গ্রামীণফোন নিজেদের ‘প্ল্যাটফর্ম শি’উদ্যোগের আওতায় ‘মেন্টরিং ফিউচার লিডারস’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা আয়োজন করেছে। সঠিক নির্দেশনা ও মেন্টরশিপ কীভাবে তরুণ পেশাজীবী নারীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতার উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের ক্যারিয়ারের বিকাশ ঘটাতে পারে এবং ভবিষ্যতে তাদের নেতৃস্থানীয় পদে যাওয়ার পথ সুগম করতে পারে, তা নিয়ে আলাপ করা হয়।
গ্রামীণফোনের ‘প্ল্যাটফর্ম শি’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে অনলাইনে এ ওয়েবিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। নানা চ্যালেঞ্জ ও অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে মেধাবী নারী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে গ্রামীণফোনের মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম – ‘প্ল্যাটফর্ম শি’। এ প্রোগ্রামের প্রথম সিজন সফলভাবে শেষ করার পর, ছয় মাসব্যাপী মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম ও গ্রামীণফোনের বিভিন্ন বিভাগ থেকে ১৫ জন মেন্টরদের নিয়ে ওয়ান-টু-ওয়ান মেন্টরশিপের সুযোগ নিয়ে ‘প্ল্যাটফর্ম শি’ -এর দ্বিতীয় সিজন শুরু হয়েছে। এ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের সামর্থের ওপর ভিত্তি করে তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচনে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে তোলার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়নে তাদের প্রত্যককেই একজন প্রোগ্রাম পার্টনারের সাথে যুক্ত করে দেয়া হবে। ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে শিক্ষাক্ষেত্র ও শিল্পখাতের প্রয়োজনীয় দক্ষতার মধ্যে যে দূরত্ব রয়েছে এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তা কমিয়ে এনে নারী শিক্ষার্থীদের নারী পেশাজীবী হিসেবে সফল আত্মপ্রকাশে সহায়তা করাই এই প্ল্যাটফর্মের লক্ষ্য। বাংলাদেশের জন্য উন্নত ও সমতাপূর্ণ ভবিষ্যৎ গঠনে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এই মেন্টরশিপ প্রোগ্রামে মেন্টরদের নেতৃত্বে নির্ধারিত লক্ষ্য অনুযায়ী সেশন, সফট স্কিল তৈরি ও নেটওয়ার্কিংয়ের ওপর আলোকপাত করা হবে।
ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টেলিনরের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, হেড অব গ্লোবাল লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেলিনা লমহল্ড; গ্রামীণফোনের চিফ মার্কেটিং অফিসার মোহাম্মদ সাজ্জাদ হাসিব, প্রতিষ্ঠানটির চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার সৈয়দ তানভির হোসেন এবং এর হেড অব এইচআর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট নাদিয়া কাদের।
ওয়েবিনারে টেলিনরের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, হেড অব গ্লোবাল লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেলিনা লমহল্ড বলেন, “টেলিনর লিঙ্গ বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজে বিশ্বাস করে এবং নারীদের জন্য উপযোগী কাজের পরিবেশ তৈরিতে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এজন্য, টেলিনর জাতিসংঘের নারী ক্ষমতায়ন নীতিমালার লিঙ্গ সমতার সাতটি প্রধান নীতি অনুসরণে স্বাক্ষর করেছে। যার ফলশ্রুতিতে, আমরা মনে করি, কাজের ক্ষেত্রে আরও বেশি সংখ্যক নারীদের সম্পৃক্ততা আবশ্যক।”
তিনি আরও বলেন, “জীবন ও ক্যারিয়ার গঠনে পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এটা অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। বিশেষভাবে যখন আপনি আপনার পেশাদার জীবনের শুরুর দিকে রয়েছেন, তখন এ ধরনের একটি প্ল্যাটফর্ম নিজ কার্যক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতার উন্মেষ ঘটিয়ে আপনাকে এগিয়ে থাকার জন্য আলাদা বৈশিষ্ট্য দান করবে। আমরা যে ধরনের প্রতিষ্ঠান হতে চাই, টেলিনরে আমরা সে লক্ষ্যে এখনও কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই আমাদের গ্রাহক বৈচিত্র্যকে আরও ভালোভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে; এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমরা পরিবর্তনের অংশ হতে হতে আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
গ্রামীণফোনের চিফ মার্কেটিং অফিসার মোহাম্মদ সাজ্জাদ হাসিব বলেন, “সময়ের পরিবর্তন ঘটেছে, সেই সাথে পরিবর্তিত হয়েছে চাকরির বাজার। করপোরেট সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের নারীরা অতীতে পিছিয়ে পড়ছিলেন। নারীদের জন্য বিশেষায়িত কর্মস্থল গড়ে তোলার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান সমূহের অনীহা, কর্মক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যার অপ্রতুলতা এবং নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক বাধা এক্ষেত্রে মূল কিছু কারণ ছিল। কিন্তু এখন নারীরা কাজের ক্ষেত্রকে সত্যিকার অর্থেই নতুন জীবনদান করেছেন। গ্রাহকদের সর্বোত্তম উপায়ে সেবাদানে আধুনিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সমাজের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, দক্ষতা ও ভাবনার ওপর নির্ভর করে এবং গ্রামীণফোনও এর ব্যতিক্রম নয়। কাজের ক্ষেত্রে পরিবর্তিত অবস্থা অনুধাবনে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার অর্জনে নারী পেশাজীবীদের খাত সংশ্লিষ্ট প্রবণতাগুলোর ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সঠিক মেন্টরিং এক্ষেত্রে নারীদেরকে কর্মস্থলে বিভিন্ন দ্বিধা কাটিয়ে ওঠা, আত্মবিশ্বাসী করে তোলা, বৈচিত্র্যময় কর্মস্থলের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো এবং কার্যকরী পেশাগত দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করতে পারে। গ্রামীণফোনের সাফল্যের মূল্যে রয়েছে কর্মীদের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য।”
গ্রামীণফোনের চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার সৈয়দ তানভির হোসেন বলেন, “নারীদের প্রতিভার উন্নয়ন ও বিকাশে আমাদেরকে অনুকূল একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। নীতি ও সংস্কৃতি নারীদের প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে, পাশাপাশি নারীদেরকে আরো চ্যালেঞ্জিং ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার সামর্থ্যও প্রদান করবে। এজন্য কর্মস্থলে নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় আপস্কিলিং ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এর পেছনে মূখ্য কারণ হল, লিঙ্গ বৈচিত্র্যকে যথাযথ রূপে গ্রহণ করে নেওয়া শুধু যে সঠিক তা-ই নয়, বরং যেকোনো ব্যবসায়ের প্রাসঙ্গিকতা ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার জন্য এটি আবশ্যকীয়ও বটে।“