বিশ্বের ১১৯তম দেশ হিসেবে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) যুগের যাত্রা শুরু করল বাংলাদেশ। জিটুজি ভিত্তিতে জার্মানির সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে দেশে ই-পাসপোর্ট চালুর কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর হয়।জার্মানির ভেরিডোস জিএমবিএইচ নামের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকার এ চুক্তি সম্পাদন করেছে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মো. মাসুদ রেজওয়ান এবং ভেরিডোসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কুনস চুক্তিতে সই করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং ঢাকায় সফররত জার্মান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিয়েলস আনেন উপস্থিত ছিলেন। এ প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা’। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেই বিদ্যমান মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) পরিবর্তে নাগরিকদের হাতে পৌঁছবে এই ইলেকট্র্রনিক পাসপোর্ট।
এ জন্য একটি প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মেয়াদ হবে ১০ বছর। এর আওতায় শুরুর দিকে ২০ লাখ পাসপোর্ট জার্মানি থেকে প্রিন্ট করে এনে সরবরাহ করা হবে। এরপর আরও দুই কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট বাংলাদেশে প্রিন্ট করা হবে। সে জন্য রাজধানীর উত্তরায় অত্যাধুনিক অ্যাসেমব্লিং কারখানা স্থাপন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওই কারখানা থেকে প্রতি আট ঘন্টার এক শিফটে ২৫ হাজার ই-পাসপোর্ট ছাপা হবে।
এদিকে দেশের ১০টি আঞ্চলিক অফিস থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র মুদ্রণ ও বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য আঞ্চলিক অফিসগুলোতে সার্ভার স্টেশন স্থাপন করেছে সংস্থাটি। হারিয়ে যাওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র এসব আঞ্চলিক অফিস থেকেই তোলা যাবে আগামী ১ আগস্ট থেকে।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নে থেমে নেই আমরা। আশা করি শিগগিরই আমরা ই-পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রম শুরু করতে পারব। তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত ২ কোটি ১৪ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেশের নাগরিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং ১১ লক্ষাধিক মেশিন রিডেবল ভিসা বিদেশিদের দেওয়া হয়েছে।জার্মানির প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ খুব অল্প সময়ে অনেক অর্জন করেছে। আমরা বাংলাদেশিদের এ প্রকল্পের কাজে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে সাহায্য করব।
প্রসঙ্গত, ই-পাসপোর্টে চিপসের মধ্যে একজন নাগরিকের পাসপোর্ট সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সকল তথ্য ও ছবি সংযুক্ত থাকবে, যা কম্পিউটারে যুক্ত করলে উঠে আসবে। এটি একজন নাগরিকের তথ্য সংরক্ষণের অত্যাধুনিক পদ্ধতি।
ই-পাসপোর্টে যা মিলবে একনজরে দেখে নিন :
ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি তথ্যভান্ডারে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। বর্তমানে বই আকারে যে পাসপোর্ট আছে, ই-পাসপোর্টেও একই ধরনের বই থাকবে। তবে বিদ্যমান পাসপোর্টের বইয়ে ব্যক্তির তথ্যসংবলিত যে দুটি পাতা আছে, ই-পাসপোর্টে তার স্থলে পলিমারের তৈরি বিশেষ একটি কার্ড থাকবে। এই কার্ডের মধ্যে স্থাপিত থাকবে একটি চিপ। সেই চিপে পাসপোর্টের বাহকের সব ধরনের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। প্রচলিত এমআরপির পাতায় দেশের নানা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের যে ছবি রয়েছে, তাতেও পরিবর্তন আসবে। এসব ছবির স্থলে নতুন করে অন্যান্য ঐতিহাসিক, প্রাকৃতিক দৃশ্য ও নানা সফলতার দৃশ্য তুলে ধরা হতে পারে।
নিয়ম অনুযায়ী ই-পাসপোর্টের সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে ‘পাবলিক কি ডাইরেক্টরি’ বা পিকেডিতে। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও) আন্তর্জাতিক এই তথ্যভান্ডার পরিচালনা করে থাকে। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলসহ বিশ্বের সব বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এই তথ্যভান্ডারে ঢুকে তথ্য যাচাই করতে পারে।
নিরাপত্তা চিহ্ন হিসেবে এতে থাকবে চোখের মণির ছবি ও আঙুলের ছাপ। এর পাতায় থাকা চিপে সংরক্ষিত থাকবে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য। ২০১৬ সালে এমআরপির পাশাপাশি ই–পাসপোর্ট চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। একই সময় পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে দিন থেকে ই–পাসপোর্ট চালু হবে সেদিন থেকে এমআরপি পাসপোর্ট রিনিউ করতে গেলে ই–পাসপোর্ট করতে হবে।
অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্ট চালুর সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রতিটি বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরে প্রয়োজনীয় ই-গেট স্থাপন করে স্বয়ংক্রিয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে। ই-পাসপোর্ট বহনকারী ব্যক্তি এই গেট দিয়ে সীমান্ত পার হবেন। বর্তমানে বিশ্বের ১১৯টি দেশে ই-পাসপোর্ট ও ই-গেট ব্যবস্থাপনা চালু রয়েছে, যা এমআরপি থেকে বেশি নিরাপদ। ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পেরিয়ে যাওয়া ই–পাসপোর্টধারী ব্যক্তি লাইনে না দাঁড়িয়েই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইমিগ্রেশন শেষ করতে পারবেন।
ই-পাসপোর্ট চালু হচ্ছে,এমআরপি পাসপোর্ট এর কি হবে?
ই-পাসপোর্ট মিলবে ডিসেম্বরে