বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিশীল স্টার্টআপগুলো তাদের প্ল্যাটফর্মগুলোর বৃদ্ধির জন্য প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং পরবর্তীতে ইউনিকর্ন বা বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের কোম্পানিতে পরিণত হতে ইজেনারেশন এবং মাইক্রোসফটের কাছ থেকে সহায়তা পাবে। রবিবার সন্ধ্যায় ওয়েস্টিন ঢাকায় “বিল্ডিং বেস্ট ইন ক্লাস এন্ড স্কেলেবল স্টার্টআপ প্ল্যাটফর্ম” শীর্ষক গোলটেবিলে এই বিবৃতি দেওয়া হয়। ইজেনারেশন এবং মাইক্রোসফ্ট যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং উদ্যোক্তাদের জন্য প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের বিভিন্ন উদাহরণ এবং কারিগরি সহায়তার বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করে। উদাহরণস্বরূপ স্টার্টআপদের জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রাম তুলে ধরা হয়, যেমন “মাইক্রোসফ্ট ফর স্টার্টআপ” প্রোগ্রামের আওতায় উদ্যোক্তারা ব্যবসায়িক তহবিল, ক্লাউড ক্রেডিট ইত্যাদি পেতে পারে এবং “আইএসভি নিয়োগ” প্রোগ্রামের আওতায় স্টার্টআপদের প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন, অ্যাপ আধুনিকায়ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদান এবং ক্লাউড মাইগ্রেশন সেবা রয়েছে। এছাড়াও গোলটেবিল আলোচনায় বাংলাদেশী স্টার্টআপগুলো এবং ব্যবসাকে শিল্পে সংহত করতে সহায়তা করে এমন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি যেমন মেশিন লার্নিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডেটা, এবং ক্লাউড সম্পর্কিত প্রযুক্তিসসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয় যা তাদের ব্যবসায়িক প্ল্যাটফর্মগুলোর বৃদ্ধি এবং উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন ইজেনারেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহসান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বিটিআরসির সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাসিম পারভেজ, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এই গোলটেবিল আয়োজনের জন্য ইজেনারেশন, মাইক্রোসফট এবং স্টার্টআপদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ডিজিটাল বিভাজনে সাম্যতা আনতে আমাদের স্থানীয় ব্যবসাগুলিকে দ্রুত বিকাশ লাভ করতে হবে। এই লক্ষ্যে স্টার্টআপ খাতের প্রারম্ভিক প্রক্রিয়াগুলো সহজতর করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদানে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা রয়েছে। ”
শামীম আহসান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশী বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং রফতানি আয়ের মাধ্যমে স্টার্টআপ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাগুলোর সম্ভাব্য ভূমিকার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, “মাইক্রোসফ্টের সাথে পার্টনারশিপের মাধ্যমে ইজেনারেশন ইন্টেলিজেন্ট ক্লাউড এবং ডিজিটাল সল্যুশন আনতে আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে যা সরকারী এবং বেসরকারী সংস্থাগুলিকে সাহায্য করতে সক্ষম। আমরা বাংলাদেশকে একটি উদ্ভাবনী উচ্চ প্রযুক্তির দেশ হিসাবে রূপান্তর করতে সরকার, মাইক্রোসফ্ট এবং অন্যান্য টেকনোলজি পার্টনারদের সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি”।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাসিম পারভেজ ব্যবসায়ীদের সহায়তার জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও বলেন, “উদ্যোক্তাদেরকে সময় উপযোগী সুযোগগুলি ব্যবহার করতে এবং দেশীও আয় দেশেই রাখার লক্ষে স্থানীয় পণ্য এবং সেবা তৈরি করতে হবে। বিটিআরসি একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে আইওটি-র মতো প্রযুক্তি আনতে কাজ করছে এবং টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে ব্যবসায়িক মডেলগুলিকে একত্রিকরনকে সহজ করে তুলছে।”
মাইক্রোসফ্ট ভেনচার ক্যাপিটাল এবং প্রাইভেট ইক্যুইটি পার্টনারশিপ ইন্ডিয়ার কান্ট্রি হেড, লাথিকা পাই বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের কথা তুলে ধরেন যা ইতিমধ্যে মাইক্রোসফ্টের সমর্থন পেয়েছে। “মাইক্রোসফ্ট এই উদ্যোক্তাদেরকে তাদের ব্যবসা তৈরির জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে এবং প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করার জন্য ইজেনারেশনকে সাথে নিয়ে কাজ করছে,” তিনি যোগ করেন।
পাঠাওয়ের সিইও হুসেইন এম ইলিয়াস উদ্যোক্তাদেরকে আরও ভালভাবে সমর্থন করার জন্য নীতি বিকাশের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন “ব্যবসায়ীদের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার এবং স্থানীয় বাজারের জন্য নতুনত্ব আনার বিশ্বব্যাপী প্রবণতা রয়েছে। বিশ্বব্যাপী পরিচিতির জন্য আমাদের যথাযথ নীতিমালা প্রনয়ণ এবং স্থানীয় ব্যবসায় উদ্ভাবনের গতি বাড়ানো দরকার’’।
নগদ এর সিইও রাহেল আহমেদ আধুনিক ব্যবসায়ের অংশ হিসেবে প্রযুক্তির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেছেন, “প্রযুক্তি আমাদের ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলিতে স্বয়ংক্রিয়তা এনেছে এবং প্রযুক্তি সংস্থাগুলির উন্নতি সাধনের জন্য জায়গা তৈরি করেছে। ব্যবসায়ের ক্যাপিটাল এবং আর্থিক খাত থেকে বিনিয়োগ পেতে ব্যবসায়ের একটি শক্তিশালী কাঠামো পরিকল্পনা করা প্রয়োজন এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা উচিত। ”
এসএম আশরাফুল ইসলাম, নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান, ইজেনারেশন; মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিএমডি ও সিওও, ইউসিবিএল; মাশরুর হোসেন, চ্যানেল বিক্রয় প্রধান, মাইক্রোসফ্ট; জান্নাতুল ফারদৌস পপি, পার্টনার প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, মাইক্রোসফ্ট; এমরান আবদুল্লাহ, পরিচালক, অপারেশনস অ্যান্ড সেলস, ইজেনারেশন; সিলভানা কাদের সিনহা, সিইও, প্রাভা হেলথ; কাশফিয়া মাহমুদ, সিইও, স্বাধীন; আশিকুল আলম খান, সিইও, প্রিয়শপ ডটকম; জিশান কিংসুক হক, সহ-প্রতিষ্ঠাতা, সিনদাবাদ ডটকম; মোহাম্মদ অলি আহাদ, প্রতিষ্ঠাতা, ইন্টেলিজেন্স মেশিনস লিমিটেড; হাবিবুল মোস্তফা আরমান, সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, খাসফুড ডটকম; ; মরিন তালুকদার, সিইও, পিকাবু; সানজিদা ফারহানা, সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা, পোশাপেটস ডটকম; শাহ পারান, সিইও, হ্যান্ডিমামা; কিশওয়ার হাশেমী, সিইও, ক্লুদিও; নাহিতা নিশমিন, সিওও, কুকআপস; এইচ এম তারিকুল কামরুল, চিফ অপারেটিং অফিসার, ইভালি; এবং ওয়াহিদ সাদাত চৌধুরী, আইটি ও ইআরপি বিভাগ প্রধান, এনারজিপ্যাক, ছাড়াও অনেকে রাউন্ড টেবিলে যোগ দান করেন।