মঞ্চে বসে আছেন অতিথিরা। আর মঞ্চের ঠিক সামনেই সারি সারি ভাবে সাঁজানো বিভিন্ন আকৃতির রোবট। এদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান নেনো রোবট তার যান্ত্রিক শরীর নিয়ে মঞ্চের সামনে দাড়িয়ে অতিথিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এর কিছুক্ষণ পরেই প্রধান অতিথি বেলুন উড়িয়ে মূল পর্বের উদ্বোধন করেন। আর এ অংশটুকু অতিথিদের মাথার ওপর ঘুরে ভিডিও ধারণ করার দায়িত্ব পালন করছেন আরেকটি ড্রোন রোবট। ২৬ অক্টোবর শুক্রবার ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কার্জন হল সারা দিন ছিলো রোবটময়। সব কিছুতেই ছিলো রোবটের ছোঁয়া।
চলতি বছরে ডিসেম্বরে ফিলিপাইনের ম্যানিলাতে অনুষ্ঠেয় ২০তম আন্তর্জাতিক রোবেট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দল নির্বাচনের জন্য প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড ২০১৮। বোবটময় এ আয়োজনের বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
এর আগে কার্জন হলে আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তৃতা পর্ব অনুষ্ঠিত। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আজ আমি একটা ঐহিতাসিক মূহুত্বে সাক্ষী হতে পারছি। আমি দেশের প্রথম রোবট অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করতে পারছি। এটি আমার জন্য খুবই সৌভাগ্যের বিষয়। বক্তৃতায় তিনি বলেন, প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। নতুন নতুন ইনোগেশন নিয়ে কাজ করতে হবে। শিশুদের মনের জগতে চিন্তাগুলো প্রকাশের সুযোগ করে নিতে হবে আমাদের। তাহলেই তরুণদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে দেশ। রোবট কখনেই মানুষের প্রতিদ্বন্ধী হবে না এ আশাবাদ ব্যক্ত করে ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের বুদ্ধিমান রোবট তৈরি করতে হবে। যেনো রোবট মানুষের কাজকে আরও সহজ করে দিতে পারে। মানুষের মানবিক গুনগুলো দিয়ে রোবটকে পরিচালনা করতে হবে। কিন্তু মানুষকে কখনেই মানবিকগুন হারিয়ে রোবট হলে চলবে না। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, তোমরা বোবট তৈরি করে বাংলাদেশের নাম বিশে^র মাঝে আরও ভালো ভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। কিন্তু তোমরা কখনেই রোবট হবে না। মানবিকগুণাবলী সম্পন্ন একজন মানুষ হয়ে দেশের সেবা করতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্বে কাছে একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে বর্তমানে বিবেচিত হচ্ছে। দেশকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য তোমাদের কাজ করতে হবে। একদিন তোমরাই বিশ্বকে পরিচালনা করবে। এ আয়োজনে এসে তোমরা নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ডেটাসফটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব জামান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা সৌভাগ্যবান প্রজন্ম। সারা বিশে^ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব চলছে। তোমরা সে সময় রোবট অল্পিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করছো। তোমরা বাংলাদেশের চতুর্থ প্রজম্মের মুক্তিযোদ্ধ। তোমাদের হাত ধরে শিল্প বিপ্লবের যুদ্ধকে জয় করে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশে। তিনি আরও বলেন, মানুষের স্থান রোবট কোনো দিনেই দখল করতে পারবে না। কেননা রোবট তো মানুষেই তৈরি করে। আজকের শিক্ষার্থীরাই আমাদের দেশকে অন্য একটি মাত্রায় নিয়ে যাবে বলে আশা করেন মাহবুব জামান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. লাফিফা জামাল ও বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় আয়োজনের মূল পর্ব। এতে সারা দেশে থেকে আগত শিক্ষার্থীরা এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ৭ থেকে ১৮ বছরের শিশু-কিশোররা এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিশন চ্যালেঞ্জ, ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরি, রোবট ইন মুভি, রোবটিক বুদ্ধি ও কুইজ প্রতিযোগিতা ইত্যাদি বিভাগে প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়। অলিম্পিয়াডে কথা হয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী মতিঝিল সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. নাসিফের সঙ্গে। তিনি জানান, এমন বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিযোগীতা আরও হওয়া উচিত। তাহলে নিজের প্রতিভাবে বিকাশ করা সুযোগ পাওয়া যায়। নারায়নগঞ্জ আইডিয়াল স্কুল থেকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে এসেছে ১১ জন শিক্ষার্থী। প্রতিযোগিতা নিয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে। স্কুলটির দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইরফান নেওয়াজ বলেন, বিশে^ সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও চলতে চাই। এ জন্য প্রযুক্তির এমন প্রযোগিতা বেশি বেশি আয়োজন করার আহ্বান জানান তিনি।
রোবট অলিম্পিয়াডের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহা ও বাংলাদেশে আইএসপি এসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল হাকিম প্রমুখ।
বিকালে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে প্রথম তিন বিজয়ীর জন্য ছিলো গোল্ড, সিলভার ও ব্রোঞ্জ মেডেল। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের সুযোগ ও অন্যান্য আর্থিক বা সমমানের পুরস্কার। রোবট অলিম্পিয়াডের আয়োজন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্ররিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)।