কে কোথা থেকে চিঠি লিখছে তার কোনো হদিস নেই। ঠিক যেন উড়োচিঠি। নাম পরিচয় গোপন করে এই বার্তা পাঠানোর মজায় মেতেছেন অনেকেই। আরব বিশ্ব, এশিয়া হয়ে পশ্চিমা বিশ্ব, সবখানেই চলছে সারাহাহ জ্বর। প্রকাশ্যে বা পরিচয় দিয়ে যা বলা যায় না, উড়োচিঠিতে তা জানানোরই পোশাকি নাম সারাহাহ। এটি একটি অ্যাপ। এই অ্যাপ ডাউনলোড করে উড়োচিঠির মতোই বার্তা পাঠানো যায়।
এমন অনেক কথা থাকে, যা ইচ্ছে হলেও প্রকাশ করা যায় না। সেটা হতে পারে কোন ভালো লাগার কথা বা রাগ, ¶োভ, অভিমানের কথা। কিন্তু যতো কিছুই হোক বলা যায় না অনেক কিছু। পরিচয় গোপন করে কথা বলা গেলে যা হয়, ‘সারাহাহ’ নামের নতুন একটি অ্যাপে তাই হচ্ছে। পরিচয় প্রকাশের ভয় নেই বলে সারাহাহ অ্যাপ ব্যবহার করে সবাই বলে ফেলছে না বলা কথাগুলো। আর এভাবেই খুব অল্প সময়ে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে এই অ্যাপ।
শুধু সাড়া জাগানো বললে ভুল হবে, সারাহাহ নিয়ে এখন রীতিমত মাতামাতি চলছে। সামাজিক যোগাযোম মাধ্যমগুলোতে এর আগে বিভিন্ন অ্যাপ যেমন ফেসঅ্যাপ, প্রিজমা যেমন উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিল তারই ধারাবাহিকতায় আলোচনার তুঙ্গে উঠেছে এই অ্যাপটি। সারাহাহ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ৩০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
জুন থেকে অ্যাপ স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে অ্যাপটি। দেড়মাসের মাথায় ফেসবুক, স্ন্যাপচ্যাট ও ইনস্টাগ্রামকে জনপ্রিয়তায় পেছনে ফেলে সারাহাহ। অ্যাপটি তৈরি করেছেন সৌদি আরবের তরুণ ডেভেলপার জায়ান আল-আবিদিন তৌফিক। সারাহাহ আরবি শব্দ। এর অর্থ সৎ বা অকপটতা। কর্ম¶েত্রে প্রতিক্রিয়া জানানোর ওয়েবটুল হিসেবে সারাহাহর ব্যবহার শুরু হলেও বর্তমানে বার্তা পাঠাতে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে।
সারাহাহ হচ্ছে নাম-পরিচয় গোপন করে বার্তা পাঠানোর অ্যাপ। যখন কোনো ব্যবহারকারী অ্যাপটিতে নিবন্ধন করেন, তারা বন্ধুদের লিংক পাঠাতে বা অনলাইনে তা পোস্ট করতে পারেন। ওই লিংক ব্যবহার করে যে-কেউ গোপন বার্তা পাঠাতে পারেন। প্রেরকের পরিচয় জানার কোনো সুযোগ প্রাপকের কাছে থাকবে না। প্রাপক সরাসরি অ্যাপের মাধ্যমে কোনো জবাব দিতে পারবেন না। অ্যাপের মাধ্যমে পাওয়া বার্তাটির উত্তর দিতে হলে অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তাটি শেয়ার করে তারপর তাকে উত্তরটি দিতে হবে।
অ্যাপটি ব্যবহার করে যাতে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তার চাকরিদাতা বা ঊর্ধ্বতনের কাছে পরিচয় গোপন করে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন, সে ল¶্যে এটি তৈরি। যারা চাকরি হারানোর ভয়ে সামনাসামনি কিছু বলতে পারেন না, তাদের কিছু বলার সুযোগ করে দিতে অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। পরে অবশ্য তৌফিক ভাবেন, অ্যাপটি শুধু কর্মীদের মধ্যেই নয়, ব্যক্তিগত পর্যায়েও ব্যবহার করা যেতে পারে। বন্ধু ও পরিচিতজনেরা গোপনে একে অন্যকে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন।
শুরুতে ওয়েবসাইট হিসেবে সারাহাহ তৈরি করেন তৌফিক। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলে এটি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তবে পশ্চিমা দেশগুলোয় জনপ্রিয়তা পেতে আরো বাড়তি কিছু করার প্রয়োজন ছিল তৌফিকের। এ বছরের ১৩ জুন সারাহাহ অ্যাপটি আইওএস প্লাটফর্মে অ্যাপ স্টোর ও গুগল প্লেতে উন্মুক্ত করেন। অ্যাপটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুততম সময়ে বিনামূল্যের অ্যাপ হিসেবে দুটি প্লাটফর্মের শীর্ষ তিনে উঠে আসে।
আন্তর্জাতিকভাবে এই অ্যাপটি বর্তমানে জনপ্রিয় অ্যাপ এর তালিকায় অবস্থান করছে। অতি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যতটা না সুনাম কামিয়েছে, তার চেয়ে বেশি দূর্নাম ছড়িয়েছে। অনেকেই সাইবার নীপিড়নের টুল হিসেবে সারাহাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন। এর কারণ আপত্তিকর বার্তা। অ্যাপটিকে তাই নেতিবাচক রেটিং দিয়েছেন অনেকই। সাধারণত নিজের প্রশংসা বা গুণের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য এই অ্যাপটি খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা । গত বছর প্রিজমা অ্যাপ নিয়েও সরগরম অবস্থার সৃষ্টি হয় ফেসবুকে। এখন দেখার সারাহহ জ্বর কয়দিন স্থায়ী হয়। তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস।