নতুন উদ্যোক্তাদের ই-কমার্স ব্যবসায় পরিচালনা ও পুরোনোদের ব্যবসায়ের ডিজিটাল রূপান্তরের কৌশল বিষয়ে অবহিত করতে এবার বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ডব্লিউটিও সেল কর্তৃক পরিচালিত ‘ই-বাণিজ্য করবো নিজের ব্যবসা গড়বো’ প্রকল্পের আওতায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যৌথভাবে প্রশিক্ষণটি বাস্তবায়ন করছে বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) থেকে নগরীর আগ্রাবাদের চৌমুহুনীস্থ চিটাগং কম্পিউটার সিটির ৬ষ্ঠ তলায় অবস্থিত ই-ক্যাব ট্রেনিং সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে ১১ দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। তিনটি ব্যাচে ৭৫ জন করে মোট ১২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ৬৩টি মডিউলে প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার জনাব মোঃ আব্দুল মান্নান। ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক জনাব মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ তমালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব জনাব মোঃ কামাল হোসেন ও ‘ই-বাণিজ্য করবো, নিজের ব্যবসা গড়বো’ প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব), জনাব মোঃ হাফিজুর রহমান।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার জনাব মোঃ আব্দুল মান্নান বলেন, ইতিমধ্যেই সরকার চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষণা দিয়েছেন। এখানে দেশের সফল ও সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এখান থেকেই সর্বচ্চ করদাতা রয়েছে। ফলে আমাদেরকে শেকড় থেকেই শিখরে যেতে হবে। এ জন্য তরুণদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ব্যবসায়ের এই অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে তরুণদের প্রযুক্তি বা ই-কমার্সকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
ই-ক্যাব জেনারেল ম্যানেজার জনাব মোঃ মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ‘ই-বাণিজ্য করবো, নিজের ব্যবসা গড়বো’ প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) জনাব মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের অধীনে ঢাকায় ৩৪টি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে এ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এর ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণ মানুষও ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা ভোগ করবে। ই-বাণিজ্য সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নিয়েই চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ের এই প্রশিক্ষণে ১২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি বিভাগে এই প্রশিক্ষণ চলবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক জনাব মোঃ কামাল হোসেন বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে যারা প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকবে তারাই শীর্ষে থাকবে। ই-কমার্স প্রযুক্তির একটি অংশ। আর সাধারণ কাজের পাশাপাশি ই-ব্যবসা করা যায়। চট্টগ্রাম ব্যবসায়ের জায়গায় হওয়ায় এখানে এই প্রশিক্ষণটি খুবই কার্যকর হবে বলে আমি মনে করি।
এসময় ‘ইউটিউবে গেমিং পণ্যের ভিডিও রিভিউ বানিয়ে ‘রায়ান কাজী’ চলতি বছরে বাংলাদেশী টাকায় ২২১ কোটি টাকা আয় করেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ই-কমার্স কতটা লাভজনক বা সম্ভাবনাময় তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতেই সরকারি অর্থায়নে এই প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এই অর্থ যেন কাজে লাগে সে বিষয়ে আপনাদের সজাগ থাকতে হবে। আমরা আশা করতে পারি, এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েই কেউ আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠান গড়তেও পারেন।
ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক জনাব মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, আমাজন, ফেসবুক, গুগল সবাই কিন্তু একেকটি অনলাইন প্লাটফর্ম। তাই এই খাতটি কতটা প্রভাবশালী ও ব্যবসায় সম্ভাবনাময় তা সহজেই অনুমেয়। এই অপার সম্ভাবনার সুযোগটি কাজে লাগাতেই এবার আমরা ক্রসবর্ডার ই-কমার্সের মাধ্যমে দেশীয় পণ্যকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ করে দিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এলসি ছাড়াই যেন ডিজিটাল মাধ্যমে ক্রস বার্ডার ই-কর্মাস করা যায় সে বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কাজ করছি। আমাদের প্রস্তাব মেনে নিয়ে ইতিমধ্যেই সরকার ট্রাভেল কোটায় চেক পেমেন্ট নেয়ার পরিবর্তে ই-কমার্সের জন্য নতুন একটি ক্যাটাগরি খোলার কথা বিবেচনায় নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা, ই-পোস্ট ইত্যাদি কাজের পর এবার আমরা অনলাইন প্লাটফর্ম ও অ্যাপ তৈরি করতে যাচ্ছি। একইসঙ্গে ডিজিটাল কামার্স সেল কিভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছি।
তিনি আরো বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট ব্যবসায়ের ৭০ শতাংশ যেহেতু অনলাইনে চলে আসবে সে জন্যই আমরা এই প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করছি। আমাদের প্রত্যাশা, ২০২১ সালের মধ্যে এক লাখ ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলে তাদের ব্যবসায়ের ডিজটাল রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম হবো।
অনুষ্ঠান শেষে চট্টগ্রাম ই-ক্যাব সদস্যদের উপস্থিতিতে ই-ক্যাব ট্রেনিং সেন্টারের চট্টগ্রাম শাখার উদ্বোধন করা হয়।