নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদল বা মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবার পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সোমবার টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সেবা শুরুর ঘোষণা দেন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক। তিনি বলেন, সেবা চালুর প্রথম দিন বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ১৭ জন তাদের অপারেটর পরিবর্তন করেছেন।
এ সেবা নিতে গ্রাহককে ৫০ টাকা চার্জের সঙ্গে সিম রিপ্লেসমেন্ট ট্যাক্স এবং ভ্যাটসহ ১৫৮ টাকা খরচ দিতে হচ্ছে। ‘পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক সেবা’ বলা হলেও আসলে গ্রাহকরা এখন থেকেই পুরোদমে এমএনপি সেবা পাবেন বলে জানান বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিটিআরসির তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ৭২টি দেশে এমএনপি সেবা চালু আছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ২০১১ সাল থেকে এবং পাকিস্তান ২০০৭ সাল থেকে এমএনপি সেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশে এমএনপি সেবার জন্য প্রথমে ৩০ টাকা ফির কথা বলা হলেও পরে তা বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়।
এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ মিলিয়ে যে টাকা দিতে হচ্ছে, তা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। জহুরুল হক বলেন, এ সেবা নিতে গ্রাহককে এখন যে টাকা দিতে হচ্ছে, এমএনপি প্রতিষ্ঠান লাভ বেশি করলে এই টাকার হার ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়া হবে।
গত নভেম্বরে এমএনপি সেবার লাইসেন্স পায় বাংলাদেশ ও স্লোভেনিয়ার কনসোর্টিয়াম ইনফোজিলিয়ন বিডি-টেলিটেক। আগস্টে এ সেবা শুরুর কথা থাকলেও নির্দেশনা ও নেটওয়ার্ক জটিলতার কারণে তা দুই মাস পিছিয়ে যায়।
নম্বর পরিবর্তনের ঝক্কিতে যেতে চান না বলে সেবায় সন্তুষ্ট না হওয়ার পরও অনেকে এতদিন অপারেটর বদলাতে পারেননি। এমএনপি চালু হওয়ায় তারা পুরনো নম্বর রেখেই অন্য অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। ইনফোজিলিয়ান বিডি-টেলিটেক জানিয়েছে, যেহেতু গ্রাহকের অপারেটর বদল হচ্ছে এবং তার তথ্য নতুন একটি অপারেটরে যাচ্ছে, তাই গ্রাহককে এমএনপির জন্য নতুন সিম তুলতে হচ্ছে।
গ্রাহক যে অপারেটরে যেতে চান, তাদের গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে গিয়ে ফি দিয়ে সিম তুলতে হবে। সিম পেতে একজন গ্রাহকের সর্বোচ্চ ৫ মিনিট সময় লাগবে এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তা সক্রিয় হবে। এ সেবার নিয়ম অনুযায়ী, পুনরায় অপারেটর পরিবর্তন করতে হলে গ্রাহককে অপেক্ষা করতে হবে ৯০ দিন।
এমএনপি চালুর ফলে অপারেটররা তাদের সেবার মান উন্নত করতে আরও বেশি সচেষ্ট হবে এবং বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে বলে সরকার আশা করছে। এমএনপি সেবার লাইসেন্সধারী কোম্পানি ইনফোজিলিয়ান বিডি-টেলিটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাবরুর হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ১৫ কোটি গ্রাহকের জন্য এ সেবা শুরু করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। গ্রাহকরা আজ থেকে পোর্ট করতে পারছে। বিটিআরসিকে এজন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিচ্ছি।
প্রিপেইড সিমের পোর্টিং যেন দিনে দিনে শেষ করা যায়, সে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান মাবরুর।কোনো গ্রাহক অপারেটর বদলালে তার অব্যবহৃত টকটাইম বা ডেটার কী হবে জানতে চাইলে বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, আগের অপারেটরের অব্যবহৃত ব্যালেন্স নতুন অপারেটরে পাওয়া যাবে না। তবে ওই টাকা দুই বছর পর্যন্ত আগের অপরেটরে জমা রাখার নিয়ম করা হচ্ছে।
দুই বছরের মধ্যে যদি কেউ আগের অপারেটরে ফিরে যান, তাহলে তিনি ওই ব্যালেন্স ব্যবহার করতে পারবেন। তা না হলে তা সরকারি কোষাগারে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হবে।
আর অপারেটর বদলালে অব্যবহৃত ডেটা আর ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না। সেজন্য ব্যালেন্স শেষ করে তবেই অপারেটর বদল করার জন্য গ্রাহকদের পরামর্শ দেন বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
কোনো গ্রাহকের বিল বকেয়া থাকলে কী হবে জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তফা কামাল বলেন, অপারেটর পরিবর্তনের সময় গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে সব যাচাই করা হবে, বকেয়া বিল পরিশোধ করেই অন্য অপারেটরে যেতে হবে।
বিটিআরসি কমিশনার রেজাউল কাদের, কমিশনার আমিনুল হাসান, ইনফোজিলিয়ন বিডি-টেলিটেকের সিইও মোহাম্মদ জুলফিকারসহ বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।