ডিজিটাল কমার্স নীতিমালার সংশোধন চাইছে প্রযুক্তি সংগঠনগুলো। ই-ক্যাব ও বিসিএসের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় বিসিএস ইনোভেশন সেন্টারে ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা ২০১৮’ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিসিএস, বেসিস, ই-ক্যাব, বাক্য, সিটিও ফোরামসহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তারা ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা ২০১৮’ এর যে নীতিগুলো স্থানীয় ব্যবসাকে ক্ষতির সম্মুখীন করতে পারে এমন নীতিগুলোর পরিবর্তনের ব্যাপারকে গুরুত্ব দেন।
১৬ জুলাই মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে কতিপয় সংশোধনীর প্রস্তাব করে ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা ২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদিত হয়। সংশোধনীর পূর্বে ৬১ টি কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব যৌথভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উপর ন্যস্ত ছিল। বর্তমানে প্রাথমিক বাস্তবায়নকারী কতৃপক্ষ হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের স্থলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব করা হয়েছে। এই খসড়া নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়ে নীতিমালার কয়েকটি সংশোধিত পরিবর্তন প্রস্তাব স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এর সভাপতি ইঞ্জি. সুব্রত সরকার।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, দেশীয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা হতে হবে। পাশের দেশ ভারতের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো ই-কমার্সে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানদের দেশীয় নীতি পরিপূর্ণভাবে মেনে দেশে ব্যবসা করতে হবে। কোনমতেই এককভাবে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা করার সুযোগ নেই। ডিটিওর সদস্য সংগঠনের রীতি নীতি মেনেই বিদেশি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে চাইলে শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি পেতে পারে।
বিসিএস সভাপতি ইঞ্জি. সুব্রত সরকার বলেন, ডিজিটাল নীতিমালার ৩.৬.৭ অনুচ্ছেদ এবং নীতিমালার প্রণিত ৭ নং কর্ম পরিকল্পনা অনুযায়ী এককভাবে বিদেশি প্রতিষ্ঠান কতৃক ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ রহিত করা ছিল এবং দেশী ও বিদেশি কোম্পানির ইকুইটির হার ৫১:৪৯ ছিল। উপযুক্ত শর্তে মন্ত্রিপরিষদ কতৃক নীতিমালা অনুমোদিত হয়। কিন্তু ০১ আগস্ট তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে প্রেরিত একটি পত্রে বিদেশী বিনিয়োগকারীগণকে ১০০% ইকুইটির সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে ৭ নং কর্ম পরিকল্পনা এবং ৩.৬.৭ নং অনুচ্ছেদ সংশোধনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। যদি বিদেশী বিনিয়োগকারীকে শতভাগ ইকুইটি প্রদান করা হয়, তাহলে ‘মেক ইন বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন কঠিন হবে।
স্থানীয় ব্যবসায় বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ১০০% ইকুইটি প্রসঙ্গে বিসিএস সভাপতি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শতভাগ ইকুইটি পেলে মূলত দেশে ব্যবসার কোন উন্নতি হবে না। কারণ, এই নীতি অনুসারে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এখানে কোন শিল্প কারখানা বা উৎপাদন কেন্দ্র খুলবেন না। তারা শুধু বিদেশি প্রোডাক্টগুলো তাদের মন মতো মূল্যে বিক্রি করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাগুলো নিজেদের কুক্ষিগত করবেন। এতে দেশীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।
ইঞ্জি. সুব্রত সরকার বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে শতভাগ ইকুইটি প্রদান করা হলে তারা এদেশ থেকে মুনাফা পাচার করার সুযোগ পাবে। অনলাইন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন শাখা অফিস এদেশে নেই। বাস্তবিক অর্থে তারা কমমূল্যে (বিশেষ ছাড়ে) তাদের সকল পণ্যসমূহ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে (বিশেষ করে চীন) ক্রয় করে বিদেশে মজুদ রাখতে পারে। পরবর্তীতে তারা এই প্রযুক্তি পণ্যগুলো দেশে প্রচলিত এমআরপি মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে বা বিশেষ ছাড়ে বিক্রয় করে। এই প্রবণতা দৃঢ় হস্তে বন্ধ করতে হবে। তা না হলে দেশে অসব ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে।
বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এদেশে শিল্প-কারখানা, উৎপাদন কেন্দ্র থেকে শুরু করে ব্যবসার প্রয়োজনে যেকোন উদ্যোগ নিতে পারে। তবে সেটা অবশ্যই বিনিয়োগকারী হিসেবে দেশের ব্যবসায় অবদান রাখার জন্য হতে হবে। শুধুমাত্র প্রযুক্তি পণ্য বিক্রি করে এদেশ থেকে অর্থ উপার্জন করে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা আপত্তি করেন। শিগগিরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে বিস্তারিত সুবিধা অসুবিধা বর্ণনা করে চিঠি দেয়া হবে বলেও জানানো হয়।
সভায় বিসিএস পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর ডিজিটাল কমার্স স্টান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান আশিকুল আলম খান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং(বাক্য) এর প্রজেক্ট অ্যাসোসিয়েট মো. সেলিম সরকার, গ্লোবাল ব্র্যান্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল ফাত্তাহ, রায়্যান কম্পিউটারের স্বত্তাধিকারী আহমেদ হাসান, স্টারটেকের মো. রাশেদুল আলি ভুঁইয়া, স্মার্ট টেকের মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন, টেকনো প্লানেটের মো. মনজুরুল হাসানসহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সংবাদ কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।