেন “উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ পাঁচ বছরে সকল সুযোগের সঠিক ব্যবহারে দক্ষিণপূর্ব এশিয়াকে সক্ষম করে তুলতে নিজেদের ‘ইন এশিয়া প্যাসিফিক, ফর এশিয়া প্যাসিফিক’ অঙ্গীকারের অধীনে অবকাঠামো, কানেক্টিভিটি, স্টার্টআপের বিকাশ এবং তরুণদের ডিজিটালভাবে দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হুয়াওয়ে”।
আইএসইএএস’র ভিজিটিং সিনিয়র ফেলো ড. জয়ন্ত মেনন তার বক্তব্যে এ অঞ্চলের সকল দেশের (তারা ডিজিটাল রূপান্তরের যে পর্যায়েই থাকুক না কেনো) ক্ষেত্রে সবার জন্য সুবিধাজনক ফলাফল বয়ে আনতে ডিজিটাইজেশনের সুযোগের ওপর আলোকপাত করেন।
ফোরামে বক্তারা উল্লেখ করেন এআই, ক্লাউড, ইন্টারনেট অব থিংস ও ফাইভজি’র মতো অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ‘অল-ডিজিটাল’ অবকাঠামোর অন্তর্ভুক্ত। ডিজিটাল বাণিজ্যের নতুন নিয়ম অনেক নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ডিজিটাল ডকুমেন্ট ট্রানজেকশন ব্যয় ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে।
ফোরামে সকল অংশগ্রহণকারী দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় অংশীজনদের মধ্যে আস্থা দৃঢ় করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। সেন্ট গ্যালেন এনডাওমেন্ট ফর প্রসপারিটি থ্রু ট্রেডের সিইও ড. জোহানেস ফ্রিটজ বলেন, “ডিজিটাল বাণিজ্য এগিয়ে নিয়ে যেতে ডেটা গভর্নেন্সে পারস্পরিক আস্থা ও স্বীকৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” ডিজিটাল বৈষম্য, সাইবারসুরক্ষা ও ডেটা ব্যবস্থাপনার (বিশেষত, স্বল্পোন্নত দেশ ও যারা এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন) মতো বিষয়গুলো চিহ্নিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। কেননা, তারা ব্যবসা-বান্ধব, মানুষের প্রয়োজন ও সামাজিক দূরত্ব যেমন ইন্টারনেট অবকাঠামো ও ডিজিতাল দক্ষতা, দূরীকরণে বাস্তবসম্মত নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করে।
আঞ্চলিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনোমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের চুক্তি থেকে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া উন্নত হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া আসিয়ান ইকোনোমিক মিনিস্টারস (এইএম) সভাতেও ডিজিটাল ইন্টিগ্রেশন উদ্যোগ এবং পণ্য, সেবা ও ডেটার সুরক্ষিত নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহের ওপর আলোকপাত করা হয়।
ডিজিটাল বাণিজ্য ও অর্থনীতির উন্নয়ন ও বিকাশে এ অঞ্চলে এফটিএ’র মতো রেগুলেটরি ফোরাম গঠন করা উচিৎ। সহযোগিতা, পারস্পরিক স্ট্যান্ডার্ড ও উন্নত গভর্নেন্সের মাধ্যমে ডিজিটাল যুগে সকল সুযোগের ব্যবহার করে এগিয়ে থাকা সম্ভব।
আইএসইএএস’র ভিজিটিং সিনিয়র ফেলো ড. থাম সিউ ইয়ান, নিক্কেই গ্রুপ এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রিজিওনাল সিইও সোনোকো ওয়াতানাবে আইএসইএএস, নিক্কেই ও হুয়াওয়ে সহ বৈশ্বিক প্রতিনিধিদের অংশীদারিত্ব ও অবদানের স্বীকৃতির মাধ্যমে ফোরাম শেষ করেন।